Revolutionary democratic transformation towards socialism

হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ


নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি)’র সমাবেশে পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের বক্তব্য চলাকালে পুলিশ অতর্কিত  ও লাঠিচার্জে, ছাত্রলীগ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের হামলা ভাংচুরের প্রতিবাদে রাজধানীতে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকালে হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক মিছিল পল্টন মোড়, তোপখানা রোড, প্রেসক্লাব হয়ে আবার পল্টন মোড়ে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সরকার রাজনৈতিক দলের ওপর দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। সিপিবি সমাবেশে পুলিশ ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের হামলা ও সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সদস্য ডা. দিবালোক সিংহসহ নেতাকর্মীদের আহত করার প্রতিবাদে নেতৃবৃন্দ বলেন, পুলিশ ও মাস্তান বাহিনী দিয়ে সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জনগণই এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য শামছুজ্জামান সেলিম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সহ সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, সদস্য আসলাম খান। সমাবেশ পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লুনা নূর।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন, অ্যাড. সোহেল আহমদ, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, অ্যাড. হাসান তারিক চৌধুরী, আবিদ হোসেন, মানবেন্দ্র দেবসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের এ দমন-পীড়ন ও হামলার ঘটনা চলতেই থাকবে। এ জন্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের জনগণকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, পুলিশ ও সিণ্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দিয়ে জনবিচ্ছিন্ন সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। রাতের ভোটে নির্বাচিত এ সরকারের মানুষের কাছে সংবিধানের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, হামলায় জড়িত সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিচার করতে হবে।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে কৃষক-ক্ষেতমজুর-শ্রমিক-সাংস্কৃতিক কর্মী সকলকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

উল্লেখ্য, কিছুদিন পূর্বে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কলমাকান্দা উপজেলা সিপিবির উদ্যোগে সমাবেশ চলাকালে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করে সে সমাবেশ পণ্ড করে দেয়। তখনই পার্টির পক্ষ থেকে আবারও একই দাবিতে কলমাকান্দায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে জনসভা করার ঘোষণা দেওয়া হয়। আজ ৯ সেপ্টেম্বর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কলমাকান্দা শহীদ মিনারে জনসভার আয়োজন করা হয়। সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির

সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সদস্য ডা. দিবালোক সিংহ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় শত শত সাধারণ মানুষ জমায়েত হতে থাকে। সভার শুরু থেকেই ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা জনসভা বাধা দেওয়ার কয়েকবার চেষ্টা করলে সিপিবি কর্মীরা তা সাহসিকতার সাথে প্রতিহত করে।

পরবর্তীতে জেলা সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মোশতাক আহমদের বক্তৃতা চলাকালে পুলিশ জুতা পায়ে মঞ্চে উঠে সভা বন্ধ করতে বলে। এসময় সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স জুতা পায়ে পুলিশ কেন শহীদ মিনারে উঠলো, জানতে চান এবং নেমে যেতে বলেন।

এরপর রুহিন হোসেন প্রিন্স বক্তব্য শুরু করেন।

এসময় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা মাইকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ও আবার সভা বন্ধ করতে বলে। সিপিবি কর্মীরা মাইক সংযোগ দিয়ে সভা শুরু করে। এ পর্যায়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স মাইক হাতে নিয়ে কর্মীদের শান্ত হতে বলে ও সমাবেশ চলবে বলে ষোষণা দেয়। তিনি পুলিশকে সমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি করেন। ছাত্রলীগের মাস্তানরা আবার মাইকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলে রুহিন হোসেন প্রিন্স মাইক ছাড়াই কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে থাকেন। এসময় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কর্মীদের ওপর মারধর ও সমাবেশ পণ্ড করার চেষ্টা করলে আবারও সিপিবি‘র নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা নেতৃবৃন্দকে সন্ত্রাসীদের আক্রমণ থেকে রক্ষায় মানবঢাল গড়ে তোলে। একই সময় আরো বেশীসংখ্যক পুলিশ এসে পুরো সমাবেশ ঘিরে আক্রমণ চালায়, লাঠিচার্জ করে। পুলিশী আক্রমণে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. দিবালোক সিংহ সহ অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশী হামলার সময় সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা সভার চেয়ার ভাংচুর করে।

হামলায় রুহিন হোসেন প্রিন্স, ডাঃ দিবালোক সিংহ ছাড়াও জেলা সিপিবি সভাপতি নলিনী কান্ত সরকার, সিপিবি নেতা মোরশেদ আলম, মীর মামুন, শরিয়ত উল্লাহ, দ্বীন ইসলাম, হাবিবউল্লাহ পাঠান, শংকর সরকার, নজরুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, রহম আলী, জয়কুমার দে, কামরুল ইসলাম, আল আমিন খান, রমজান আলি সরকার, জোবায়ের হোসেন, শাহজাহান, গোলাম মোস্তফা হিরা, ছাত্রনেতা আবুল হোসেন, আজিজুর রহমান সায়েম,  তানবির, তন্ময় দেবনাথ, আনোয়ার, হৃদয় শেখ, পিঞ্জয় সরকার খোরশেদ আলম, তাহমিনা আক্তার স্মিতা, দিপক সরকার, মোঃ  ইব্রাহিম , নুরুল হক, সোহাগ আলম সহ প্রায় ৩০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। দ্বীন ইসলাম, আজিজুর রহমান সায়েম হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

কলমাকান্দায় সিপিবি‘র সমাবেশে হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল দেশব্যাপী বিক্ষোভ
কলমাকান্দায় সিপিবির সমাবেশে হামলা ও সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সদস্য ডা. দিবালোক সিংহসহ নেতাকর্মীদের আহত করার প্রতিবাদে আগামীকাল ১০ সেপ্টেম্বর শনিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এর অংশ হিসেবে বিকেল সাড়ে ৫টায় ঢাকায় পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..