কমরেড সোমেন চন্দ হত্যাকাণ্ড দিবসের সমাবেশে নেতৃবৃন্দ
ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে সোমেন চন্দ পথপ্রদর্শক
Posted: 08 মার্চ, 2019
ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের সংগঠক বিপ্লবী সাহিত্যিক, শ্রমিকনেতা কমরেড সোমেন চন্দ হত্যাকাণ্ড দিবসের সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বাংলায় কমরেড সোমেন চন্দ প্রথম শহিদ। ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে তাঁর নাম চিরঅক্ষয় হয়ে থাকবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে তিনি পথপ্রদর্শক।
আজ ৮ মার্চ সকালে কদমতলা হৃষিকেষ দাস লেনে কমরেড সোমেন চন্দর স্মৃতিফলকের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, সোমেন চন্দ চর্চাকেন্দ্রের সংগঠক বাবুল চন্দ্র বিশ্বাস ও সিপিবি’র সূত্রাপুর থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিকাশ সাহা। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. কিবরিয়া, প্রগতি লেখক সংঘের সহ-সভাপতি চাকসুর সাবেক ভিপি শামসুজ্জামান হীরা, সিপিবির ঢাকা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জাহিদ হোসেন খান, সিপিবির সূত্রাপুর থানা কমিটির সভাপতি আবু তাহের বকুল, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের নেতা তৈমুর খান অপু, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা আলিফ দেওয়ান, সিপিবি’র নেতা রতন দাস, নূরুল ইসলাম গাজী, সাইফুল ইসলাম সমীর, যুবনেতা গোলাম রাব্বী খান প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী কমরেড সোমেন চন্দ রাজনীতি আর সাহিত্যের অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একই সঙ্গে ঢাকা রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন ও প্রগতি লেখক সংঘের নেতা। শ্রেণিহীন-বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কথা ফুটে উঠেছে তাঁর লেখনীতে। গুন্ডাবাহিনীর কাছে মাথা নত করেননি। যতক্ষণ প্রাণ ছিল তাঁর, ততক্ষণ তিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন। একজন সাচ্চা বিপ্লবী হিসেবেই তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আমরা যখন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, তখন কমরেড সোমেন চন্দর কাছ থেকে প্রেরণা পাচ্ছি। তাঁর স্মৃতি চিরঅম্লান হয়ে থাকবে। তাঁর বিপ্লবী জীবন থেকে শিক্ষা নিয়েই ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে তীব্র করতে হবে। তাঁর জীবনাদর্শ, আত্মত্যাগ চিরদিন বিপ্লবী আন্দোলনের কর্মীদের প্রেরণা জোগাবে।
সমাবেশের আগে সোমেন চন্দর স্মৃতিফলকে সিপিবি, বাম গণতান্ত্রিক জোট, প্রগতি লেখক সংঘ, সোমেন চন্দ চর্চা কেন্দ্র, সোমেন-তাজুল ট্রাস্ট, সোমেন-তাজুল পাঠাগার, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।
উল্লেখ্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের এক পর্যায়ে ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ঢাকার সূত্রাপুরের সেবাশ্রম মাঠে সোভিয়েত সুহৃদ সমিতির ব্যানারে কমিউনিস্ট পার্টি ফ্যাসিবিরোধী শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করেন। সম্মেলনে যোগ দেন কমরেড বঙ্কিম মুখার্জী, কমরেড জ্যোতি বসুসহ প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ। কমরেড সোমেন চন্দ লাল ঝান্ডার মিছিল নিয়ে সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন, তখন হৃষিকেশ দাস লেনে ফ্যাসিস্টদের সহযোগী উগ্র জাতীয়তাবাদী গুণ্ডাদের হাতে ২২ বছরের এই প্রতিভাবান তরুণ নির্মমভাবে খুন হন। খুনীরা তাঁর চোখ উপড়ে ফেলে, জিহ্বা কেটে ফেলে, পেট চিরে ফেলে। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে খুনীরা তাঁর মৃতদেহের ওপর পৈশাচিক নৃত্যে মেতে ওঠে। কমরেড সোমেন চন্দ বাংলার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ। তিনি ছিলেন ঢাকা রেলওয়ে ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক এবং একইসঙ্গে প্রগতি লেখক সংঘের ঢাকা জেলা কমিটির সম্পাদক।