মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়

Posted: 25 মার্চ, 2025

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের এই রাতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঘুমন্ত বাঙালির উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনা ঘটিয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে তা ‘কালরাত্রি’ নামে খ্যাত। ২৫ মার্চের গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে আজ সন্ধ্যায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও শ্রদ্ধা নিবন্ধন করা হয়। 

বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ নানা শ্রেণি-পেশার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ এ কর্মসূচি পালন করে।

ঐতিহাসিক শিখা চিরন্তনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সেখানে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ইকবাল কবির জাহিদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক এম এম আকাশ, বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা অধ্যাপক আব্দুর সাত্তার, বাংলাদেশ জাসদের অন্যতম নেতা ডাক্তার মোস্তাক আহমেদ প্রমুখ।

শিখা চিরন্তনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের পরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ও প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল পরবর্তী সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স। বক্তব্য রাখেন, সিপিবি সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড মিহির ঘোষ। 

সমাবেশে অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা, রাগিব আহসান মুন্না, লুনা নূর, আবিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ ডা. ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জলি তালুকদার, নিমাই গাঙ্গুলি, মানবেদ্র দেব, জাহিদ হোসেন খান প্রমুখ।

কমরেড রুহিন হোসে প্রিন্স বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পরেও এদেশে বেতনের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিককে রাস্তায় জীবন দিতে হয়। আমরা এ বাংলাদেশ চাইনি। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যে বাংলাদেশ অনাকাঙ্ক্ষিত। আজও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকল মানুষের সমান অধিকারের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। সাধারণ মানুষের ন্যূনতম অধিকার নিশ্চিত হয়নি। কাজেই আমাদের এ লড়াই আমাদেরকে চালিয়ে যেতে হবে। যতদিন না পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয় ততোদিন আমাদের লড়াই চলবে।

কমরেড মিহির ঘোষ বলেন, গণহত্যার কালরাত্রি স্মরণে আজ আমরা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানালাম। শুধুমাত্র এই আনুষ্ঠানিকতা করেই নয় শহীদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার মধ্য দিয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে দেখছি ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নানাভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ৭১ সালে যারা গণহত্যা চালিয়ে ছিল তাদেরকে নানাভাবে জায়েজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা খুব সুস্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই একাত্তরের নৃশংসতম গণহত্যাকারীদের বাংলাদেশে কোনো ঠাঁই হবে না। গণ-আদালত এবং গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের চেতনা বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের মনের কথা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হবে।