বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের এক অনলাইন সভা গতকাল ৭ আগস্ট সকাল ১১:৩০টায় অনুষ্ঠিত হয়। বাম জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশরেফা শিশু, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কমরেড মানস নন্দী, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবীর জাহিদ, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক কমরেড মনিরুদ্দিন পাপ্পু, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড রাজকুজ্জামান রতন, সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড আব্দুল্লাহ আল কাফী রতন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড আকবর খান, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কমরেড শহীদুল ইসলাম সবুজ, ইউসিএলবি’র সম্পাদক কমরেড অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক কমরেড বাচ্চু ভুইয়া।
সভার এক প্রস্তাবে দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান উর্ধ্বগতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, সরকারের পরিকল্পনাহীনতা, সমন্বয়হীনতা, আত্মম্ভরীতা ও দুর্নীতি-অনিয়মের ফলেই করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে এবং ক্রমেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। সভায় বলা হয়, সরকারের একেক মন্ত্রী একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছে, সকালে এক সিদ্ধান্ত বিকেলে তা বদল করে আরেক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছে যা সরকারের চরম ব্যর্থতা ও অস্থিরতার প্রকাশ।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা কেউ একা বা একদেশের পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব না, তা গত দেড় বছরে গোটা বিশ^ বুঝলেও আমাদের দেশের ভোটডাকাতির অবৈধ সরকার যৌথভাবে সমন্বিত উদ্যোগে সকলকে যুক্ত করে করোনা মোকাবিলার পথে না গিয়ে সবকিছুর মতোই করোনা সংকটেও দলীয়করণ ও দলীয় সংকীর্ণতায় এককভাবে চলতে গিয়ে পরিস্থিতি লেজে গোবরে করে ফেলেছে। যার নিকৃষ্টতম শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ।
সভার অপর এক প্রস্তাবে বলা হয়, বাম জোট ২০২০ সালের এপ্রিল থেকেই সর্বদলীয় সভা করে করোনাকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে মোকাবিলায় সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছিল, কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি।
বাম জোট আরও দাবি করেছিল দৈনিক কমপক্ষে ১ লক্ষ করোনা টেস্ট বিনামূল্যে করা, ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করে বিনামূল্যে সকলের করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করে করোনা চিকিৎসা করা, পর্যাপ্ত সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা বাড়ানো, কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ, পর্যাপ্ত হাইফ্লো নেজাল ক্যানুলা ও ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা। কিন্তু টাকা বরাদ্দ থাকলেও দেড় বছরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এটা শুধু সরকারে অদক্ষতা ও চরম ব্যর্থতাই নয়, জনগণের প্রতি দায়িত্বহীনতা এবং গুরুতর অপরাধ।
সভার এক প্রস্তাবে বলা হয়, করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি। সংক্রমণ বেড়ে গেলে লকডাউন, কারফিউ দিতেও দেখা গেছে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে। আমাদের দেশে সাধারণ ছুটি, লকডাউন ইত্যাদি ঘোষণা করলেও শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের খাবার ও নগদ অর্থ ব্যবস্থা না করে ঘরে থাকতে বললে যে তা কার্যকর হবে না এটা বাম জোট ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বলা হলেও সরকার সে পথে হাঁটে নি, ফলে যা হবার তাই হয়েছে। লকডাউন সফল হয়নি। তাছাড়া একদিকে লকডাউনের ঘোষণা অন্য দিকে গার্মেন্টস কারখানা খোলা রাখা এমন দ্বিচারিতায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ক্রমেই বাড়ছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতীয় ভেরিয়েন্টের সংক্রমণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। অথচ আগেই ভারতের পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ তখনই সতর্ক হওয়ার সুযোগ পেয়েও সরকার তা গ্রহণ না করে জনগণকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে।
সভার আরেক প্রস্তাবে বলা হয়, টিকা নিয়েও নানা তুঘলকি কাণ্ড করছে। শুরুতেই সরকার শুধুমাত্র ভারতের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। চীনকে সিনোভ্যাকের ৩য় ধাপের ট্রায়ালের অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন্তু এখন সিনোভ্যাক থেকেই ৭ কোটি ডোজ টিকা কেনার কথা বলা হচ্ছে। যদি ঐ সময় সিনোভ্যাকের ট্রায়াল হতো এবং যৌথভাবে উৎপাদনে যেতো তাহলে এতো দিনে প্রায় সকলের টিকা নিশ্চিত করা যেতো। এখন আবার টিকা প্রদানেও নানা অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, জনবল নিয়োগ ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে এবং দলীয়করণের ফলে গণটিকা গণহয়রানীতে পরিণত হয়েছে।
সভার এক প্রস্তাবে ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ঠেকাতে অবিলম্বে দৈনিক কমপক্ষে ২ লক্ষ করোনা টেস্ট করা, গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যায়ে স্যাম্পল সংগ্রহ করা, উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট ল্যাবরেটরি ও ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করে বিনামূল্যে টেস্ট ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা, প্রাপ্ত বয়স্ক সকল নাগরিককে জটিলতা ও হয়রানীমুক্তভাবে দ্রুত টিকা প্রদান করা, কর্মহীন-শ্রমজীবী মানুষকে খাবার ও নগদ অর্থ সহয়তা দান, গ্রাম-শহরে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানানো হয়।
কর্মসূচি
উপরোক্ত দাবিতে আগামী ১৮ আগস্ট সারাদেশে সমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় ঐদিন সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।