প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। করোনাকালে ঝঁুকি নিয়ে আপনারা প্রতিনিয়ত সংবাদ সংগ্রহ ও দেশবাসীর কাছে তুলে ধরছেন এজন্য আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বৈশ্বিক মহামারী করোনায় সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক সামাজিক অবস্থা আজ বিপর্যস্ত। করোনা একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও এর প্রধান আঘাত এসেছে অর্থনীতি ও সামাজিক পরিমণ্ডলে। চীনের উহান থেকে শুরু হওয়া কভিড-১৯ এর আঘাত বাংলাদেশে আসতে সময় লেগেছে তিন মাসের বেশি। গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ২৯২৮ জন। উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে আরো দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ। করোনা মোকাবেলায় প্রথমে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সব প্রস্তুতি আছে বলে বাগাড়ম্বর করা হলেও বাস্তবে এতোটা সময় পেয়েও যে কোন প্রস্তুতিই ছিল না তা এখন উন্মোচিত হয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই আমরা বার বার বলেছিলাম যে বাংলাদেশ এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে এবং আহ্বান জানিয়েছিলাম এই বৈশ্বিক মহামারীকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ সকলের সমন্বয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ নেয়া হোক। কিন্তু আমাদের সেই প্রস্তাব সরকার গ্রহণ করে নাই। আজ প্রমাণ হয়েছে করোনা মোকাবেলায় সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল দিনের ভোট রাতে সীল মেরে ক্ষমতা দখল করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে বিপর্যস্ত করেছে, রাষ্ট্রের সমস্ত কাঠামোকেও দুর্বল, ভঙ্গুর ও দুর্নীতিগ্রস্থ করে ফেলেছে। তারই বহিঃপ্রকাশ এই করোনাকালে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করলো। করোনার সংক্রমণের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্নীতি লুটপাট। সরকারদলীয় জনপ্রতিনিধিদের ত্রাণ চুরি, দ্রব্যমূল্য নিয়ে সিন্ডিকেট, শ্রমিক ছাঁটাই, গার্মেন্টস মালিকদের প্রণোদনা সহায়তা আর শ্রমিকদের সাথে প্রতারণা ও নিপীড়ন, ২৫টি রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধ করে হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই আর জনগণের সম্পদ লুটপাটের জন্য উন্মুক্ত করা সবই চলছে এই করোনা সংকটের মাঝেই।
দেশের স্বাস্থ্য খাত দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত। বাজেটে বরাদ্দ বাড়ে না, দুর্নীতি লুটপাটও কমে না। ফলে স্বাস্থ্যখাত জরাজীর্ণ। স্বাস্থ্যখাতের এই ভগ্নদশা ব্যাপকভাবে উন্মোচিত হয়েছে করোনাকালে। করোনা রোগী ছাড়াও সাধারণ রোগীরা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল ঘুরে রাস্তায় মৃত্যুবরণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশি করে টেস্ট করার কথা বললেও শুরু থেকেই আমাদের সরকার কম টেস্ট করার কৌশল নেয় এবং একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানে টেস্ট করা হয়। সরকারী ডাক্তার, চিকিৎসাসেবা কর্মী, টেকনোলজিস্ট, ওষুধের স্বল্পতা তো ছিলই এখন দেখা যাচ্ছে হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর নাই। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির ১১টি উৎস এবং ২৫ দফা সুপারিশ নিয়ে একটি প্রতিবেদন দুদক দিয়েছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকের কাছে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে। যদিও আমাদের বিবেচনায় তা ছিল দুর্নীতির সামান্য চিত্র মাত্র। কিন্তু আওয়ামী লীগের সরকার দুদকের সেই প্রতিবেদনকেও তোয়াক্কা করে নাই। ফলে সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় নি। দুর্নীতির উৎস বন্ধ হয় নি। দুর্নীতি চলছে দেদারছে, মিঠু সিন্ডিকেট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সহায়তায় হাসপাতালে যন্ত্রপাতি না দিয়ে খালি বাক্স সরবরাহ করে হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। মাস্ক, পিপিই সহ সুরক্ষা সামগ্রীতে ভয়াবহ দুর্নীতির ফল ভোগ করতে হচ্ছে ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসা কর্মীসহ সন্মুখসারির করোনা যোদ্ধাদের এবং দেশের জনগণকে। নকল মাস্ক সরবরাহকারী জেএমআই এর বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এখনও নেয়া হয় নি। রিজেন্ট হাসপাতালে ৬৫০০ এবং জেকেজি তে ১৫০০০ ভূয়া করোনা টেস্টের রিপোর্টের খবরে দেশবাসী আতঙ্কিত। