বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ একতরফা নির্বাচনী তফসিল বাতিল, তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন, বর্তমান সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে আগামী ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ দমন-পীড়ন-গ্রেপ্তার বন্ধ ও পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করার আহ্বান জানান।
আজ ১৩ ডিসেম্বর বাম গণতান্ত্রিক জোটের দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের অংশ হিসেবে ঢাকায় পুরানা পল্টন মোড়ে জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মোাহম্মদ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী। সমাবেশ পরিচালনা করেন গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য কমরেড শহিদুল ইসলাম সবুজ।
সভায় নেতৃবৃন্দ নির্বাচন কমিশন আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ না নেওয়া দলগুলির সভা-সমাবেশ, মিছিলের মতো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি করতে না দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র করছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ভোট চাওয়ার যেমন অধিকার আছে, ভোটে না যাওয়ার এবং তা বয়কট করারও অধিকার রাজনৈতিক দলগুলোর রয়েছে। সরকার যেকোনোভাবে নির্বাচন করে আবারো ক্ষমতায় আসতে চায়। তাই তারা সভা-সমাবেশের অধিকার হরণ, শহর ও গ্রামে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর পুলিশ-সাদা পোশাকধারী ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের হামলা-গুপ্ত হত্যা, গণগ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য দেখানোর জন্য সরকার দলীয় প্রার্থীর বাইরেও স্বতন্ত্র প্রার্থী, ডামী প্রার্থী, উচ্ছিষ্টভোগী সুবিধাভোগীদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। এ তামাশার নির্বাচন বাংলার মানুষ মেনে নিবে না এবং তারা তা রুখে দাঁড়াবে। আজ নির্বাচনের নামে যা চলছে তা বর্তমান সরকারের তামাশার নির্বাচনের অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করতে যাচ্ছে। আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এদেশ স্বাধীন করলেও গণতন্ত্র এখনও আসেনি। দেশে লুটেরা, আমলাদের শাসন কায়েম হয়ে গেছে। সরকারের অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি ও জনজীবনের সংকট নিরসনে সরকার ব্যর্থ। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা সরকার নিতে পারেনি। নেতৃবৃন্দ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সর্বত্র গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সরকার দুর্ভিক্ষের আভাস দিয়ে এর জন্য বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রামকে দায়ী করেছেন। প্রকৃতপক্ষে সরকার নিজেরা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে ও প্রহসনের নির্বাচন সফল দেখানোর জন্য এসব নাটক সাজাচ্ছে। বাংলার কৃষক কষ্ট করে যে ফসল ফলায় তাতে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে না।
সমাবেশ থেকে আগামী ১৭ ডিসেম্বর রবিবার ঢাকায় সকাল ১১ টায় পুরানা পল্টন মোড়ে জমায়েত হয়ে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ দেশব্যাপী জেলা-উপজেলায় নির্বাচন কমিশন অফিস ঘেরাও কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান।