`স্বৈরাচারী ব্যবস্থা উচ্ছেদ ছাড়া গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা যাবে না'

Posted: 10 নভেম্বর, 2024

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন ও শহীদ আমিনুল হুদা টিটোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)'র সাধারণ সম্পাদক, ৯০’র গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম ছাত্রনেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, এদেশের ছাত্র শ্রমিক জনতা বুকের রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারকে উচ্ছেদ করার পরও নতুন করে স্বৈরাচার চেপে বসে। আজ থেকে ৩৪ বছর আগে স্বৈরাচারী এরশাদকে উচ্ছেদ করলেও গণতন্ত্র পুরোপুরি মুক্তি পায়নি। এরপর থেকে পালাক্রমে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা তিন জোটের রূপরেখা এবং আচরণ বিধি মানেনি। উপেক্ষা করে চলেছিল। দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরশাসন দেশবাসীর কাঁধে ভর করেছিল। ঐ স্বৈরাচারকে উচ্ছেদ করে এবার আমরা স্বৈরাচার মুক্ত পরিবেশে নূর হোসেন ও টিটোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

তিনি বলেন, স্বৈরাচারী ব্যবস্থা উচ্ছেদ ছাড়া গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। তাই আজকের অঙ্গীকার হবে পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বৈরাচারী ব্যবস্থার উচ্ছেদের সংগ্রাম বেগবান করতে হবে। এ কাজটি করতে পারে নীতিনিষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তি। যার যার দাবিতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ঐক্য গড়ে তুলে নীতি-নিষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তির পতাকাতলে তাদের সমবেত করতে হবে।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এবারের জুলাই-আগস্ট এর গণঅভ্যুত্থানের  অন্যতম আকাঙ্ক্ষা হল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার পথে এগিয়ে যাওয়া। যে দাবিতে এদেশের বাম প্রগতিশীল শক্তি দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে চলেছে।

তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো জনজীবনে শান্তি আসেনি। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় মানুষের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। পতিত স্বৈরাচার, দেশি-বিদেশি অপশক্তি নানা ধরনের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এই সরকারের অন্যতম করণীয় হলো নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাওয়া এবং এর জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা করা। এ বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট বক্তব্য না থাকায় মানুষের মনে নানা সন্দেহ অবিশ্বাস জন্ম নিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে, সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিলের কথা বলা হয়েছে এটা খুবই ভালো পদক্ষেপ। আবার নানা ধরনের দায়মুক্তি আইন জারি করে সরকারের সব ধরনের কাজের বিষয়ে প্রশ্ন তোলাকে নিষিদ্ধ করার কথাও শোনা যাচ্ছে। একটা গণতান্ত্রিক সমাজে এটি কাম্য হতে পারে না। এ ধরনের দায়মুক্তি দেওয়ার পথ থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে।

তিনি বলেন, স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের উপরে থাকা মাফিয়া ও রাস্তার মাফিয়ারাই রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণকর্তা ছিল। দুর্বৃত্তায়াত্তিত অর্থনীতি আর দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি দেশকে গণতন্ত্রহীন ও লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কালক্ষেপণ হলে এরাই আবার নানা নামে তাদের রাজত্ব অব্যাহত রাখবে।

তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর গণঅভ্যুত্থান, ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং ব্যবস্থা বদলে সংগ্রাম অগ্রসর করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

আজ ১০ই নভেম্বর ২০২৪ সকাল ৮টায় ঢাকার জিরো পয়েন্টের শহীদ নূর হোসেন স্কয়ারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)'র পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

পুস্পস্তবক অর্পণের সময় সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন রেজা, লুনা নূর, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন খান, সংগঠক সাদেকুর রহমান শামীম, শ্রমিক নেতা আব্দুল কাদের, ক্ষেতমজুর নেতা মোতালেব হোসেন, কৃষক নেতা আলতাফ হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা দীপক শীল, সাংস্কৃতিক সংগঠক রতন কুমার দাস, যুবনেতা জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, নুরুল ইসলাম গাজী, রবিউল ইসলাম রবি, আব্দুস সাত্তার, ছাত্রনেতা মাহির শাহরিয়ার রেজা, বাহাউদ্দিন শুভ, শুভ চন্দ্র শীলসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

নূর হোসেন স্কয়ারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কার্যালয়ে শহীদ আমিনুল হুদা টিটোর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সিপিবি নেতৃবৃন্দ।