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি ধূলায় লুটিয়ে দিয়েছে এরা। ইটালি বাংলাদেশকে করোনা বোমা আখ্যায়িত করে যাত্রী ফেরৎ পাঠিয়েছে। একদিকে টেস্ট কম, ভূয়া রিপোর্ট, অন্যদিকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর নিয়ে লুকোছাপা করার ঘটনা ক্রমাগত ঘটেই চলেছে। এরই মধ্যে সরকার করোনা টেস্টে ফি নির্ধারণ করেছে জনমত উপেক্ষা করে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো শুরুতে এই করোনা মহামারী মোকাবেলায় এগিয়ে আসেনি। পরে চিকিৎসার নামে জালজালিয়াতি, অতিরিক্ত বিল ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের পকেট কাটতে থাকে। আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল, শাহাবুদ্দিন হাসপাতাল, প্রশান্তি ক্লিনিক, ল্যাব এইড, পপুলার, ইউনাইটেড প্রভৃতি হাসপাতালের এসব খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রী, ভূয়া টেস্ট এবং রিপোর্ট এর কারণে সাহেদ, সাবরিনা, আরিফ, শারমিনসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও এরা যে সব নয়, এদের পৃষ্ঠপোষক, মদদদাতা, রাঘব বোয়ালরা যে ধরা ছেঁায়ার বাইরে রয়ে গেছে এখনও তা সকলেই জানে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রিজেন্টের সাথে চুক্তির কপি তিনি পড়েন নি! এত এত চুক্তি হয় সব কি মন্ত্রীরা পড়ে? ডিজি’র অনুরোধে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ছিলেন, উনি অফিস করেন না, তারপরও নাকি কোন ফাইল জমা থাকে না ইত্যাদি। সরকারি হাসপাতালের যন্ত্রপাতি রিজেন্টকে দেয়া হয় কোন যুক্তিতে? গোটা উত্তরবঙ্গের প্রধান হাসপাতাল রংপুর মেডিকেলে পিপিই দেয়া হয় মাত্র ১০০ পিস অথচ জেকেজিকে দেয়া হয় ১২০০ পিস, এর দায় কি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নেবে না? দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদত্যাগ করেছে। মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দুর্নীতির অভিযুক্ত সচিবকে পুরস্কৃত করে প্রমোশন দিয়ে সিনিয়র সচিব হিসেবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বদলী করা হয়েছে। অতিরিক্ত পরিচালককে ওএসডি করা হয়েছে। নতুন সচিব ও মহাপরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বদলি, পদত্যাগ, ওএসডি বাস্তবে কোন সমাধান নয়, প্রয়োজন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার, বিচার ও শাস্তি দেয়া এবং দুর্নীতির উৎস নির্মূল করা। দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স এর কথা বার বার বলা হলেও বাস্তবে জিরো টলারেন্স মানে যে দুর্নীতিবাজদেরই প্রশ্রয় দেয়া সরকারের আচরণে জনগণ তাই দেখে আসছে। কারণ ইতিপূর্বে ক্যাসিনো সম্রাটরা গ্রেপ্তার হলেও হাসপাতালের ক্যাবিনে তারা রাজার হালে রয়েছে। তারা যাদের নাম বলেছিল বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল, তাদের কাউকেই আর ধরা হয় নি, এমনকি ঐ ব্যাপারে এখন আর কোন আলোচনাই শোনা যায় না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক এসেই বললেন, ‘দুর্নীতির দায় একা সরকারের নয়’। তাহলে দায় কার কার? যে জনগণ দুর্নীতির ভুক্তভোগী তাদের কাঁধেই কি এখন দায় চাপানো হবে? কথায় আছে মর্নিং শোজ দি ডেজ। ডিজি সাহেবও যে শুরুতেই তোষামোদির ঢাক এমনভাবে পিটালেন তাতে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ার চিৎকার আর শোনা যাবে কিনা সন্দেহ।
