বাম
গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের এক ভার্চুয়াল সভা গতকাল ২০
এপ্রিল ২০২১ সন্ধ্যা ৭টায় জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য
কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় অংশ নিয়ে বক্তব্য
রাখেন জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য, বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড
খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল
হক, সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, বাসদ
(মার্কসবাদী) নেতা কমরেড মানস নন্দী, কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড
মোশারফ হোসেন নান্নু, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক
কমরেড ইকবার কবীর জাহিদ, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক কমরেড মনিরুদ্দিন
পাপ্পু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি কমরেড হামিদুল হক, গণতান্ত্রিক
বিপ্লবী পার্টির কমরেড শহীদুল ইসলাম সবুজ, কমিউনিস্ট লীগের কমরেড অধ্যাপক
আব্দুস সাত্তার, গণসংহতি আন্দোলনের কমরেড বাচ্চু ভূইয়া, ওয়ার্কার্স পার্টি
(মার্কবাদী)’র নেতা কমরেড অনিল বিশ্বাস ও বাসদ (মার্কসবাদী)’র কমরেড জহিরুল
ইসলাম।
সভার এক প্রস্তাবে করোনা মহামারী বিস্তার রোধে সরকারের
উপর্যুপরি ব্যর্থতা ক্ষমার অযোগ্য বলে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা
প্রতিরোধ করতে হলে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত যে পথ ও পন্থা তা হলো টেস্ট,
ট্রেসিং, আইসোলেশন, চিকিৎসা এবং ভ্যাকসিন দেয়া। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এর
কোন কিছুই কার্যকরভাবে করছে না। করোনা টেস্টের দিক থেকে বাংলাদেশ সর্বনিম্নে
এমনকি যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তান ও সিরিয়ার সম পর্যায়ে রয়েছে। সংক্রমণ ও
মৃত্যুহারে বাংলাদেশ ভারত এবং পাকিস্তানের চেয়েও বেশি। নেতৃবৃন্দ দিনে
কমপক্ষে ১ লাখ টেস্ট করানোর দাবি করেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগ
সরকার বলেছিল তারা করোনার থেকে অনেক শক্তিশালী, শুরুতে তাদের এহেন
আত্মম্ভরিতা, অহমিকা এবং অবহেলা-প্রস্তুতিহীনতা করোনা মহামারীতে দেশের
মানুষকে নাকাল করেছে। বাংলাদেশের মানুষ যেহেতু পর্যাপ্ত টেস্ট করেনি, ফলে
কে আক্রান্ত, কে করোনায় মৃত্যুবরণ করে তার সঠিক হিসাবও সরকারের কাছে নাই
এবং জনগণকেও জানতে না দিয়ে সাফল্যের এক আত্মতুষ্টির কারণে আজ করোনা
মোকাবেলায় সরকার হাল ছেড়ে দিয়ে সব দোষ জনগণের কাঁধে চাপানোর অপপ্রয়াস
চালাচ্ছে এই বলে যে, জনগণ অসচেতন, স্বাস্থ্যবিধি মানেনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু আমাদের প্রশ্ন দেশবাসীকে সচেতন করা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে
বাধ্য করানোর দায়িত্ব কার? এটাতো সরকারেরই দায়িত্ব। ফলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা
যাবে না, উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে না।
সভার
প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমান ভোট ডাকাতির ফ্যাসিবাদী সরকার জনগণকে সচেতন করে
জনগণের উপর আস্থা না রেখে আমলা নির্ভর হয়ে এই অতিমারী মোকাবেলা করতে চাইছে।
জনগণতো দূরের কথা তার নিজের তৈরি কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশও সরকার
কার্যকর করছে না। সরকার মুনাফালোভি, লুণ্ঠনকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে
জনগণকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়ে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কারিগরি কমিটি
সুপারিশ করেছিল ২ সপ্তাহ কঠোর লকডাউন দেয়ার কিন্তু সরকার প্রথমে ১ সপ্তাহ
ঢিলেঢালা বিধিনিষেধ দিল, ২ দিন পর নগরে গাড়ী চলাচল, ৩ দিন পর শপিংমল
দোকানপাট খোলার ঘোষণা দিল, বই মেলা, কারখানা চালু রাখলো। এতে করোনা সংক্রমণ
