সিপিবি’র প্রাথমিক বাজেট-প্রতিক্রিয়া
এ বাজেট হলো ‘সর্বশ্রেষ্ঠ গরিব মারার বাজেট’
Posted: 29 জুন, 2017
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড মো. শাহ আলম এক বিবৃতিতে আজ জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া বাজেটকে বাংলাদেশের ইতিহাসের ‘সর্বশ্রেষ্ঠ গরিব মারার বাজেট’ এবং সাম্রাজ্যবাদ ও লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার গণবিরোধী দলিল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বিবৃতিতে সিপিবি’র নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এই বাজেটে সমাজতন্ত্রসহ রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির কোনো প্রতিফলন নেই। শুধু তাই নয়, এই বাজেট মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী আদর্শে প্রণীত হয়েছে। বাজেটের ভিত্তি হলো পুঁজিবাদের নয়া উদারবাদী প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন। ধনীকে আরো ধনী এবং গরিবকে আরো গরিব করা, ধন-বৈষম্য ও শ্রেণি-বৈষম্য বৃদ্ধি করা, সামাজিক অস্থিরতা ও নৈরাজ্য বৃদ্ধি করা ইত্যাদি হবে এই বাজেটের ফলাফল। এই বাজেট জাতির অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও নাজুকতা বাড়িয়ে তুলবে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ স্মরণকালে সর্বোচ্চ। বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মের কাঁধে বিশাল ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বাজেটের ফলে গরিব-মধ্যবিত্তসহ সাধারণ মানুষকে বাড়তি বোঝা বহন করতে হবে। বাজেটে অপ্রদর্শিত কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। পোশাক শিল্প মালিকদের জন্য কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো হয়েছে। সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের জন্য বরাদ্দ বেড়েছে। অথচ কৃষি-শিক্ষা-চিকিৎসাসহ জনগণের জন্য বরাদ্দ আনুপাতিক হারে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। উন্নয়নের নামে লুটপাটের পথ আরো প্রশস্ত করা হয়েছে। গরিব জনগণের সম্পদ মুষ্ঠিমেয় লুটেরা ধনিকের হাতে প্রবাহিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাজেটে কথার ফুলঝুরি ও মিথ্যা আশ্বাসে ভরা লোক দেখানো মনোতুষ্টির নিস্ফল প্রয়াস চালানো হলেও, এ কথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে বাজেটের আসল লক্ষ্য হলো জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দেশি-বিদেশি লুটপাটকারীদের পকেট ভারী করা।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বাজেটের গণবিরোধী পদক্ষেপের দায় অর্থমন্ত্রীর ওপর চাপিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হিরো বানানোর ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে। ভ্যাট আর আবগারি শুল্কের মধ্যে জনগণের দৃষ্টি আটকে রেখে, অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোসহ বাজেটের গণবিরোধী চরিত্রকে আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে। জনগণের প্রবল সমালোচনার মুখে ২ বছরের জন্য ভ্যাট স্থগিত আর আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব বাতিল করে সরকার বাহবা নিতে চাইছে। কিন্তু ভ্যাট আর আবগারি শুল্কের ব্যাপারে সরকারের পিছু হটা, পাশ হওয়া বাজেটের গণবিরোধী চরিত্রকে কোনোভাবেই পরিবর্তন করে না।
নেতৃবৃন্দ সরকারের গণবিরোধী নীতি, পদক্ষেপ ও তৎপরতার বিরুদ্ধে বাম-প্রগতিশীল-দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।