বাম গণতান্ত্রিক জোটের সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ
ভারতের সাথে জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তি বাতিল কর
Posted: 09 অক্টোবর, 2019
# সরকারের নতজানু নীতি ও ভারতের আগ্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলুন
ভারতের সাথে সম্পাদিত জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তিসমূহ সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ আজ ৯ অক্টোবর পুরানা পল্টনস্থ মৈত্রী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইউসিএলবি’র সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার। উপস্থিত ছিলেন সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মানস নন্দী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মনিরউদ্দিন পাপ্পু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ৫ অক্টোবর ২০১৯ নয়া দিল্লীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে সম্পাদিত ৭টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও যে যৌথ ঘোষণা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যায় একতরফাভাবে ভারতের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষিত হয়েছে।
গত এক দশক ধরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীসমূহের পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ভারতের সাথে নানাভাবে দেনদরবার করা হলেও এ পর্যন্ত ভারতের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের দোহাই দিয়ে তিস্তার পানি থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে আসছে। এতে প্রতি বছর বাংলাদেশের শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু তিস্তাসহ অভিন্ন নদীসমূহের পানির ন্যায্য হিস্যার বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে ফেনী নদীর ১.৮২ কিউসেক পানি ভারতকে প্রদান করার চুক্তিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজি হওয়ায় দেশের ১৬ কোটি মানুষ ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছে। এটা বাংলাদেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে দেশ ও জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।
বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে আমাদের দেশের নিরীহ মানুষ বিশেষ করে কৃষক, ক্ষেতমজুর ও অন্যান্য পেশাজীবী মানুষ হত্যা ও নানা ধরনের হয়রানি নির্বিচারে চলছে। সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধে যৌথ ঘোষণায় কোনো উল্লেখ নেই। চুক্তিতে বাণিজ্য ঘাটতি নিরসনে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই, অথচ বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে একটি বড় বাধা বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা।
এবারের চুক্তিতে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় নিরাপত্তা ও নজরদারীর জন্য ভারতকে যে ২০টি রাডার স্টেশন করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব নিঃসন্দেহে হুমকির মুখে পড়বে। এটা মূলত ভারত, আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের একটি কৌশলের অংশ।
বাংলাদেশে বর্তমানে গ্যাসের সংকটের কারণে বিদেশ থেকে এলএনজি, এলপিজি গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় ভারতে এলপিজি রপ্তানির বিষয়টি অনভিপ্রেত, দেশের স্বার্থের জন্য আত্মঘাতি ও জনগণের সাথে প্রতারণার সামিল।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়নি। জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমাদের দেশের প্রস্তাবের পক্ষে ভারত ভোটদানে বিরত থেকেছে। এখানে মিয়ানমারে ভারতীয় পুঁজি বিনিয়োগের স্বার্থ জড়িত। যৌথ ঘোষণায়ও রোহিঙ্গা শব্দটির উল্লেখ পর্যন্ত নাই। অপরদিকে আসামসহ সীমান্তবর্তী রাজ্যসমূহে নাগরিকপুঞ্জি করে বাংলাভাষীদেরকে অনাগরিক ঘোষণা করে বাংলাদেশে জোরপূর্বক ঠেলে দেয়ার বিজেপি নেতাদের হুমকি ও ধারাবাহিক বাংলাদেশবিরোধী সাম্প্রদায়িক প্রচারণার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি বিবৃতিতে আনতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। উপরন্তু তারা ভারতের আশ্বাসেই বিশ্বাস করে চলে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরে সম্পাদিত চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও ঘোষণা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসাবে অপমানজনক এবং এটা বাংলাদেশ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ।
লিখিত বক্তব্যে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকা-ের তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনে ভিন্নমত প্রকাশের কোন স্বাধীনতা নাই।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে সম্পাদিত চুক্তিসমূহ বাতিলের দাবি জানানো হয়। একইসাথে সরকারের নতজানু নীতির প্রতিবাদে এবং ভারতের আগ্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য সকল বাম প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক শক্তি, গোষ্ঠী, ব্যক্তির প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকারী ও তাদের মদদদাতাদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানানো হয়।
কর্মসূচি
আগামী ১৩ অক্টোবর বিকেল ৪.৩০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও যৌথ ঘোষণা, বাতিলের দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল আহ্বান করা হয়।