Revolutionary democratic transformation towards socialism

‘ব্যবস্থা বদল ছাড়া মুক্তি নেই- সামাজিক বিপ্লব সংঘটিত করতে হবে’ ‘র্নিবাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন’


সিপিবির সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টের অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় দেশ ও মানুষের মুক্তি অর্জন করতে হলে ব্যবস্থা বদল করতে হবে। এজন্য সামাজিক বিপ্লব সংগঠিত করতে হবে।
 
সংস্কারের কথা শব্দ চয়নের মধ্যে আলোচনা সীমাবদ্ধ না রেখে রাজনৈতিক দল ও অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানান।

আজ শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ২০২৫ বিকেলে ২.৩০ মিনিটে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবি আয়োজিত সমাবেশে পার্টির নেতৃবৃন্দ এই আহ্বান জানান।

সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সিপিবি নেতা ক্ষেতমজুর আন্দোলনের সংগঠক

প্রদীপ ভৌমিকের সন্তান সুজন ভৌমিক। এসময় সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ সমাবেশ পরিচালনা করেন।

এছাড়াও সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য, সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যবৃন্দ।

সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ বিভিন্ন বাম-গণতান্ত্রিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, জনজীবনের সংকট নিরসন, জান-মালের নিরাপত্তায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করুন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন।

কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম আরো বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মব জাস্টিস, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, প্রশাসনে অস্থিরতা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সবকিছু মিলিয়ে

দেশের পরিস্থিতি খুবই নাজুক।

তিনি বলেন, দেশে আজ সাম্প্রদায়িক শক্তি, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশ ও জাতির জন্য এটি শুভ লক্ষণ নয়। এই গোষ্ঠী বর্তমান সরকারকেও বিতর্কিত করে তুলেছে। এই গোষ্ঠী ৭২ এর সংবিধানকে কবর দেওয়ার কথা বলছে। তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খেলা করতে চাচ্ছে। তাদের এই খেলা দেশের জনগণ মেনে নেবে না।

দেশের বিরাজমান সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করতে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সিপিবি সভাপতি।

কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বাজার ব্যবস্থায় এখনো হাতে দেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। পতিত স্বৈরাচার অপশক্তি থেকে আমাদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। ভারত বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। তাই তারা তাদের লোক ক্ষমতায় বসাতে চায়। বাম দলগুলোকে এক হয়ে দেশকে রক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।


justify;">অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, জনজীবনের সংকট নিরসন, জানমালের নিরাপত্তায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করুন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। সংস্কারের কথা শব্দচয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, রাজনৈতিক দল ও অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয় সুনির্দিষ্ট করুন। সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কাজ দৃশ্যমান করুন।

রুহিন হোসেন প্রিন্স আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে কেউ যেন বিতর্কিত করতে না পারে, আবার নিজেদের স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কুক্ষিগত করতে যাতে মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করতে না পারে, তার জন্য নিজেদের সজাগ থাকতে হবে। সেইসঙ্গে পতিত স্বৈরাচার, লুটেরা, সাম্প্রদায়িক, আধিপত্যবাদী-সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তিকে রুখে দিয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

অরাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে

যেন না পারে সেজন্য দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানান সিপিবির সাধারণ সম্পাদক।  

তিনি আরো জানান, আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় এবং ঐক্য গড়ে তোলার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সমাবেশ থেকে সিপিবি নেতৃবৃন্দ সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন; গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা; নিত্যপণ্যের দাম কমানো; জান-মালের নিরাপত্তা; জনজীবনের সংকট নিরসন; অবিলম্বে শ্রমিকদের ন্যূনতম জাতীয় মজুরির ন্যায্য দাবিসহ অন্যান্য দাবি বাস্তবায়ন; কমমূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহসহ ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত; সবার কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ন্যায্য দাবি পূরণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। 

style="text-align: justify;">
এসব দাবিসহ মানুষের মুক্তির আন্দোলন বেগবান করার আহ্বান জানান রুহিন হোসেন প্রিন্স।

নিত্যপণ্যের দাম কমানো, জান-মালের নিরাপত্তা, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণাসহ বেশ কিছু দাবি তুলে ধরা হয় সমাবেশে।

সমাবেশ শেষে লাল পতাকা হাতে হাজার হাজার মানুষের মিছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান শাহবাগ-এলিফ্যান্ট রোড-সাইন্সল্যাব এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশ শুরুর আগে হাজার হাজার মানুষ মিছিল সহকারে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হয়। অনেক দিন পর বামপন্থিদের হাজার হাজার মানুষের সুশৃঙ্খল সমাবেশ ও মিছিল ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করলেন।

এ ছাড়া আগামী ২০ থেকে ২৭ জানুয়ারি দেশব্যাপী ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন সিপিবির নেতৃবৃন্দ।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..