বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতৃবৃন্দ আজ ১১ জুলাই ২০২৩ এক বিবৃতিতে বলেছেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদের প্রায় শেষ প্রান্তে একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। সরকার তাদের নিপীড়ন, নির্যাতন, লুটপাটের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণআন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নানা ধরনের নিপীড়নমূলক আইন, নীতিমালা প্রণয়ন করছে।
এমনকি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিবাদ সত্ত্বেও তারা অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল নামক শ্রমিকের ধর্মঘটের অধিকার হরণকারী কালো আইন জাতীয় সংসদে পাশ করানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত তার স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রকাশ। এভাবে আইন করে অগণতান্ত্রিকভাবে জনগণের অধিকার হরণ করা যাবে না। সিপিবির প্রেসিডিয়াম সভায় শ্রমিক-কর্মচারী তথা শ্রমজীবী মানুষের অধিকার হরণকারী এই বিল বাতিল ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়নের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
আজ ১১ জুলাই ২০২৩ সকাল ১১টায় সিপিবি সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই প্রেসিডিয়াম সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শামছুজ্জামান সেলিম, শাহীন রহমান, এ এন রাশেদা।
সভায় আরও বলা হয়, করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকটকালে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়েছে। কর্মহীন ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আায়ের মানুষের জন্য কর্মসংস্থান ও নানা প্রণোদনার প্রয়োজন থাকলেও তা না করে শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অথচ সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু করা হলো না। যা বাজারে বৈষম্য ও সংকট আরও বাড়িয়ে দিবে। বাজার সিন্ডিকেট না ভেঙ্গে লুটেরা ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে।
সভায় অবিলম্বে স্বল্প আয়ের মানুষ, শ্রমজীবি মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানানো হয়। সভায় ঋণখেলাপী ও ব্যাংক মালিকদের বিশেষ সুবিধা প্রদানের তীব্র নিন্দা করা হয়।
সভায় নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডেঙ্গু প্রকোপ ভয়াবহ হচ্ছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ কিন্তু সরকারের তার দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বরং ক্ষমতায় টিকে থাকতে অনুকম্পা পেতে বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সভায় নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, সিন্ডিকেট ভাঙতে এবং দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। সভায় সাম্প্রতিককালে সাধারণ মানুষের তথ্য পাচারের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, এই সরকারের কাছে জনগণের তথ্য নিরাপদ নয়। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তিসহ মানুষের সকল তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
সভায় সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদীর শক্তির অপতৎপরতা রুখে দাড়িয়ে জনগণের শক্তি সংহত করে বর্তমান সরকারের চলমান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।