জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর সিপিবি-বাসদ ও বাম মোর্চার স্মারকলিপি পেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে এবং নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করুন

Posted: 22 অক্টোবর, 2017

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার উদ্যোগে রোহিঙ্গা জনগণের ওপর মিয়ানমারের সরকারের গণহত্যা ও র্ববরতা বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর স্মারকলিপিতে সারাদেশব্যাপী পরিচালিত গণস্বাক্ষর অভিযানে সংগৃহীত স্বাক্ষরসহ স্মারকলিপি আজ ২২ অক্টোবর ২০১৭, রবিবার ঢাকাস্থ জাতিসংঘ অফিসে হস্তান্তর করা হয়। জাতিসংঘ ঢাকা অফিসের প্রধানের অনুপস্থিতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মি. হেনরি গ্লোরিয়েক্স স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। সিপিবি-বাসদ ও বাম মোর্চার পক্ষে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকম-লীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মানস নন্দী, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নিশিখা জামালী, বাসদ (মার্কসবাদী)’র জহিরুল ইসলাম। এছাড়াও দলসমূহের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্মারকলিপি হস্তান্তর পরবর্তী ব্রিফিং-এ সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সিপিবি-বাসদ-বাম মোর্চার স্মারকলিপির নিম্নলিখিত ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন। ১. মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শরণার্থীর মর্যাদা দিন এবং তাদের থাকা খাওয়া, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সভ্য জীবনযাপনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। ২. মিয়ানমারে বর্বরতা-গণহত্যা বন্ধ করতে মিয়ানমারকে বাধ্য করুন। ৩. রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে এবং তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করুন। ৪. মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরাসহ বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। ৫. জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে কফি আনান কমিশন এর রিপোর্ট বাস্তবায়ন করুন। সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, চীন, রাশিয়া, ভারত মিয়ানমারে তাদের ব্যাপক বিনিয়োগের স্বার্থে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহমর্মিতা প্রকাশ করলেও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী নয়। অপরদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে সৃষ্ট অস্থিরতাকে আরো উসকে দিয়ে সমস্যাকে গভীরতর করতে চাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নিয়ে মার্কিন ষড়যন্ত্র কারো অজানা নয়। নিরাপত্তা পরিষদে চীন-রাশিয়ার ভেটো ক্ষমতার কারণে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রোহিঙ্গাদের উপর পরিচালিত গণহত্যা, বর্বরতা বন্ধে মিয়ানমারকে বাধ্য করা সম্ভব নাও হতে পারে। সে কারণে বিষয়টিকে সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করে আলোচনার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের সমর্থন অর্জনের জন্য সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। গত পরশু দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন, রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। এই বক্তব্য বাস্তবতা বিবর্জিত ও সত্যের অপলাপ মাত্র। তিনি আরও বলেন, আমরা সিপিবি-বাসদ-বাম মোর্চার পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি, রোহিঙ্গা বিষয়টি এখন আর বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দ্বি-পাক্ষিক বিষয় নয়। এটি একটি বহুপাক্ষিক আন্তর্জাতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সে কারণে সরকারকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মিশন পাঠিয়ে সে দেশের সরকারসমূহকে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও বর্বরতা বন্ধে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে। অপরদিকে চীন, ভারত ও রাশিয়ার বিনিয়োগ ও স্বার্থ বাংলাদেশেও কম নয়। ফলে সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা নিয়ে তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের ইতিবাচক অবস্থান নিতে সম্মত করতে হবে। সিপিবি সভাপতি সেলিম আরও বলেন, আমরা সারাদেশে গণস্বাক্ষর অভিযান পরিচালনা করেছি। প্রথম দফায় ২৫টি জেলায় লক্ষাধিক স্বাক্ষরসহ আজকে আমরা স্মারকলিপি জমা দিচ্ছি। পরবর্তীতে অন্যান্য জেলার গণস্বাক্ষরসমূহ জাতিসংঘ ঢাকা অফিসে জমা দেওয়া হবে। তিনি জাতিসংঘের কাছে আবেদনের পাশাপাশি দেশবাসীকে রোহিঙ্গা ঘটনায় সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোন দুষ্ট চক্র যাতে এ ইস্যুকে ব্যবহার করে দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রাদায়িক ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ না পায় তার নজর রাখতে হবে।