Revolutionary democratic transformation towards socialism

বন্ধ চিনিকল খুলে দাও, আধুনিকায়ন কর, দুর্নীতি-ভুলনীতি-অনিয়ম দূর কর


## বন্ধ চিনিকল খুলে দেয়ার দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রতি আহ্বান সরকারি নির্দেশে ছয়টি চিনিকল বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে গত ১০-১২ জানুয়ারি ২০২১ বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রতিনিধিদল বন্ধ ছয়টিসহ নয় জেলায় দশটি চিনিকল ও আখচাষ এলাকায় ঝটিকা সফর করেন। প্রতিনিধিদলের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরার জন্যই আজ ১৭ জানুয়ারি ২০২১ পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জোট সমন্বয়ক ও সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন লিখিত বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, পরিচালনা করেন ইউসিএলবি’র নজরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মানস নন্দী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভুইয়া, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি হামিদুল হক। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, করোনাকালে গত বছরের জুলাই মাসে আওয়ামী সরকার পঞ্চাশ হাজার শ্রমিক ও লাখ লাখ পাটচাষির জীবন জীবিকার কথা বিবেচনায় না নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পঁচিশটি পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে। করোনাকালেই আখচাষি ও চিনিকল শ্রমিকদের অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়ে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত পনেরটি চিনিকলের মধ্যে ছয়টি চিনিকল বন্ধ করে দিয়েছে। লিখিত বক্তব্যে সফরকালে চিনিকলগুলোর শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট মিলের সাথে যুক্ত আখচাষিরা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের যে বক্তব্য তুলে ধরেন সেগুলো উপস্থাপন করে বলা হয় চিনিকলের লোকসানের জন্য কৃষক-শ্রমিকদের দায়ি করার কোন সুযোগ নাই। এর জন্য দায়ি সরকার ও প্রশ্রাসনের অনিয়ম, ভুলনীতি ও দুর্নীতি। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বিক্রয় মূল্য থেকে উৎপাদন ব্যয় বেশি হলে লোকসান হবে এটা অর্থনীতির সাধারণ সূত্র। উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ার কারণগুলো হচ্ছে- আখের অপর্যাপ্ত সরবরাহ, অন্যান্য উৎপাদনকারী দেশের তুলনায় একর প্রতি আখের ফলন অনেক কম, পুরাতন প্রযুক্তি ও মেশিনের কারণে আখ থেকে চিনি আহরণ হার (রিকভারী রেট) অন্যান্য উৎপাদনকারী দেশের তুলনায় প্রায় অর্ধেক, পণ্যের বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে উদ্যোগহীনতা, চিনি বিপণনের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক হতে না পারা, আখ কেনা থেকে শুরু করে চিনি উৎপাদন ও বিপণন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতি, প্রশাসনিক ব্যর্থতায় বেড়ে ওঠা পাহাড়সম ব্যাংকঋণ ও তার সুদ, অপ্রয়োজনীয় জনবলের বেতনভাতা প্রভৃতি। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাৎসরিক চাহিদা ২০ লাখ টন ধরলে বাংলাদেশে চিনির বাজার হচ্ছে ১৩ হাজার কোটি টাকার। বর্তমানে পাঁচটি বেসরকারি গ্রুপ রিফাইনারি কারখানা প্রতিষ্ঠা করে বিদেশ থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে পরিশোধন করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডে বাজারজাত করছে। এরা আখিচাষিদের কাছ থেকে এক কেজিও আখ কিনবে না। ফলে আখচাষ শেষ হয়ে যাবে। পাঁচ লাখ আখচাষি নিঃস্ব হবে। বাংলাদেশের চিনিখাত হয়ে পড়বে বিদেশনির্ভর। আর তা নিয়ন্ত্রণ করবে চিনি

ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিশ্ব ব্যাংক- আইএমএফ নির্দেশিত নয়া উদরবাদী পথে হাঁটছে সরকার। নয়া উদারবাদী নীতির কারণে বিরাষ্ট্রীয়করণ এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য। তথাকথিত মুক্তবাজার নীতির কারণে সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ নামমাত্র দামে ব্যক্তিমালিকানায় দিয়ে দিচ্ছে। সরকার তাদের দলীয় লোক ও কর্পোরেট বন্ধুদের হাতে তুলে দিচ্ছে জনগণের সম্পত্তি। সরকার প্রথম দফায় ৬টি চিনিকল এবং পর্যায়ক্রমে সকল চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তীতে সেগুলো তুলে দেয়া হবে ব্যক্তিমালিকানায়। এভাবেই পরিসমাপ্তি ঘটবে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি শিল্প খাতের। চিনি শিল্প রক্ষার জন্য বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে চিনিকল, পাটকলসহ সকল রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিরাষ্ট্রীয়করণের বিরুদ্ধে সকল বাম-প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। করোনা ভ্যাক্সিন নিয়ে কোন বাণিজ্য নয়, বিনামূল্যে সকলকে ভ্যাক্সিন দিতে হবে ২৫ জানুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনে কর্মসূচি ঘোষণা সংবাদ সম্মেলনের রিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত প্রায় এক বছর ধরে সারা বিশ্বের মানবজাতি এক ঘোর অমানিষার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। করোনা বিশ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় নানা রকমের প্রতিষেধক আবিস্কৃত হয়েছে। অন্যান্য দেশের সরকার তাদের দেশের জনগণের জীবন সুরক্ষায় ভ্যাক্সিন সংগ্রহ করছে। কিন্তু বাংলাদেশে সরকার করোনা মোকাবিলায় ভ্যাক্সিন সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়েছে সরকারের এক উপদেষ্টার ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোকে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি অ্যাস্ট্রোজেনিকার ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আমদানির জন্য সরকার ভারত সরকারের সাথে জি টু জি চুক্তি না করে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাকে সাথে নিয়ে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি করেছে। সেরামের কাছ থেকে ভারত সরকার প্রতি ডোজ ২.৭৩ ডলার দামে কিনবে, আর বেক্সিমকোর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার কিনবে ৫ ডলারে। যার মাধ্যমে বেক্সিমকো ৫০০ কোটি টাকা ব্যবসা করে নেবে। সেরামের কাছে ভারত যে মূল্যে এই টিকা পাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য সেই মূল্য প্রায় দেড়গুণ (৪৭ শতাংশ) বেশি। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে বেক্সিমকো ৩০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বিক্রি করবে এর মধ্যে ১০ লাখ ডোজের জন্য এরইমধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে বেক্সিমকো এর খুচরামূল্য নির্ধারণ করেছে ১৩ ডলার বা ১১২৫ টাকা। বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্ট করে সরকারকে জানাতে চাই করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কোন বাণিজ্য চলবে না এবং বিনামূল্যে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সকলকে করোনা ভ্যাকসিন দিতে হবে। কর্মসূচি ‘করোনা ভ্যাক্সিন নিয়ে কোন বাণিজ্য নয়, বিনামূল্যে সকলকে ভ্যাক্সিন দিতে হবে’ দাবিতে বাম গনতান্ত্রিক জোট আগামী ২৫ জানুয়ারি, সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..