প্রতিরোধ না হলেও জনদুর্ভোগ বেড়েছে।
সভার প্রস্তাবে বলা হয়, লকডাউনের
ঘোষণা প্রস্তুতিহীন ও অপরিকল্পিত। কারণ শ্রমজীবী হতদরিদ্র জনগণকে প্রয়োজনীয়
খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ না দিয়ে লকডাউন কার্যকর হবে না এটা সকলেরই জানা।
খাদ্য না দিয়ে লকডাউন ঘোষণা মানুষকে করোনার মৃত্যু থেকে ঠেকাতে গিয়ে
ক্ষুধার জ্বালায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ক্ষুধা পিড়ীত মানুষ ও
চিকিৎসক-পেশাজীবীরা রাস্তায় বেরিয়ে পুলিশী নানা হয়রানীর শিকার হচ্ছে।
সভার
প্রস্তাবে বলা হয় বিশেষজ্ঞদের মত সারা দেশে লকডাউনের প্রয়োজন নেই, অধিক
সংক্রমিত জেলা শহরগুলোতে ৫/১০ টিতে লকডাউন দিলেই হতো। সভা থেকে লকডাউন
কার্যকর করতে হলে ১ মাসের খাদ্য ও নগদ ৫ হাজার টাকা দেয়ার দাবি জানানো হয়।
সভার
প্রস্তাবে বলা হয়, আমাদের দেশে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ দক্ষিণ এশিয়ার
মধ্যে সর্বনিম্ন। আবার যেটা বরাদ্দ হয় তাও দুর্নীতি-অদক্ষতায় ব্যয় করতে পারে
না। গত কয়েক দিনের পত্রিকায় স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির ভয়ংকর চিত্র ফুটে
উঠেছে। ঢাক ঢোল পিটিয়ে বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টার, ডিএনসিসি মার্কেটে ৯৮
কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২টা হাসপাতাল নির্মাণ করার কথা প্রচার করেছিল
কিন্তু এখন দেখা গেল তার অস্তিত্ব নাই। সরকার বলছে যন্ত্রপাতি অন্য
হাসপাতালে দেয়া হয়েছে। এটার বিশ্বাসযোত্যতা কি? ফলে ওই ঘটনার শ্বেতপত্র
জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
স্বাস্থ্যখাতের ৯
বিশেষায়িত হাসপাতালে ৩৭৫ কোটি টাকা দুর্নীতির খবর বেরিয়েছে। ৩৫০ টাকার
কম্বল আড়াই হাজার টাকায় কেনা, সরকারি ওষধ প্রস্তুত কারখানার উৎপাদন বন্ধ
রেখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঔষধ যন্ত্রপাতি বেশি দামে কেনা, মালামাল বুঝে
পাওয়ার আগেই প্রভাবশালীদের চাপে বিল পরিশোধ করা ইত্যাদি দুর্নীতির ঘটনা খোদ
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে। এসব ঘটনার জন্য দায়ীদের
বিচার না করেই অর্থমন্ত্রণালয় কেনাকাটার অর্থ ছাড় করে দিয়েছে। আবার চলতি
অর্থবছরের করোনার জন্য থোক বরাদ্দের ১০ হাজার কোটি টাকার মধ্যেও সাড়ে ৭
হাজার কোটি টাকা অব্যয়িত রয়ে গেছে অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতার জন্য।
বিশ্বব্যাংক ও এডিবির বরাদ্দকৃত অর্থে করোনা চিকিৎসার জন্য ক্রয়কৃত
যন্ত্রপাতিও ১০ মাস ধরে বিমানবন্দরে পড়ে থেকে চুরি ও নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনার
জন্যও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সভা থেকে স্বাস্থ্যখাতে
দুর্নীতি অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে প্রকৃত
কারণ ও দায়িদের চিহ্নিত করে বিচারের আওয়তায় আনা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির
দাবি করা হয়।
সভার অপর প্রস্তাবে বাঁশখালীতে পুলিশের গুলিতে ৬ জন
শ্রমিকের মৃত্যু ও অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনার বিচার বিভাগীয়
তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে বলা হয়, মারা গেল শ্রমিক, আহত
হলো শ্রমিক, আবার সেই শ্রমিকের নামেই মামলা দেয়া হয়েছে। সাড়ে তিন হাজার
শ্রমিকের নামে পুলিশ ও মালিক মামলা দিয়ে শ্রমিকদের উপর হয়রানী ও নির্যাতন
নামিয়ে আনছে। এটা অন্যায় ও অনৈতিক। কারণ পুলিশ একটি পক্ষ ফলে তাদের মামলা
করা তারাই তদন্ত করবে এটা কিভাবে সুষ্ঠ তদন্ত হবে?
নেতৃবৃন্দ শ্রমিকের
নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও হয়রানী বন্ধের দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ মৃত শ্রমিক পরিবারকে আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের
সুচিকিৎসা ও নগদ অর্থ-পুনর্বাসনের দাবি জানান।