মহান অক্টোবর বিপ্লবের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ ও মানবমুক্তির সংগ্রামকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিতে হবে -সিপিবি
Posted: 07 নভেম্বর, 2020
মহান অক্টোবর বিপ্লবের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ ও মানবমুক্তির সংগ্রামকে ঐক্যবদ্ধভাবে অগ্রসর করে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। “অক্টোবর বিপ্লব বিশ্ব সভ্যতার জন্য যে আলোর নিশানা জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে সেই আলোর পথ ধরেই সভ্যতার অগ্রগতি সম্ভব। অক্টোবর বিপ্লব দেশে দেশে শোষিত, নিপীড়িত মানুষের মুক্তির পথ দেখিয়েছে।
আজ ৭ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টায় মৈত্রী মিলনায়তনে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা উপরোক্ত বক্তব্য প্রদান করেন। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, শাহীন রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। সভা পরিচালনা করেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড অভিনু কিবরিয়া ইসলাম।
সভায় সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে বুর্জোয়ারা গির্জাকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করে, সমাজ চেতনায় বিজ্ঞান চর্চা প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক চর্চা চালু করে বর্তমানে তিনটি বিষয় তাদের শ্রেণি স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুর্জোয়ারা আজকে ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী দ্ব›দ্ব ও উগ্র জাতীয়তাকে ব্যবহার করছে তাদের টিকে থাকার স্বার্থে। আধুনিক পুঁজিবাদ মধ্যযুগীয় ধর্মীয় ভাবাদর্শকে বিশেষভাবে কাজে লাগাচ্ছে যা তার সংকটকে উন্মোচিত করে। এটা তার সবলতার দিক নয়, এটা তার দুর্বলতার দিক। তাই পুঁজিবাদ মানব সমাজকে মুক্তি দিতে পারে না।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, সমাজতন্ত্রের পথই হলো মাবনমুক্তির প্রকৃত পথ। এটি শুধু এ কারণে নয় যে, দেশে সংবিধানে ‘সমাজতন্ত্র’ অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। গত প্রায় অর্ধশতাব্দীর অভিজ্ঞতাও একথা প্রমাণ করেছে যে, পুঁজিবাদের ‘নয়া উদারবাদী পুঁজিবাদের’ পথ একদিকে বেপরোয়া লুটপাট অন্যদিকে শোষণ-বৈষম্য ও সমাজকে নৈরাজ্যের অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়। তাই, দেশ বাঁচানোর জন্য ‘সমাজতন্ত্রের’ পথ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। আমাদের ভূখণ্ডে কমিউনিস্ট আন্দোলন তার এক শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে কমিউনিস্টরা সাহসের সাথে লড়াই করেছে, বহু কমিউনিস্ট বুকের রক্ত দিয়েছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম করেছে। জনগণের ভাত-কাপড়ের অধিকারের লড়াইয়ের অগ্রভাগে থেকে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এত ঐতিহ্য সত্ত্বেও, কমিউনিস্টরা এক সময় বিভক্ত হয়েছে অনেক বিচ্ছিন্ন খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। যে পটভ‚মিতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছিল তা এখন আর সেভাবে বিরাজ করে না। তাই কমিউনিস্টরা আজ যে যেখানেই আছেন, তাদের সবাইকে আজ ঐক্যবদ্ধ হওয়া স্বাভাবিক কর্তব্য হয়ে উঠেছে। তাছাড়া দেশ আজ যে অবক্ষয়ের অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আজ লুটেরা ধনিক শ্রেণি রাজনৈতিক মেরুকরণের বাইরে একটি ‘প্রকৃত বাম-বিকল্প’ গড়ে তোলা জরুরি কর্তব্য হয়ে উঠেছে। এই বিকল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি আবশ্যক শর্ত হয়ে উঠেছে, কমিউনিস্টদের শক্তি বৃদ্ধি ও ‘কমিউনিস্ট ঐক্য’। সিপিবি আজ সেই ‘কমিউনিস্ট ঐক্যের’ আহŸান জানাচ্ছে।