বিশ্বের
৪৯টি বামপন্থী এবং ওয়ার্কার্স পার্টি এক যৌথ বিবৃতিতে- গাজা এবং লেবানন
থেকে ইজরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার, বন্দিদের মুক্তিসহ, ১৯৬৭ সালের সীমানা
অনুযায়ী একটি সার্বভৌম প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠনের দিকে সুনির্দিষ্ট
পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা, কমিউনিস্ট এবং
ওয়ার্কার্স পার্টিগুলি, যারা নীচে সই করেছি— পশ্চিম এশিয়াতে শান্তি এবং
উন্নতির জন্য প্রচার করে চলেছি। এখন লেবাননের ওপর ইজরায়েলের বহুমুখী
ক্রমবর্ধমান আক্রমণ এবং পূর্ণমাত্রায় অনুপ্রবেশের ফলে এই অঞ্চলে যে
নজিরবিহীন অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে— সেই সম্পর্কে আমরা আমাদের গভীর
আশঙ্কা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
ইরানের সার্বভৌমত্ব এবং লেবাননের ওপর
যেসব উস্কানিমূলক নিয়মবিরুদ্ধ আইনবিরুদ্ধ ইজরায়েলী হামলা চলছে, তার ফলেই
ইরান, ইজরায়েলের ওপর পালটা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এবং তা অনুমেয়।
আমাদের
বিশ্বাস, বর্তমান ট্রেন্ড (ধারা) যদি চলতেই থাকে, তবে আমাদের এই অঞ্চলগুলি
দ্রুত পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের এক সর্বগ্রাসী চক্রে নিমজ্জিত হয়ে যাবে।
তার ফলে তৈরি হবে এক বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ-পরিস্থিতি। স্বাভাবিকভাবেই, তার
অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে, আমাদের দেশগুলির এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা বিপন্ন
হবে।
আন্তর্জাতিক বিধি-নিয়মের নিদারুণ খেলাপ করে, ইজরায়েলের নেতানিয়াহু
সরকার গত ১২ মাস ধরে গাজায় লাগাতার গণহত্যা-যুদ্ধ চালাচ্ছে। তেহরান এবং বৈরুতে রাজনৈতিক নেতাদের নির্মমভাবে খুন করে চলেছে। এখন লেবাননে
অনুপ্রবেশসহ সাংঘাতিক সব সন্ত্রাসমূলক যুদ্ধকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে যাতে, গোটা
পশ্চিম এশিয়া জুড়ে তাদের শত্রুরা নির্মূল হয় এবং আরও ব্যাপক যুদ্ধ ছড়িয়ে
পড়ে। বলা বাহুল্য, এ সবই হল মার্কিন এবং ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে তাদের অশুভ
আঁতাতের ফল; যার উদ্দেশ্য হল— পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রের পুনর্গঠন।
তাই ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের পরিকল্পনামাফিক আক্রমণাত্মক যোগসাজশ
বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছে, যাতে তাদের সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য এবং দমন
প্রতিষ্ঠিত হয়।
পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি তাদের দীর্ঘ দৃঢ় মুঠো
পশ্চিম এশিয়ায় শক্ত করার জন্য ইজরায়েলকে ব্যবহার করছে— কখনও লাগাতার আড়াল
করে চলেছে, কখনও অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ক্রমাগত সমর্থন করে চলেছে। আর ইজরায়েল
পশিম এশিয়া দখল অভিযানে দাবানলে অগ্নিসংযোগকারীর ভূমিকা পালন করছে, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং আইনকে কাঁচকলা দেখিয়ে আক্রমণাত্মক কৌশল
বজায় রেখে চলেছে।
আমরা মনে করি— পশ্চিম এশিয়ার বর্তমান অশান্ত
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র হল— প্যালেস্তাইনের সমস্যার সুনির্দিষ্ট
শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান।
তাই আমরা, অবিলম্বে গাজা এবং ওয়েস্ট
ব্যাঙ্কে গণহত্যার শেষ চাইছি। এইসব অঞ্চল থেকে সমস্ত ইজিরায়েলি বাহিনী
প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। ইজরায়েলের জেলে বন্দি এবং ডিটেনশন সেন্টারে
আটক সমস্ত প্যালেস্তিনীয়দের; গাজায় আটক ইজরায়েলি বন্দিদেরও মুক্তি দাবি
করছি। তার সঙ্গে আমাদের দাবি, ৪ জুন, ১৯৬৭ সালে জাতিসংঘের নীতি অনুযায়ী
যেমন সকলে নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে সার্বভৌম প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের
স্বীকৃতির পাশে দাঁড়িয়েছিল, তেমনভাবেই তাকে পুনর্বহাল এবং বাস্তবায়িত করতে
অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট আইনি পদক্ষেপ এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবিলম্বে প্যালেস্তাইনে অবৈধ দখলদারির অবসান ঘটাতে
