ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় তাণ্ডব অগ্নিসংযোগের দায় প্রধানত হেফাজতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন বাধা দেয়নি তার দায় সরকারের

Posted: 08 এপ্রিল, 2021

২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ ২০২১ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের ডাকা বিক্ষোভ ও হরতাল চলাকালে পুলিশী হামলায় হত্যাকাণ্ড ও হেফাজতের তাণ্ডবে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা,, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দির ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের প্রকৃত ঘটনা জানতে বাম জোটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল গত ৪ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়ীয়া পরিদর্শনে যান। প্রতিনিধি দলে জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ এর নেতৃত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন সাইফুল হক, আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, বাচ্চু ভুঁইয়া। প্রতিনিধি দলের সাথে সিপিবি জেলা নেতা শাহরিয়ার মো. ফিরোজ, সাজিদ হোসেন ও এডভোকেট জামাল হোসেনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিনিধি দলের ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সফরের অভিজ্ঞতা ও করণীয় দাবি তুলে ধরতে আজ ৮ এপ্রিল ২০২১ সকাল সাড়ে এগারটায় মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলানায়তনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাম জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা কমরেড মানস নন্দী, ইউসিবিএল’র কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভুইয়া, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আকবর খান, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আব্দুল আলী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় হেফাজতের তাণ্ডব ’৭১ এর পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতা, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার তাণ্ডবের জন্য প্রধানত হেফাজতে ইসলামই দায়ী। কিন্তু হেফাজতের তাণ্ডবের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সিভিল প্রশাসন কেন নিষ্ক্রিয় ছিল? গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কি সরকারকে কোনো আগাম সংবাদ দেয়নি? আগের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পরেও কেন তাণ্ডব? ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, হাটহাজারীতে আগেও এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও কেন সরকার পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়নি? বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বার বার ডাকার পরও সময় মতো কেন পুলিশ-র্যাব-বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস আসেনি? এর জবাব সরকারকে দিতে হবে। ফলে তাণ্ডব ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার দায় সরকারও এড়াতে পারবে না।

সংবাদ সম্মেলন থেকে নেতৃবৃন্দ ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন এবং উক্ত দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানান।

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরেজমিন পরিদর্শন করে নেতৃবৃন্দ যা প্রত্যক্ষ করেছে এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে যা জানতে পেরেছে তার ভিত্তিতে বাম জোট সংবাদ সম্মেলন থেকে নিম্মোক্ত দাবি তুলে ধরা হয়।

১.    ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৬-২৮ মার্চ সাম্প্রদায়িক নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করে হেফাজতের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হবার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

২.    ২৬-২৮ মার্চ বিক্ষোভ হরতাল চলাকালে ৫০ এর অধিক সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দির-উপাসনালয় ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনার সাথে জড়িতদের এবং উস্কানিদাতাদের বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

৩.    জেলার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সিভিল প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য ডিসি, এসপিসহ সংশ্লিষ্টদের অপসারণ করতে হবে। কেন নিষ্ক্রিয় ছিল তদন্ত করে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

৪.    ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মানুষের মধ্যে এখনও আতংক ও নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে। ফলে নাগরিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।

৫.    রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

৬.    আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন, মন্দির, সাংস্কৃতিক ক্লাবসহ ক্ষতিগ্রস্থ বেসরকারি স্থাপনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে উপরোক্ত দাবি আদায়ে এবং সরকারের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সকল বাম-প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হচ্ছে।