জ্বালানি তেলের মূল্য ও বাস-লঞ্চের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে

Posted: 08 নভেম্বর, 2021

জ্বালানি তেল এর মূল্য কমানো এবং বাস-লঞ্চের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করার দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে আজ ৮ নভেম্বর ২০২১ সকাল এগারটায় জাতীয় পল্টন মোড়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পল্টন মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল মুক্তাঙ্গন, নূরহোসেন স্কোয়ার হয়ে সচিবালয়ের পূর্ব গেইটে পুলিশি বাঁধার সম্মুখীন হয়। বিক্ষোভ মিছিল পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে জ্বালানি মন্ত্রণালয় অভিমুখে যেতে চাইলে সেখনে বাম জোটের নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি এবং রাজপথে অবস্থান গ্রহণ করে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

উভয় সমাবেশে জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতা সিপিবি’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কমরেড আকম জহিরুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পদক কমরেড মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক কমরেড আব্দুল আলী, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভূইয়া, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী)’র বিধান দাস।

বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ও তেল পাচারের অজুহাত দেখিয়ে লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা দেশবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৪৬.৬৩ টাকায় তেল কিনে সকরকার ৮০ টাকায় কিনতে বাধ্য করছে। সরকার তিন ধরনের শুল্ক, রিফাইন খরচ, জাহাজ খরচ ও পরিবহন বাবদ এখান থেকে প্রায় ৩৪% অর্থাৎ লিটারপ্রতি ১৯ টাকার বেশি তুলে নিচ্ছে। এভাবে শুল্ক-ভ্যাটসহ সরকার গত ৭ বছরে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। মুনাফা থেকে মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকী প্রদান করলেই অথবা কর কমালেই তেলের দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন হতো না বরং কমানো যেতো।

বক্তাগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব কৃষি, পরিবহন, শিল্প ও বিদ্যুতে ব্যাপকভাবে পড়বে। কারণ পরিবহনের ৭২.৭৯ ভাগ, কৃষির ৯৯.৭৩, শিল্পের ৮০.৯৮ ভাগ, বিদ্যুৎ ১৫.২২ ভাগ ডিজেল নির্ভরশীল। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৬ ভাগ ফার্নেস অয়েল ব্যবহৃত হয়। মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে এই প্রতিটি সেক্টরের উপর নির্ভরশীল প্রায় ১৬ কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতোমধ্যে বাস ও লঞ্চের ভাড়া ২৭% ও ৩৬% বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু পরিবহন মালিকেরা বর্ধিত যে ভাড়ার ঘোষণা বিআরটিএ দিয়েছে বাস্তবে তার চেয়ে বেশি ভাড়া যাত্রীদের থেকে আদায় করছে। সরকার ও পরিবহন মালিকদের সাজানো নাটকের মাধ্যমেই এই ভাড়া বৃদ্ধি করা হল। মালিকদের হাতে বাড়তি মুনাফা তুলে দেয়া হল।

একটি হিসাব খেয়াল করলে দেখা যাবে ঢাকা-রংপুর রুটে ৫০ সিটের চেয়ার কোচ বাসে বর্ধিত তেল খরচ হিসেবে প্রতি ট্রিপে খরচ বাড়বে ৯০০ টাকা কিন্তু বর্ধিত ভাড়া আদায়ের মাধ্যমে বাম মালিক ৪৩৫৬ টাকা আদায় করবে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে তেল খরচ ১৫০ টাকা বাড়লেও বাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে ট্রিপ প্রতি ৪৫০ টাকা আদায় করা হবে। তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে সরকার এবং ভাড়া বৃদ্ধি করে মালিক মুনাফা লুটবে। আর আপামর জনগণের শুধু পকেট কাটা যাবে। দেশের শাসন ব্যবস্থার এই জনবিরোধী অযৌক্তিক নীতির বিরুদ্ধে এবং বর্তমান সরকারের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশের বাম-প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক শক্তিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বক্তারা।

নেতৃবৃন্দ বলেন, চাল, ডাল, তেল, পেয়াঁজসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এমনিতেই জনজীবনে দুর্বিসহ অবস্থা বিরাজ করছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিয়েছে। তার উপর জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি ও পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি জনগণের কাছে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ এর সামিল।

নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ডিজেল, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েল, এলপিজি ও অটোগ্যাসের বর্ধিত মূল্য এবং পরিবহনের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। অন্যথায় জনগণকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে সররকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করার হুঁশিয়ারি দেন।