বাম গণতান্ত্রিক জোট মনে করে করোনা মোকাবেলায় মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, আইইডিসিআরসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতা ও সীমাহীন ব্যর্থতা শুরু থেকেই লক্ষ্য করা গেছে। এর দায়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও অপরাপর কর্মকর্তাদের অবিলম্বে অপসারণ ও বিচারের আওতায় আনা দরকার এবং স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা লুটপাটের মূলৎপাটনের জন্য শুধু অপসারণ নয় সিস্টেম ও ব্যবস্থা পাল্টানো জরুরি। কারণ করোনা সারা বিশ্বে দেখিয়েছে পঁুজিবাদী মুনাফার সমাজ এই ভাইরাস মোকাবেলায় ব্যর্থ। কারণ তারা মুনাফা বুঝে মানুষ বুঝে না। ফলে করোনা সংক্রমণসহ সকল প্রকার প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় সমাজতন্ত্রই যে সমাধান তা করোনা মহামারী চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। কিউবা, ভিয়েতনামসহ সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো ও কেরালার বামপন্থী সরকার প্রমাণ করেছে সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয় কিভাবে।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
করোনার এই দুর্যোগের মধ্যেই বন্যার ভয়াবহতা বাড়ছে। বাংলাদেশে বন্যা হয় প্রাকৃতিক কারণে কিন্তু বন্যার দুর্ভোগ বাড়ে রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা, ভুল নীতি, দুর্নীতি লুটপাটের কারণে। উত্তরের জনপদে বন্যার পানিতে মানুষ, ফসল, গৃহপালিত প্রাণী ভাসছে কিন্তু সরকারের দৃশ্যমান কোন ত্রাণ তৎপরতা চোখে পড়ছে না। এর আগে করোনা ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি আমরা দেখেছি কিন্তু দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায় নাই। শুধুমাত্র কতিপয় বিনা ভোটের জনপ্রতিনিধিদের সাময়িক বরখাস্ত করা ছাড়া। এবার বন্যার দুর্যোগকে যেন ত্রাণ চুরির সুযোগে পরিণত করা না হয় সে ব্যাপারে আগে ভাগেই পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। একই সাথে বন্যাত্তোর কৃষি পুনর্বাসনসহ সকল বন্যাদূর্গতদের পুনর্বাসনের দাবি জানাই।
করোনা, বন্যা, দুর্নীতিকে ছাপিয়ে আর একটি দিক প্রধান হয়ে উঠেছে সরকারের দমন পীড়ন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে, ত্রাণ চুরির বিরুদ্ধে কথা বললে, পাট কল বন্ধের প্রতিবাদ করলে, পত্রিকায় এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দমন পীড়ন নেমে আসছে। সাংবাদিক কাজলসহ অনেকেই এখনো কারাগারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ন্যূনতম রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও সরকার প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায় কোন ধরণের প্রতিবাদ কর্মসূচি করতে দিচ্ছে না স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
করোনা পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেয়ার মত জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজ করেছে সরকার। স্কপসহ শ্রমিক সংগঠনগুলো হিসেব দিয়ে বলেছিল মাত্র ১২০০ কোটি টাকা খরচ করলে পাটকলগুলো আধুনিকায়ন করা যেত কিন্তু ৫০০০ কোটি টাকা খরচ করে শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ড শেক এর নামে ছাঁটাই আর পাটকলের ২৫০০০ কোটি টাকার সম্পদ লুটপাটের আয়োজন করেছে সরকার। সরকারের ভুল নীতি, মন্ত্রণালয় ও বিজিএমসি’র দুর্নীতির ফল ভোগ করতে হচ্ছে শ্রমিক ও দেশবাসীকে। খুলনার ২ জন পাটকল শ্রমিক নেতা নূরুল ইসলাম ও অলিয়র রহমানকে গ্রেপ্তার করে জেলে পুরা হয়েছে। শ্রমিকদের গ্রেপ্তার নির্যাতন ও জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। সরকারি প্রণোদনা পাওয়ার পরও গার্মেন্টস শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কলকারখানা পরিদর্শক অফিসের হিসেবে মতে প্রায় ২৬ হাজারের বেশি শ্রমিক ছঁাটাই হয়েছে, বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক, বীমা, প্রাইভেট হাসপাতাল, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকেও লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়ছে। বিদেশ থেকেও কয়েক লাখ প্রবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়ে দেশে ফিরতে শুরু করেছে। ফলে এক ভয়াবহ সংকট আমাদেরকে তাড়া করছে। অথচ এ বিষয়ে সরকারের কোন মনযোগ দেখা যাচ্ছে না।