বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, দেশের জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করার মধ্য দিয়ে চলমান স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান ব্যতিরেকে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়।
সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি রোধ ও দুর্নীতি-লুটপাট-অর্থপাচার-বাজার সিন্ডিকেটের হোতাদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান বক্তারা।
সিপিবি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির ডাকে আজ ৪ আগস্ট ২০২৩, শুক্রবার, বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরীর পুরানা পল্টনের সড়কে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
style="text-align: justify;">
সিপিবি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সভাপতি জামসেদ আনোয়ার তপনের সভাপতিত্বে ও সিপিবি ঢাকা দক্ষিণ কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাইফুল ইসলাম সমীরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আক্তার হোসেন, ত্রিদিব সাহা, জেলা কমিটির সদস্য মঞ্জুর মঈন প্রমুখ।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মনজুরুল আহসান খান, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা সাজ্জাদ জহির চন্দন, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, রাগীব আহসান
মুন্না প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার মানুষের মুখের অন্ন কেড়ে নিয়েছে। প্রতিবাদ করার গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। দেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে মানুষের কাঁধে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন চাপিয়েছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে যারা দেশের শাসন প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিনাশ করেছে। তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে একটি তথাকথিত সংবিধানসম্মত স্বৈরশাসন কায়েম করেছে। ক্ষমতাসীন সরকার আজীবন ক্ষমতায় থাকতে আগামী নির্বাচন অতীতের মতো ভোটারবিহীন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন, একতরফা উপায়ে সম্পন্ন করতে চায়।
বক্তারা বলেন, বিনা বাধায় একতরফা নির্বাচন করার লক্ষ্যে ক্ষমতাসীনদের সকল চক্রান্ত বরবাদ হতে চলেছে। দেশের মানুষ ভোটাধিকারের
সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতার সংগ্রামে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিল। এই বাংলাদেশে জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার হরণ করে কারও পক্ষেই শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
সমাবেশে অভিযোগ করা হয়, সিপিবিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হুলিয়ার মাধ্যমে আন্দোলন দমনের অপচেষ্টা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সকল জুলুম-নির্যাতন মোকাবিলা করে দাবি আদায় করা হবে বলে নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দেন।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে অতীতের মতই একটি প্রহসনের নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলকে টেনে আনার সব ধরনের প্রচেষ্টা চলমান আছে। তাতে ব্যর্থ হলে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী যত বেশি সম্ভব রাজনৈতিক দল ও শক্তিকে নির্বাচনে নিতে চায়। এই প্রচেষ্টার
অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক দল, এমনকি জামায়াতকে নিয়েও রাষ্ট্রশক্তির নানান তৎপরতা চোখে পড়ছে।
তারা বলেন, গণতন্ত্র ও প্রতিনিধিত্বশীল শাসনের দীর্ঘ অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ, সার্বভৌমত্বের উপর আগ্রাসী হওয়ার ক্ষেত্রে বিবাদমান সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ এবং আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রগুলো চরম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত আছে।
বক্তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত করতে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তদারকি সরকারের দাবিতে তীব্র রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিতে হবে।