Revolutionary democratic transformation towards socialism

অব্যাহত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস রুখে দাঁড়ানো ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন হঠানোর আহ্বান


সারা দেশে অব্যাহত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধ এবং হামলাকারী ও মদদদাতাদের গ্রেপ্তার-বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন হঠিয়ে গণতন্ত্র ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে আজ ২১ অক্টোবর দেশব্যাপী ‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’ পালিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় আজ বিকেল ৪টায় পল্টন মোড়ে প্রতিরোধ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, ইউসিএলবি’র সম্পাদক অধ্যাপক কমরেড আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য কমরেড মানস নন্দী, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবীর জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশরেফা মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা বাচ্চু ভুইয়া ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা রুবেল শিকদার।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে গত ৫০ বছরে শাসক শ্রেণির দলসমূহ ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতায় যাওয়ার নির্লজ্জ প্রতিযোগিতায় সাম্প্রদায়িকতাকে মদদ দিয়ে এসেছে। জনগণ যে সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তিকে পরাজিত করেছে, শাসক শ্রেণির প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে তা পুরনায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু বিবেচ্য নয়, সকল নাগরিকের নিরাপত্তা ও নিজ নিজ ধর্ম আচার-অনুষ্ঠান পালনের নিশ্চয়তা বিধান করা রাষ্ট্রের ও সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু অতীতের সকল সরকারের মতোই বর্তমান সরকারও ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার ক্ষমতার রাজনীতিতে ভোট ব্যাংক হিসেবে সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করছে। একদিকে তাদের উপর আক্রমণকারীদের বিচার না করে হামলায় উৎসাহিত করছে অন্যদিকে ঘটনা ঘটার পর হাজির হয়ে ত্রাতা সাজার চেষ্টা করছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান ভোট ডাকাতির অবৈধ সরকার নাগরিকদের জান, মালের এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্য-ভাত-কাপড় ও কাজের নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে জনজীবন দিশেহারা। অন্যদিকে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্র নির্বাসনে পাঠিয়ে দেশে এক চরম ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন কায়েম করেছে। ফ্যাসিবাদী শাসনই সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয়। ফ্যাসিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা একে অপরের হাত ধরাধরি করে চলে।


style="text-align: justify;">নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১৩ অক্টোবর ২০২১ থেকে কুমিল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের দূর্গাপূজা মন্ডপে কোরান রাখাকে কেন্দ্র করে চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, নাটোর, রংপুরসহ সারা দেশে অব্যাহত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ৪ জন এবং পুুলিশের গুলিতে হামলাকারী মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছে। ৭০/৮০টি মন্দির, বেশ কিছু দোকানপাট, বাড়ীঘর ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় সবক্ষেত্রেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রহস্যজনক নিরবতা, নিষ্ক্রিয়তা ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার প্রমাণ রয়েছে। যা সরকারের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছাড়া সম্ভব না।

নেতৃবৃন্দ বলেন, কুমিল্লার ঘটনায় পূজা মন্ডপে কোরান রাখার ব্যক্তিকে সিসিটি টিভি ফুটেজ থেকে সনাক্ত করেছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। কিন্তু সিসি টিভি ফুটেজ থেকে সনাক্ত করতে ৭ দিন সময় লাগলো কেন? যদি ঐ দিন বা পরদিন সনাক্ত করে জানানো হতো তাহলে সারা দেশে পরবর্তী ঘটনা হয়তো নাও ঘটতে পারতো। বিলম্বে প্রকাশের মাধ্যমে কি সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়ে সরকার রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে?

নেতৃবৃন্দ বলেন, অতীতেও দেশবাসী জজ মিয়া নাটক দেখেছে এবং শুনেছে। এবারেও দেশবাসীর আশংকা সনাক্ত অভিযুুক্তকারী ইকবালকে গ্রেপ্তারের আগেই নেশাগ্রস্ত, পাগল ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করে ঘটনাকে লঘু করার চক্রান্ত চলছে বলে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন।
নেতৃবৃন্দ পূজাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হামলা-সন্ত্রাসের জন্য বর্তমান সরকারকে দায়ী করে ব্যর্থতার দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করার দাবি জানান।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনাকে পূঁজি করে ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি, আরএসএস সে দেশের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণের পাঁয়তারা করছে। ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা লুটতে চাইছে। ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তিকে উভয় দেশের সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নেতৃবৃন্দ আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের বামপন্থি শক্তি ও শান্তিপ্রিয় জনগণের ঐক্যবদ্ধ হওয়া এখন সময়ের দাবি। আর এ ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ-প্রতিরোধের শক্তিই সাম্প্রদায়িকতাকে উপমহাদেশ থেকে নির্মূল করতে পারে।

নেতৃবৃন্দ গত এক সপ্তাহে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ-পুনর্বাসন, জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; হামলাকারী ও মদদদাতাদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার-বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..