সমাজ বদলের লক্ষ্যে শোষণ-বৈষম্যবিরোধী বাম গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা কর- এই স্লোগানকে ধারণ করে সিপিবির কংগ্রেস ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। আজ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রবিবার রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে কংগ্রেসসের তৃতীয় দিনের কাউন্সিল অধিবেশন চলছে। আজ কংগ্রেসের বিভিন্ন অধিবেশন চলছে। ইতিমধ্যেই সিপিবির ঘোষণা ও কর্মসূচি কংগ্রেসে অনুমোদন হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রস্তাব কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে উত্থাপন করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কমরেড মো শাহ আলম, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স, কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড মিহির ঘোষ এবং সিপিবির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড আব্দুল্লাহ আল ক্বাফী রতন।
রাজনৈতিক প্রস্তাবে রিপোর্টে বলা হয়, ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে লেনিনীয় নীতি অনুসরণ করে পার্টিকে প্রয়োজন ও সময়োপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। নির্বাচনী সংগ্রামের জন্য সিপিবিকে দক্ষ ও উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। বিপ্লবী ধারার শক্তিশালী গণসংগঠন গড়ে তুলতে হবে। দেশে লুটেরা বুর্জোয়া ধারার মেরুকরণের বাইরে বিকল্প ক্ষমতা কেন্দ্র
গড়ে তোলার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। শক্তির ভারসাম্য মুক্তিযুদ্ধ ও গণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্খার অনূকূলে নিয়ে আসার ঐতিহাসিক প্রয়োজন ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে শোষণ বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের দিকে অগ্রসর করতে হবে।
রাজনৈতিক প্রস্তাবে আরও বলা হয়, লুটেরা শাসকশ্রেণিকে পরাভূত করে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক মধ্যবিত্তসহ ব্যাপক জনগণের অনুকূলে রাষ্ট্রক্ষমতার বদল না হলে এবং অর্থনৈতিক সামাজিক নীতি দর্শনের প্রগতিমুখী মৌলিক পরিবর্তন না ঘটলে, মুক্তিযুদ্ধ ও গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা যাবে না। এর জন্য দরকার হবে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন সাধন করা। তাই সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের কাজ ও সংগ্রামকে সব সময়ের জন্য মূল কাজ ও সংগ্রাম হিসেবে গণ্য করতে হবে। অপরাপর সব আশু ও জরুরি কাজ এবং সংগ্রামের সময়েও এই বিষয়টিকেই কেন্দ্রীয় কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলা হয়, দেশবাসীর সামনে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার আলোকে গণমুখী, প্রগতিশীল, জাতীয় স্বার্থের
অনুকূল, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, বিপ্লবী ধারার বিকল্প কর্মসূচি উত্থাপন করা ও জনপ্রিয় করে তুলতে হবে ।
সাম্প্রদায়িকতা, সশস্ত্র সম্প্রদায়িক শক্তির বিপদ, রাষ্ট্রের ফ্যাসিস্ট প্রবণতা, গণতান্ত্রিক অধিকার সংকুচিত করার চেষ্টা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা প্রভৃতিকে গুরুতর বিপদ বলে বিবেচনা করে, এসব বিপদের বিরুদ্ধে সিপিবিকে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামে আপসহীন, দায়িত্বপূর্ণ ও নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করে যেতে হবে।
রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলা হয়, কমিউনিস্ট পার্টি সব দেশপ্রেমিক জনগণকে পুঁজিবাদের নিষ্ঠুর শোষণ ও অপশাসন, গণতন্ত্রের পথে বাধা, মবতন্ত্র, লুটপাটতন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এবং রুটি-রুজি, ভাত-কাপড়, ভোটাধিকার-গণতন্ত্রের দাবি আদায়ের জন্য ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে ব্যবস্থা বদলের জন্য বিভিন্ন দল ও শ্রেণিপেশার মানুষকে সচেতন ও সংগঠিত হয়ে তীব্র গণসংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে। কমিউনিস্ট ঐক্য বাম ঐক্য বৃহত্তর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির সমাবেশ গড়ে তোলাসহ সমাজবিপ্লবের দিকে অগ্রসর হতে হলে গুণে ও পরিমাণে শক্তিশালী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার কোনো
বিকল্প নেই। সেজন্য বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পিত কর্মকৌশল গ্রহণ করে অগ্রসর হতে হবে।
কমিউনিস্ট পার্টি এবং বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তির জাগরণ ও উত্থান ঘটানোর প্রচেষ্টায় সর্বতোভাবে শামিল হতে দেশবাসীর প্রতি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে। রাজনৈতিক প্রস্তাবের উপর সারাদেশের ৪৫ জন প্রতিনিধি আলোচনা করেন। এরপর এই রাজনৈতিক প্রস্তাব অনুমোদিত হবে।
রাজনৈতিক প্রস্তাবের পর গঠনতন্ত্র সংশোধন নিয়ে আলোচনা হবে। ক্রেডেনশিয়াল রিপোর্ট উত্থাপন ও অনুমোদন করা হবে। অডিট কমিটির রিপোর্ট উত্থাপন, আলোচনা ও অনুমোদন, কন্ট্রোল কমিশনের রিপোর্ট উত্থাপন, আলোচনা ও অনুমোদন করা হবে।
আগামীকাল সব রিপোর্ট উত্থাপন ও অনুমোদন শেষে, কন্ট্রোল কমিশন নির্বাচন, কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন, জাতীয় পরিষদের নির্বাচন, সমাপনী ভাষণ, সমবেত কন্ঠে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল এর মধ্য দিয়ে ত্রয়োদশ কংগ্রেস এর সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।
আজ বিএমএ মিলনায়তনে সংবাদ ব্রিফিং অনুষ্ঠানে ব্রিফিং করেন কংগ্রেসের মুখপাত্র কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স, কমরেড মিহির ঘোষ এবং মিডিয়া উপ-পরিষদের আহ্বায়ক লাকী আক্তার।