আজ ১০ জানুয়ারি ২০২২ সকালে পুরানা পল্টনের মৈত্রী মিলনায়তন, বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাম জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনকল্পে মাননীয় রাষ্ট্রপতি আহুত সংলাপের আয়োজনকে অপ্রয়োজনীয় ও অর্থহীন হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেছেন- এই উদ্যোগ নিতান্তই প্রচারসর্বস্ব। কারণ সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির কার্যকরি সিদ্ধান্ত নেবার কোনো অবকাশ নেই। ব্যক্তিগতভাবে তার যে বিবেচনাবোধই থাকুক না কেন সরকারের প্রধান নির্বাহী অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর মতামত ও ইচ্ছার বাইরে সাংবিধানিকভাবে তাঁর সিদ্ধান্ত নেবার কোনো অবকাশ নেই। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ দিলেও তা তিনি করেন প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিক্রমে। প্রাসঙ্গিকভাবে গত দুইটি সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠনের অভিজ্ঞতা আমরা স্মরণ করতে পারি। ২০১২ ও ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতির সংলাপ ও সার্চ কমিটির মাধ্যমে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল তা নজিরবিহীন দায়িত্বহীনতা ও কলংকের স্বাক্ষর রেখেছে।
জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেন, সরকার ও সরকারি দলের হয়ে কাজ করতে যেয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন দেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের অবশিষ্ট ন্যূনতম ব্যবস্থাই তুলে দিয়েছে; ভোটের মধ্য দিয়ে ভোটারদের পছন্দের দল ও প্রার্থীকে নির্বাচিত করার অধিকার তারা হরণ করেছে। একদিকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব ও মর্যাদা ভুলুন্ঠিত করেছে, আর অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষে ভূমিকা রাখতে যেয়ে শাস্তিযোগ্য ধারাবাহিক অপরাধ সংগঠিত করে আসছেন; সমগ্র নির্বাচনকে চরম হাস্যকর, প্রতারণাপূর্ণ, নিস্ফলা আর প্রহসনে পর্যবসিত করেছেন। অতীতের ধারাবাহিকতায়, বিশেষ করে গত দুইটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশে এখন দলীয় সরকারের অধীনে সামান্যতম গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো অবকাশ নেই; সরকারি নীল নকশার বাইরে কিছুই করার সুযোগ নেই। এ কারণে বাম জোট সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে; পাশাপাশি নির্বাচন যেভাবে টাকার খেলা, পেশীশক্তি, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মাফিয়াদের চরদখলের মত দৌরাত্ম্যের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে ভোটের সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থা চালুসহ সমগ্র নির্বাচনী ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছে। এসবের কোনো কিছুই বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
জোটের সমন্বয়ক বলেন, রাষ্ট্রপতির সংলাপ, সার্চ কমিটি ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাতে প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারি দলের তালিকা ও ইচ্ছার বাইরে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপতিকে শেষ পর্যন্ত সরকারের পছন্দসই ব্যক্তিদের নিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠনের ঘোষণা দিতে হবে। এ পরিস্থিতি দেশে নির্বাচন ও শাসনতান্ত্রিক গভীর সংকট কেবল আরও ঘনীভূত করবে এবং দেশকে আরও বিপদের দিকে ঠেলে দেবে।
সাইফুল হক বলেন, সংকটটি রাজনৈতিক। রাষ্ট্রপতির উপর ভর দিয়ে বা তাকে সামনে রেখে এই সংকটের সমাধান হবে না। আমরা সংকট উত্তরণে সরকারকে অনতিবিলম্বে রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ এবং দেশে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে মতৈক্যের ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে উদ্যোগী হবার দাবি জানাই। পাশাপাশি নির্বাচনের পূর্বে সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠনের জরুরি প্রশ্নেও সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সমঝোতায় আসার দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের নেতা অধ্যপক আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদী) ’র কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভুঁইয়া, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আবদুল আলী ও ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী)’র বিধান দাস প্রমুখ।