খুলনায় প্রতিবাদী সমাবেশ, শোকর‌্যালী, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, বিক্ষোভ মিছিলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সাবেক সদস্য, খুলনা জেলায় সাবেক সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের যোদ্ধা, বিশিষ্ট মার্কসবাদী তাত্ত্বিক কমরেড রতন সেনের ৩০ তম হত্যাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।

আজ ৩১ জুলাই বিকেল ৪ টায় খুলনায় শহীদ হাদিস পার্কের দক্ষিণ গেটে সমাবেশে সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স কমরেড রতন সেন হত্যাকারী ও নেপথ্যের হোতাদের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "ক্ষমতার দাপট, বিচারহীনতা, গণতন্ত্রহীনতা, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও লুটেরাদের উৎসাহিত করছে।" তিনি কমরেড রতন সেন হত্যার পুন:তদন্ত ও বিচার দাবি করে বলেন, এই হত্যাকারীদের ক্ষমা নেই।

সিপিবি খুলনা জেলা সভাপতি ডা.মনোজ দাস-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, খুলনা জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এ রশীদ, সহসাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল হান্নান, অ্যাড. রুহুল আমিন, এইচ এম শাহাদাত, অ্যাড. চিত্ত রঞ্জন গোলদার, কিশোর রায়, সুতপা বেদজ্ঞ, অশোক সরকার, নিতাই গাইন প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে শোকর‌্যালী ও কমরেড রতন সেনের স্মৃতিস্তম্ভে সিপিবিসহ বিভিন্ন সংগঠন পুস্পস্তবক অর্পণ করে। এরপর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, কমরেড রতন সেন হত্যার পর সরকারি সংস্থাই খুঁজে বের করেছিল এর সাথে জড়িতদের। খবর বেরিয়েছিল, উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, তৎকালীন ক্ষমতাসীন ও লুটেরা গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে ভাড়াটিয়া দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেছে।

তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে কমরেড রতন সেন হত্যাকারী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও তার সহযোগীদের বিচার করতে হবে।

তিনি আরও  বলেন, কমিউনিস্টরা রতন সেনের আদর্শ বাস্তবায়ন করে এই হত্যার প্রতিশোধ নেবে।

 
তিনি বলেন, দেশের মানুষ আজ দু:শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ঠ। সারাদেশে অস্থিরতা ও ভয়ের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। দুর্নীতিবাজ, লুটেরা,টাকা পাচারকারী, দখলদারদের রাজত্ব চলছে। এরা মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষের আয় কমে গেলেও মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের পকেট কাটা চলছে। দেশকে সীমাহীন দুর্নীতি ও বৈষম্যের দেশে পরিণত করা হয়েছে।

 
তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাদী সমাজ আমাদের এখানে নিয়ে গেছে। সারা বিশ্বে অস্থিরতা বাড়ছে। এর থেকে মুক্তি পেতে দু:শাসনের অবসান ও ব্যবস্থা বদল করতে হবে। এজন্য জনগণকে সচেতন ও সংগঠিত করতে হবে।

তিনি বলেন, রাজনীতিতে নীতিহীনতা, সুবিধাবাদ নতুন প্রজন্মের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে। এদের সামনে কমরেড রতন সেনের মত মানুষদের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।

তিনি দ্বিদলীয় নীতিহীন রাজনীতির বিপরীতে নীতিনীষ্ঠ রাজনীতি সামনে আনতে বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দল,সংগঠন, ব্যাক্তিবর্গকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, ১৯৯২ এর ৩১ জুলাই সকালে খুলনায় ডিসি ও এসপি অফিসের সামনে কমরেড রতন সেনকে হত্যা করা হয়। এর বিচার আজও হয়নি।