ধান কাটার জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিকের ব্যবস্থা করুন,
কৃষকের উদ্বৃত্ত ধান খোদ কৃষকের কাছ থেকে সরকারিভাবে ক্রয়ের ব্যবস্থা করুন
Posted: 20 এপ্রিল, 2020
### করোনা মহাবিপর্যয়কালে হাওরাঞ্চলে ধান কাটা নিয়ে সরকারকে সিপিবি’র পরামর্শ
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে আজ ২০ এপ্রিল, ২০২০ হাওর অধ্যুষিত ছয়টি জেলা সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জের সিপিবি নেতৃবৃন্দের এক যৌথ সভা টেলিমিটিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। টেলিমিটিংয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ কৃষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, সম্পাদক কমরেড জলি তালুকদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি কমরেড অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক ও ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক কমরেড অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন রেজা। জেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে অংশ নেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন, সুনামগঞ্জ জেলার সভাপতি কমরেড অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক কমরেড অ্যাডভোকেট এনাম আহমেদ, হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক কমরেড পীযুষ চক্রবর্তী, মৌলভীবাজার জেলার সভাপতি কমরেড অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক কমরেড অ্যাডভোকেট নিলিমেষ ঘোষ বলু, সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড অ্যাডভোকেট মাসুক মিয়া, কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কৃষক নেতা কমরেড ডা. এনামুল হক ইদ্রিস, সিলেটের কমরেড আনিসুর রহমান ও হবিগঞ্জের কমরেড ইমদাদ খান।
সভায় নেতৃবৃন্দ করোনাভাইরাসজনিত মহাবিপর্যয়কালে হাওরাঞ্চলে ধান কাটায় ক্ষেতমজুরের সংকট ও সরকার কর্তৃক ধান ক্রয় বিষয়ে আলোচনা করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, হাওর অধ্যুষিত ছয়টি জেলার ৩৩টি হাওর উপজেলায় এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের টার্গেট ৩৬ লাখ টন। এ থেকে ধান হবে ১৭ লাখ টন। শুধু সুনামগঞ্জেই ধান হবে ১১ থেকে ১২ লাখ টন। নেতৃবৃন্দ বলেন, হাওরের এ ধান কাটতে প্রায় ৪৫ হাজার শ্রমিকের দরকার হবে। করোনা বিপর্যয়ের কারণে হাওরের বাইরের শ্রমিকরা যেমন আসতে অনিচ্ছুক তেমনি হাওরবাসীও বাইরের শ্রমিকের বিষয়ে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, হাওরে যে কোনো সময় পাহাড়ী ঢল নামতে পারে। দ্রুততার সাথে ধান কেটে নিতে না পারলে কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল পানির নীচে তলিয়ে যাবে। কৃষকের পাকা ধান কাটার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক নিয়োজনের জন্য নীচের ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মৌসুমি শ্রমিকদের নিরাপদ আগমন নিশ্চিত করার জন্য যাত্রার উৎসে একবার এবং গন্তব্যে পৌঁছার পর আরো একবার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, সামাজিক-দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মাবলী ও যথাযথ স্বাস্ব্যবিধি অনুসরণ পূর্বক বিশেষ পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে অস্থানীয় ক্ষেতমজুরদের হাওরাঞ্চলে আনার ব্যবস্থা করা। বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অস্থানীয় ও বহিরাগত মৌসুমি ক্ষেতমজুরদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য-সুরক্ষাব্যবস্থা সম্বলিত সাময়িক অস্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, সকল স্থানীয় ও অস্থানীয় মৌসুমি ক্ষেতমজুরদের জন্য প্রতিটি অস্থায়ী ক্যাম্পে প্রয়োজনীয় স্যানিটাইজার, গ্লাভস, মাস্ক ও প্রয়োজনে পিপিইর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার এবার বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ কোটি ৭ লাখ টন। সরকারিভাবে ধান ক্রয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার টন ও চাল ১১ লাখ টন। তারা বলেন, ব্যাপারিরা এখন ৭০০ টাকা দরে আগাম ধান কিনছে, যা প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ রয়েছে। এভাবে চললে কৃষকরা এ বিপর্যয়কালে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বে। ফলে ধান ক্রয়ের কোনো লক্ষ্যমাত্রা স্থির না করে কৃষকদের রক্ষার জন্য এবার সরকার নির্ধারিত ১,০৪০ টাকা মণ দরে ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্রয় কেন্দ্র চালু করে খোদ কৃষকের কাছ থেকে তাদের উদ্বৃত্ত ধান কিনে নিতে হবে। বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে অস্থায়ী খাদ্য গুদামে রুপান্তরিত করা যেতে পারে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কৃষকদের ধান কাটার জন্য অর্থাভাব দূর করতে সরকার প্রতি ১ হাজার টাকার জন্য ১ মণ ধান কৃষকের গোলাতেই জামানত হিসাবে রাখতে পারে। এতে সরকারের ধান সংগ্রহ, পরিবহন ও সংরক্ষণ খাতে ব্যয় অনেক হ্রাস পাবে। নেতৃবৃন্দ সরকার কর্তৃক ইতোমধ্যে ঘোষিত প্রণোদনা তহবিল থেকে হাওরের কৃষকদের এখনই আর্থিক অনুদান প্রদানের দাবি জানান।