হবে।
লেবানন এবং প্যালেস্তিনীয় জনগণের সংগ্রামের সঙ্গে আমরা সংহতি
জানাচ্ছি। বৈদেশিক অনুপ্রবেশ, আগ্রাসন, দখলদারিকে প্রতিহত করার জন্য
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের মৌলিক এবং সার্বিক অধিকারের প্রতি পূর্ণ
সমর্থন প্রকাশ করছি। লেবাননের সার্বভৌম ভূখণ্ড থেকে সত্বর সমস্ত ইজরায়েলি
সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে।
সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন, ইরানসহ ঐ অঞ্চলগুলিতে লাগাতার বোমাবর্ষণ এবং সামরিক আক্রমণের ধ্বংসলীলা বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।
এই
পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চাই, সমস্ত গোলাবারুদ-যুদ্ধাস্ত্র ক্ষেপণাস্ত্র
রপ্তানি এবং ইজরায়েলকে প্রযুক্তিগত সাহায্য করা বন্ধ করতে হবে, যাতে তারা
প্যালেস্তাইন এবং লেবাননে তাদের ধ্বংসাত্মক নজিরবিহীন বিপজ্জনক সামরিক
পরীক্ষা এবং অভিযান বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের কাছে
দাবি— গাজায় ইজরায়েলের গণহত্যা এবং যুদ্ধ বিষয়ক রায়গুলি বহাল রাখা হোক এবং
অবিলম্বে সেগুলি বিনা বাধায় কার্যকর করা হোক।
আমরা সকল পক্ষের কাছে, জাতিসংঘের আবেদনের প্রতি নজর দিতে আর্জি জানাচ্ছি, এই অঞ্চলের
জনসাধারণের জন্য বিপর্যয়কারী এক বৃহৎ ব্যাপক দুঃস্বপ্নের যুদ্ধ পরিস্থিতি
তৈরির সম্ভাবনা থেকে সরে এসে, আমরা যাতে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য
সকলে আন্তরিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি।”
স্বাক্ষরকারীদের তালিকা
১. আর্মেনিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি
২. অস্ট্রেলিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি
৩. অস্ট্রিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি
৪. অস্ট্রিয়ার লেবার পার্টি
৫. বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
৬. ব্রাজিলের কমিউনিস্ট পার্টি (পিসিডিওবি)
৭. ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টি
৮. কানাডার কমিউনিস্ট পার্টি
৯. সাইপ্রাসের
AKEL
১০. বোহেমিয়া এবং মোরাভিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি
১১. ডেনমার্কের কমিউনিস্ট পার্টি
১২. ফিনল্যান্ডের কমিউনিস্ট পার্টি
১৩. ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টি
১৪. জার্মান কমিউনিস্ট পার্টি
১৫. গ্রিসের কমিউনিস্ট পার্টি (কেকেই)
১৬. হাঙ্গেরিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টি
১৭. ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি
১৮. ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)
১৯. ইরানের তুদে পার্টি
২০. ইরাকের কমিউনিস্ট পার্টি
২১. কুর্দিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি- ইরাক
২২. আয়ারল্যান্ডের ওয়ার্কার্স পার্টি
২৩. ইজরায়েলের কমিউনিস্ট পার্টি
২৪. ইতালির কমিউনিস্ট পার্টি
২৫. কাজাখস্তানের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন
২৬. লুক্সেমবার্গের কমিউনিস্ট পার্টি
২৭. মাল্টার কমিউনিস্ট পার্টি
২৮. মেক্সিকো কমিউনিস্ট পার্টি
২৯. নেদারল্যান্ডসের নতুন কমিউনিস্ট পার্টি
৩০. নরওয়ের কমিউনিস্ট পার্টি
৩১. প্যালেস্তাইন পিপলস পার্টি
৩২. পর্তুগিজ কমিউনিস্ট পার্টি
৩৩. রাশিয়ার ফেডারেশনের কমিউনিস্ট পার্টি
৩৪. রাশিয়ার কমিউনিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টি
৩৫. সার্বিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি
৩৬. স্পেনের কমিউনিস্ট পার্টি
৩৭. স্পেনের শ্রমিকদের কমিউনিস্ট পার্টি
৩৮. কাতালোনিয়ার কমিউনিস্ট
৩৯. শ্রীলঙ্কার কমিউনিস্ট পার্টি
৪০. সুদানের কমিউনিস্ট পার্টি
৪১. সুইডেনের কমিউনিস্ট পার্টি
৪২. সিরিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি
৪৩. তুরস্কের কমিউনিস্ট পার্টি
৪৪. ইউক্রেনের কমিউনিস্ট পার্টি
৪৫. উরুগুয়ের কমিউনিস্ট পার্টি
৪৬. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিস্ট পার্টি
৪৭. ভেনেজুয়েলার কমিউনিস্ট পার্টি
৪৮. ইতালির কমিউনিস্ট ফ্রন্ট
৪৯. পার্টি অব কমিউনিস্টস ইউএসএ