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে শরীক দলসমূহ ও গণসংগঠনের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই জনগণকে সচেতন করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি ও বিতরণ, জিবাণুনাশক স্প্রে করা, ত্রাণ বিতরণ, কমিউনিটি কিচেনে খাবার সরবরাহ, মানবতার বাজার, ফ্রি এম্বুলেন্স সার্ভিস, চিকিৎসা প্রদান, লক ডাউন এলাকায় খাবার-ওষুধ সরবরাহ, অক্সিজেন ব্যাংকের মাধ্যমে সঙ্কটাপন্ন রোগীদের সার্ভিস দেয়া ইত্যাদি কাজ জনগণের পাশ থেকে সাধ্যমত করে আসছে। বন্যার সময়েও বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ, লঙ্গরখানা ইত্যাদি কার্যক্রম ইতিমধ্যে চলছে। করোনা সংক্রমণের সময়ে যেখানে ঘরে থাকার কথা, সেখানে ঝঁুকি মাথায় নিয়েও সরকারের নানা দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়ম এর বিরুদ্ধে রাজপথে স্বাস্থ্য বিধি মেনে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। পাটকল বন্ধের প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ, অনলাইন মতবিনিময় সভা এবং সর্বশেষ বঙ্গভবন থেকে গণভবন পর্যন্ত মানব প্রাচীর সহ দেশব্যাপী কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাম গণতান্ত্রিক জোট করোনা দুর্নীতি, করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমজীবীদের সহায়তায় সরকারের ব্যর্থতা, খাদ্য ও অর্থ বিতরণে সীমাহীন দুর্নীতি, বন্যা মোকাবিলায় উদাসীনতা ও বন্যা দুর্গতদের অপর্যাপ্ত সহায়তার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার অঙ্গীকার ঘোষণা করছে। সেই সাথে দাবি তুলছি:-
করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অবিলম্বে অপসারণ ও শাস্তি দিতে হবে।
স্বাস্থ্যখাতের ঠিকাদার-ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও তার হোতাদের গ্রেপ্তার বিচার করতে হবে।
করোনা টেস্টের ফি বাতিল করতে হবে। ন্যূনপক্ষে প্রতি জেলায় করোনা টেস্টের ল্যাব প্রতিষ্ঠা ও সকল নাগরিকের করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা বিনামূল্যে করতে হবে। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে, বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করে করোনা চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।
বন্যার্তদের পর্যাপ্ত ত্রাণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন করতে হবে।
রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। বন্ধ বা পিপিপি নয়, আধুনিকায়ন করে পাটকল চালু রাখতে হবে।
গার্মেন্টসসহ সকল প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক ছঁাটাই বন্ধ করতে হবে। ঈদের আগেই সকল শ্রমিকদের বকেয়াসহ জুলাই মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ করতে হবে।
৬ কোটি দরিদ্র, কর্মহীন মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করতে হবে।
নিবর্তানমূলক কালো আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিক কাজল, লেখক মোস্তাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট কিশোর, এ্যাক্টিভিস্ট দিদার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিরাজুমমুনীরা ও খুলনার পাটকল শ্রমিক নেতা নূরুল ইসলাম, অলিয়ার রহমানসহ সকল বন্দিদের ঈদের আগেই নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন রুখে দঁাড়াও, ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হও।
ঈদের পরে উপরোক্ত দাবিসহ সরকারের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় কনভেনশনের মাধ্যমে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে সকল বাম প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তিবর্গকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ ও জনগণকে রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। সাংবাদিক বন্ধুগণ ধৈর্য্য ধরে বক্তব্য শোনার জন্য আবারো আপনাদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।
শুভেচ্ছান্তে
বজলুর রশীদ ফিরোজ
সমন্বয়ক
বাম গণতান্ত্রিক জোট
কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ
Login to comment..