পল্টন হত্যাকান্ড দিবসের ১৪ তম বার্ষিকীতে কমরেড সেলিম
হত্যা-নির্যাতন করে আদর্শের লড়াই থেকে কমিউনিস্টদের কখনই বিচ্যুত করা যাবে না
Posted: 20 জানুয়ারী, 2015
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, কমিউনিস্ট পার্টির অগ্রযাত্রা থামাতেই পল্টনে মহাসমাবেশে বোমা হামলা চালিয়ে নির্মমভাবে ৫ জন কমরেডকে হত্যা করা হয়েছে। ’৫০ সালে রাজশাহী জেলে গুলি করে ৭ জন কমরেডকে হত্যা করা হয়েছে। বারে বারে কমিউনিস্ট পার্টির ওপর হামলা হয়েছে। পল্টনে বোমা কমরেড হিমাংশু মন্ডলের জীবন কেড়ে নিলেও, তাঁর হাত থেকে লাল পতাকা ছিনিয়ে নিতে পারেনি। হত্যা-নির্যাতন করে আদর্শের লড়াই থেকে কমিউনিস্টদের কখনই বিচ্যুত করা যাবে না।
আজ ২০ জানুয়ারি, সকাল ১০টায় পুরানা পল্টনস্থ মুক্তি ভবনের সামনে পল্টনের শহীদদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সিপিবি’র সভাপতি কমরেড সেলিম এসব কথা বলেন। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লাবলু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জলি তালুকদার, ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল, ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক জিলানী শুভ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সিপিবি’র জাতীয় পরিষদ সদস্য ও যুব ইউনিয়নের সভাপতি কাফি রতন। সমাবেশে সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান, সহিদুল্লাহ চৌধুরীসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কমরেড সেলিম আরও বলেন, পুলিশের গুলিতে, ক্রসফায়ারে, পেট্রল বোমার আগুনে, সংঘর্ষে নাশকতায় সারা দেশে মানুষ মারা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতির জন্য বিএনপি-জামাত দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না। অন্যদিকে সরকার দেশকে কার্যত পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে সরকার পুলিশ-বিজিবি দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে পরিস্থিতি আরও সংকটময় করে তুলেছে। দুপক্ষের ক্ষমতাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্বের ফলে যে নৈরাজ্যকর ও সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে, তার সাথে জনগণের স্বার্থের কোন সম্পর্ক নেই।
কমরেড জাফর বলেন, পল্টন হত্যাকান্ডের বিচারপ্রক্রিয়াকে দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। বামপন্থীরা ক্ষমতায় গিয়ে এই হত্যাকান্ডের বিচার করবে। শহীদদের আদর্শ সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ কায়েমের মধ্য দিয়েই শহীদদের প্রতি যথাযথ সম্মান জানানো হবে। বোমা হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত সকলের পাশাপাশি, এর নেপথ্যের হোতাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, দেশবাসী চলমান অনিশ্চয়তা, সংঘাত-সহিংসতার অবসান চায়। লুটেরা ধনিকগোষ্ঠীর দল ও জোট আজ চরম দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। এই দেউলিয়া রাজনীতির বিরুদ্ধে বাম-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি-সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।
পুষ্পমাল্য অর্পণ ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর সমবেত কণ্ঠে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল গাওয়া হয়। এরপর পল্টন হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
অস্থায়ী শহীদ বেদিতে বিভিন্ন দল, সংগঠনের পুষ্পমাল্য অর্পণ
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের নেতৃত্বে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রথমে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
একে একে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), পংকজ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ঐক্য ন্যাপ, সাইফুল হকের নেতৃত্বে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ডা. শাহাদাৎ হোসেনের নেতৃত্বে গণতন্ত্রী পার্টি, মানস নন্দীর নেতৃত্বে বাসদ (মার্কসবাদী), ফিরোজ আহমেদের নেতৃত্বে গণসংহতি আন্দোলন, নাসিরউদ্দিন নাসুর নেতৃত্বে গণমুক্তি ইউনিয়ন।
আরও পুষ্পমাল্য অর্পণ করে কৃষক সমিতি, ক্ষেতমজুর সমিতি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, শ্রমিক-কর্মচারি ফেডারেশন, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, সাপ্তাহিক একতা, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, রণেশ দাশগুপ্ত চলচ্চিত্র সংসদ, সিপিবি-নারী সেল, সিপিবি’র বিভিন্ন থানা ও শাখার নেতৃবৃন্দ।
বার্তা প্রেরক
চন্দন সিদ্ধান্ত
কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগ