বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের এক সভা গতকাল ১২ অক্টোবর ’২১ ২৩/২ তোপখানা রোডস্থ বাসদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বাম জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড রাজকুজ্জামান রতন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশরেফা শিশু, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবীর জাহিদ, বাসদ (মার্কসবাদী) ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক কমরেড ফখরুদ্দিন কবীর আতিক, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি কমরেড আব্দুল আলী।
আরও উপস্থিত ছিলেন আব্দুল্লাহ আল কাফী রতন, বহ্নিশীখা জামালী, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, আকবর খান, শহীদুল ইসলাম সবুজ, মনিরুদ্দিন পাপ্পু, বাচ্চু ভুইয়া, বিধান রায়, রুবেল মিয়া প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সভার এক প্রস্তাবে চাল, ডাল, তেল, পিয়াজ, এলপি গ্যাসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান ভোট ডাকাতির সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে পুরো ব্যর্থ। মুনাফা লোভী বাজার সিন্ডিকেটের কাছে জনগণ জিম্মি। সরকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, এতে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে।
সভায় বলা হয়, সরকার একদিকে বলছে চালের উদ্বৃত্ত উৎপাদন অথচ বাজারে চালের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। আবার বলছে পিয়াজ, সয়াবিন তেল, চিনি পর্যাপ্ত মজুদ আছে অথচ বাজারে সকাল বিকাল লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে। আর বাড়বে না কেন, বাণিজ্য সচিব যেখানে বলছেন পিয়াজের বাজার আগামী ১ মাস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, এ কথা শুনে তো সিন্ডিকেটের পোয়াবারো, তারা ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়াচ্ছে। এমনিতেই করোনাকালে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় মানুষ খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। তার সাথে মূল্যবৃদ্ধির চাপ তাকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিবে। এতে করে পুষ্টিহীনতায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে মানুষ মৃত্যুমুখে ঢলে পড়বে।
সভায় অবিলম্বে বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতায় আনা, গ্রাম পর্যন্ত ওএমএস চালু করা, গ্রাম-শহরে আর্মি রেটে রেশনিং চালুসহ গণবণ্টন ব্যবস্থা চালুর দাবি জানানো হয়।
সভার অপর এক প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমান অবৈধ সরকার দেশে দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন কায়েম করেছে। যার ফলে একদিকে করোনাকালেও নতুন করে ১৭২৯৩ জন কোটিপতি বেড়েছে অন্যদিকে নতুন দরিদ্র বেড়েছে আড়াই কোটি। সরকারের উন্নয়নের ঢাকের বাজনার নীচে চাপা পড়ছে শোষিত বঞ্চিত মানুষের কান্না।
সভায় অবিলম্বে ভোট ডাকাতির অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন তদারকি সরকারের অধীনে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার দাবি করা হয়।
সভার এক প্রস্তাবে বলা হয় স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে কমিশন গঠনের আইন প্রণয়ন না করে শাসকশ্রেণি সংধিান লংঘন করে চলেছে।
এখন নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতা বহির্ভূত বুর্জোয়া দলসমূহ বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয় আইনমন্ত্রী বলেছেন এখন নাকি সময় নাই। সময় যথেষ্ট আছে, আসলে শাসক সরকারের সদিচ্ছা নাই। সদিচ্ছা থাকলে ৭ দিনেই সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন সম্ভব।
সভায় ক্রিয়াশীল সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে ঐক্যমতের ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সভা থেকে সকল বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল-ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, তদারকি সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার, ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনা করে ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন, দুর্নীতি-দুঃশাসনের অবসান ও দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি রোধ করার দাবি আদায়ে রাজপথে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।