বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) আয়োজিত ‘লুটপাটের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, জনগণের ভবিষ্যত ধ্বংস করতে ক্ষমতাসীনরা খুবই দক্ষ হয়ে উঠেছে। একের পর এক ব্যাংক লুট হচ্ছে। এখন চলছে মেগা প্রকল্পের ভয়ঙ্কর লুটপাট। শেয়ার কেলেঙ্কারির কোন প্রতিকার হয়নি। লক্ষ লক্ষ মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছে, অন্যদিকে হাতে গোনা কয়েকজন হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা এই লুটপাটের প্রধান হাতিয়ার। রাজনৈতিক লুটপাট এখন লুটপাটের রাজনীতিতে পরিণত। জনগণ এখন লুটেরা রাজনীতি আর লুটেরা অর্থনীতির বৃত্তে বন্দী।
আজ ৬ জানুয়ারি মুক্তিভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ ইব্রাহিম খালেদ, অধ্যাপক এম এম আকাশ, ড. বিনায়ক সেন, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান। সঞ্চালনা করেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, প্রবন্ধ পাঠ করেন বাসদ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন।
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যবসায়ীরা রাজনীতিকে প্রভাবিত করছেন। রাজনীতি চলে গেছে দুর্নীতিপরায়নদের হাতে। লুটেরারা বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রভাবিত করছে। ঋণখেলাপি সংস্কৃতি চালু হয়েছে। সরকারের নৈতিকতা নেই, যা দিয়ে লুটপাটের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। লাভের একটা হিসাব আছে, কিন্তু লোভের কোন হিসাব নেই। লোভের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক আছে। অর্থনীতিকে ঠিক করতে হলে রাজনীতিকে ঠিক করতে হবে।
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় দুর্নীতি-লুটপাট হবে এটা অস্বাভাবিক নয়। উৎপাদনশীল পুঁজিবাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো হচ্ছে না। দেশে শিল্প-কারখানা হচ্ছে না, বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিদেশে পুঁজি পাচার করা হচ্ছে।
বিদেশি সাহায্য থেকে লুটপাট হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে বিকল্প রাজনীতির উত্থান ঘটাতে হবে।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, তিন দশক ধরে উৎপাদনমুখী পুঁজিবাদের কথা বলা হচ্ছে। মধ্যবিত্তের চরিত্র বদলে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব দিয়ে আমরা সঠিকভাবে কিছুই বুঝতে পারি না। রাজনীতিকরা পুঁজিবাদী চরিত্র-বৈশিষ্ট্যকে নজরদারিতে রাখতে পারেনি। পুঁজিবাদ এখন সংকটে পড়েছে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, বলা হয়ে থাকে রাজনীতির অবস্থা খারাপ, অর্থনীতির অবস্থা ভাল। রাজনীতি ভাল হলে, অর্থনীতি আরও ভাল হবে। উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্রকে নাকি ছাড় দিতে হবে। কিন্তু এখন দুর্নীতি আর লুণ্ঠনের জৌলুস বেড়েছে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, লুটপাটের অর্থনীতি লুটপাটের রাজনীতির জন্ম দিচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন ফিরিস্তি শুনতে শুনতে হারিয়ে যাচ্ছে জনগণের সঞ্চয়, ব্যাংকের আমানত, লুট হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার লক্ষ কোটি টাকা। মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলে বিদেশে টাকা পাচার করা হচ্ছে।
খালেকুজ্জামান বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলে লুটেরারা অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। রাষ্ট্রীয় খাতগুলো ধ্বংস করে ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পার্লামেন্ট ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাচ্ছে। জনগণের সংগঠিত শক্তিতে লুটেরাদের মোকাবেলা করতে হবে।
লিখিত প্রবন্ধে রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, কৃষক-শ্রমিকের উৎপাদন আর প্রবাসীদের পাঠানো আয়ের টাকা লুট আর পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানি লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে শোষিত বাঙালি প্রশ্ন তুলেছিল, সোনার বাংলা শ্মশান কেন? এখন প্রশ্ন উঠেছে- স্বাধীন বাংলায় লুণ্ঠন কেন? শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বহাল রেখে লুণ্ঠন বন্ধ করার কোন পথ খোলা নেই। দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা, সামরিক শাসন সবই লুণ্ঠনসহায়ক, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার পরিপন্থী। লুটেরা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বামপন্থার উত্থান ঘটাতে হবে।
বার্তা প্রেরক
চন্দন সিদ্ধান্ত
কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগ, সিপিবি