Revolutionary democratic transformation towards socialism

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত


অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠক আজ ৫ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টা থেকে পৌনে ৭টা পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাতে অনুষ্ঠিত হয়।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া বক্তব্য হুবহু আপনাদের কাছে প্রেরণ করা হলো-

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা 
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

জনাব,
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, আপনাদের গৃহীত উদ্যোগসমূহ এবং বামজোটের ভাবনা নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আপনাকে এবং উপদেষ্টামণ্ডলীকে ধন্যবাদ জানাই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান হয়েছে। দুঃশাসনের ফলে নিপীড়িত মানুষের বিপুল আশা এখন ব্যবস্থা পরিবর্তনের পথে বাংলাদেশ অগ্রসর হবে। ফলে মানুষের প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব নিয়ে আপনাদের কাজ করে যেতে হচ্ছে।

ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ঘটনা জনগণের মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। স্বল্প মজুরি, বকেয়া মজুরি, বন্ধ কারখানা নিয়ে অনিশ্চয়তা- শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের জন্ম দিয়েছিল। আমাদের আশঙ্কা, মালিকপক্ষের চুক্তি না মানার প্রবণতাসহ সমস্যার যথাযথ সমাধান না হলে আবার সংকট তৈরি হতে পারে। মজুরি সংক্রান্ত বিষয়ে শ্রমিক পক্ষের মতামত নিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া জরুরী। শ্রমিকদের উপর নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ আমাদের কাম্য নয়। শ্রমিকদের উপর গুলি চালানোর ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। আহতদের কোন অঙ্গহানি হলে তার জন্য আলাদা ক্ষতিপূরণ বরাদ্দ করতে হবে। এইসকল ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। এগুলো আইনের শাসন ও মালিকদের জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হবে। শ্রমিকের সমস্যা সমাধানে আলোচনাকে প্রাধান্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে হবে। শিল্পাঞ্চলে নানা ধরনের ব্যবসার দখল পাল্টা দখল নিয়ে যারা সংকট সৃষ্টি করতে চায়, তাদের বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

সমতল ও পাহাড়ের জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ দেশে উদ্বেগ ও বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে। বাউলদের উপর আক্রমণ, মাজারে হামলা- দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করার সামিল। এক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক শক্তির অশুভ তৎপরতা জনগণকে উদ্বিগ্ন করছে। আসছে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করেও তাদের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘুদের উৎসব যাতে শান্তি ও স্বস্তির সাথে পালিত হতে পারে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে নাগরিকদের যুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করুন। একটি সম্প্রীতির আবহাওয়া গড়ে তুলতে পদক্ষেপ নিন।

সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু কোথাও না কোথাও থেকে এ কাজ তো শুরু করতে হবে। সংস্কারের লক্ষ্যে আপনারা ৬টি কমিশন গঠন করেছেন- এজন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ। এই কমিশনসমূহের কার্যপরিধি এবং রোডম্যাপ সম্পর্কে জানা থাকলে দেশবাসী আশ্বস্ত হবে। কমিশনের প্রধানদের নিয়ে, বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধান নিয়ে বিতর্ক এবং সন্দেহ অনভিপ্রেত। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংবিধান যতটুকু সংশোধন দরকার, ততটুকু সংশোধন করার উদ্যোগটাই যথার্থ হবে বলে আমরা মনে করি।

একটি নির্বাচিত সরকার ছাড়া সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাবে না। তাই নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার জন্য প্রধান অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন।

দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে বাজার ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। পাঠ্যক্রম সংশোধন কমিটি নিয়ে যে ধরনের ঘটনা ঘটলো তা কোনভাবেই কাম্য নয়। ইতিহাসের শিক্ষা এই যে, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রশ্রয় দিলে দেশের জনগণের মধ্যে সংহতি বিনষ্ট হয়।

কিছু বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ আমরা আপনাদের কাছে জানাতে চাই। এখন পর্যন্ত আহতদের সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ, তাদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। এটা অন্যতম প্রধান একটি কাজ। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা দরকার ও অগ্রগতি সম্পর্কে জাতিকে অবহিত করা দরকার। বেশকিছু ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে- এটা মত প্রকাশের অধিকারের উপর আক্রমণ। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাকে বিতর্কিত করা, ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে গোষ্ঠীর স্বার্থে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে তোলা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদান করার মাধ্যমেও গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এসব ব্যাপারে আরও গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ আমরা প্রত্যাশা করি।

আমরা আশা করি একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনারা কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। জনগণ চায় একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, যা নিশ্চিত করবে রাজনীতি, প্রশাসনসহ সর্বস্তরে জবাবদিহিতা।

জনগণের জীবন ও রক্তের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠা প্রত্যাশা পূরণ করতে আপনাদের উপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি গণতান্ত্রিক দল ও ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে আপনারা সচেষ্ট থাকবেন।

আপনাদের প্রতি পুনর্বার শুভেচ্ছা।

ধন্যবাদসহ-

১. মাসুদ রানা, সমন্বয়ক, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও সমন্বয়ক, বাসদ (মার্কসবাদী)
২. মো: শাহ্ আলম, সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
৩. রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
৪. রাজেকুজ্জামান রতন, সহ-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ
৫. ইকবাল কবির জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ
৬. মোশরেফা মিশু, সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি
৭. আব্দুল আলী, নির্বাহী সভাপতি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি
৮. মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
৯. খালেকুজ্জামান, উপদেষ্টা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..