বিরোধীদল সমূহের ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য
Posted: 16 এপ্রিল, 2020
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে আজ ১৬ এপ্রিল, ২০২০ সিপিবি কোভিড-১৯ রেসপন্সটিমের প্রাত্যহিক টেলিমিটিং অনুষ্ঠিত হয়। টেলিমিটিংয়ে অংশ নেন সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষী চক্রবর্তী, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, সম্পাদক আহসান হাবিব লাবলু, রুহিন হোসেন প্রিন্স, জলি তালুকদার ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. ফজলুর রহমান।
সভার শুরুতে করোনা রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার মঈন উদ্দিনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয় ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানানো হয়। যাদের অবহেলার কারণে একজন সম্ভাবনাময় চিকিৎসকের অকাল মৃত্যু ঘটে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানানো হয় এবং সরকার ঘোষিত সকল প্রণোদনা প্রদানের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানানো হয়। সেই সাথে চিকিৎসকদের যথোপযুক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও চিকিৎসা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় অপর এক প্রস্তাবে, বিরোধীদলসমূহ কর্তৃক বিপর্যস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা না করা প্রসঙ্গে গতকাল প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলা হয়, সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক যখন বলছিলেন করোনার চেয়ে তারা বেশি শক্তিশালী, করোনা আমাদের কিছু করতে পারবে না তখন কমিউনিস্ট পার্টি করোনা মহামারির বিপর্যয় নিয়ে জনগণকে সতর্ক করতে লাখ লাখ প্রচারপত্র ছাপিয়ে সারাদেশে শহর-গ্রামে সচেতনতা মূলক প্রচারণা চালিয়েছে। ১৭ মার্চ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রকল্প চালু করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। পরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, উদীচী’র উদ্যোগে বহু হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রকল্প চালু হয়। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ি এ পর্যন্ত ৫০ মিলিলিটারের ২,০০,০০০ বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন ও বিতরণ করা হয়েছে, যা সাধারণ মানুষ সহ বড় বড় হাসপাতালে ডাক্তার, রোগীরা ব্যবহার করছেন। কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ও যুব ইউনিয়ন দেশের বিভিন্ন এলাকায় জীবানুনাশক ছিটিয়ে পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব পালন করেছে। অনেক এলাকায় তাদের উদ্যোগে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে খুলনা ও সিলেটে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হয়েছে। পার্টির উদ্যোগে ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্টের সদস্যগণসহ অন্যান্য চিকিৎসকগণ প্রতিদিন টেলিফোনে বহু রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। সর্বোপরি করোনা মহাবিপর্যয়কালে কর্মহীন নিরন্ন মানুষের দ্বারে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, উদীচীসহ অন্যান্য গণসংগঠনসমূহ। এ পর্যন্ত সারাদেশে ২০,০০০ পরিবারের কাছে তারা খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে।
সভায় বলা হয় কমিউনিস্ট পার্টি ও গণসংগঠনসমূহ জনগণের সহযোগিতায় বিপর্যস্ত মানুষের জন্য যা করেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ছাড়া এ মহাবিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে এককভাবে এ মহাবিপর্যয় মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সকল দল ও মহলকে নিয়ে সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগের মধ্য দিয়েই কেবল এ মহাবিপর্যয় মোকাবিলা করা সম্ভব। সে কারণেই আমরা সরকারের কাছে বারবার সর্বদলীয় বৈঠক করে সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার আহবান জানাচ্ছি। কিন্তু সরকারের দিক থেকে আমাদের এ দাবি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
সভায় বলা হয় সরকারি দলের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক হাজার হাজার মণ ত্রাণের চাল ও অন্যান্য বরাদ্দ চুরি প্রমাণ করে কেবল মাত্র সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের দিয়ে ত্রাণ কমিটি গঠিত হলে জনগণের কাছে সরকারের সহযোগিতা যথাযথ ভাবে পৌঁছাবে না। সে কারণে প্রতিটি গ্রামে 'আমাদের গ্রামের কাউকে করোনা এবং ক্ষুধায় মরতে দিব না’ এই বোধ নিয়ে গ্রামের সৎ, দেশপ্রেমিক শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের নিয়ে গ্রাম কমিটি গড়ে তুলতে হবে।
সভায় করোনাভাইরাস বিস্তার রোধের জন্য দেশবাসীকে যার যার ঘরে অবস্থানের বিনীত অনুরোধ জানানো হয়।