## বাম গণতান্ত্রিক জোটের অবস্থান ও সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত
## ২৭ সেপ্টেম্বর পাটমন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিক্ষোভ
রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল, পিপিপি বা লীজ নয় আধুনিকায়ন করে রাষ্ট্রীয় পাটকল চালু, পাটখাত ধ্বংস ও দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ, লোকসানের জন্য দায়ীদের শাস্তি, শ্রমিকদের ৬ সপ্তাহের মজুরি-ঈদুল আযহার বোনাস ও এরিয়াসহ সকল বকেয়া পরিশোধ এবং সরকারি-বেসরকারি সকল কারখানায় জাতীয় নিম্নতম মজুরি ঘোষণার দাবিতে নির্ধারণ, সরকারি জড়িতদের শাস্তির দাবিতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাম গণতান্ত্রিক জোটের আহ্বানে দেশব্যাপী জেলা জেলায় অবস্থান ও সংহতি সমাবেশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ এর সভাপতিত্বে ও কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জোটের কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, সিপিবি প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড আব্দুল্লাহ কাফি রতন, কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদক কমরেড অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধালন সম্পাদক কমরেড মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড ফখরুদ্দিন কবির আতিক, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভুইয়া, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক কমরেড হামিদুল হক।
সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পাট বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা শহীদুল্লাহ চৌধুরী, ডক্টরস প্লাট ফরম ফর পিপলস হেল্থ এর সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ, প্রগতিশীল সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মী ফোরামের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার সাগর, কমিউনিস্ট পার্টি নারী সেলের লুনা নূর, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়, নারী মুক্তি কেন্দ্রের নাঈমা খালেদা মনিকা, শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর বহ্নি শিখা জামালী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সুুস্মিতা মরিয়ম ও সুস্মিতা রায় সুপ্তি, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের রুখসানা আফরোজ আশা, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের জুলফিকার আলী, শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি আ. ক. ম. জহিরুল ইসলাম, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক জুলহাস নাইন বাবু, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাদিক রেজা, বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতির বেলায়েত সিকদার, বিপ্লবী পাদুক শ্রমিক সংহতির ইমরান হোসেন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের রাজু আহমেদ, কমির জুট মিলের শ্রমিক শাহিন রহমান, যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাজেদুল হক রুবেল প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, করোনা মহামারিতে পুরো দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপন্ন। ঠিক এ সময়েই বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ করে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক বেকার করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এই দুর্যোগে সারা দুনিয়ায় নানা প্রণোদনা দিয়ে মানুষের জীবিকা রক্ষার চেষ্টা চলছে, বাংলাদেশে সেখানে করোনা মহামারির সুযোগ নিয়ে সোনালী আঁশের ঐতিহ্যবাহী পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার প্রশ্নের মুখে মুখ রক্ষার তাগিদে একবার বলছে পাটকলগুলোকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) পুনরায় চালু করা হবে, আবার বলছে না লিজে চালানো হবে।
করোনা পরবর্তী বিশ^ব্যাপী পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ার ফলে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা বাড়বে বিপুলভাবে। সারা ইউরোপে একযোগে প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে। ধারণা করা যায়, ২০২২ সাল নাগাদ শুধু পাটের ব্যাগের বৈশ্বিক বাজার দাঁড়াবে ২৬০ কোটি ডলারের। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে জুট জিও, টেক্সটাইলের চাহিদা ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে।
বক্তাগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের পেছনে সরকারের বড় অজুহাত লোকসান। কিন্তু কেন লোকসান, কাদের কারণে লোকসান, লোকসান কাটাতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল? সে সব প্রশ্নের উত্তর নেই।
সময়মত পাট কেনার টাকা না দেয়া, সঠিক দামে পাট না কেনা, নিম্নমানের পাট উচ্চ দামে কেনা, ৫০ এর দশকের পুরনো তাঁত দিয়ে উৎপাদন করা, মাথাভারি প্রশাসনের ব্যয়সহ সরকারি নীতি ও প্রশাসনের দুর্নীতি লোকসানের প্রধান কারণ। ২৫টি পাটকলের ১০ হাজার তাঁতের অর্ধেক অচল রেখে পাটকল লাভজনক করা যাবে না। স্কপের পক্ষ থেকে হিসেব করে দেখানো হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা খরচ করে আধুনিক তাঁত স্থাপন করলে উৎপাদন বাড়বে তিনগুণ, শ্রমিকদের গড়ে ২৫ হাজার টাকা বেতন দিয়েও পাটকল লাভজনক করা সম্ভব। কিন্তু সরকার সে পথে না গিয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডসেক এর নামে শ্রমিক ছাঁটাই করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ৫০ হাজার পাটকল শ্রমিক, ৪০ লাখ পাটচাষি ও পাটচাষের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ৪ কোটি মানুষ। বন্ধ হওয়ায় সরকারি পাটকল আর পাট কিনবে না। বেসরকারি পাটকলগুলো সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো পাটের দাম নিয়ন্ত্রণ করবে। ভারতে কাঁচা পাট চোরাচালান বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। পাট বাংলাদেশের একটি স্থায়ী শিল্পের ভিত্তি রচনা করেছিল, যার কাঁচামাল দেশে উৎপাদিত হয়, দেশের চাহিদা পূরণ করে যা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় সেই শিল্প ও শ্রমিক কৃষকের স্বার্থে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে দেশের বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সংহতি সমাবেশ থেকে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পাটমন্ত্রণালয়ের সামনে ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সমানে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বক্তাগণ হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাটকল চালু না হলে অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যায় ঘেরাওসহ হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।