Revolutionary democratic transformation towards socialism

ঘোষণা ও কর্মসূচি (৭, ৮ ও ৯ মার্চ ১৯৯৯-এ অনুষ্ঠিত সপ্তম পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত এবং ১১, ১২ ও ১৩ অক্টোবর ২০১২ ঢাকায় অনুষ্ঠিত দশম কংগ্রেস পর্যন্ত সংশোধিত)

সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন সাধন করুন বাংলাদেশের ইতিহাস শ্রমে, সৃজনে, বিদ্রোহে ও স্বপ্নে বর্ণিল এক ইতিহাস। সুপ্রাচীনকাল থেকে এদেশের জনগণ ও মেহনতি মানুষ শ্রমে ও মেধায়, কর্মে ও সাধনায় যে সভ্যতা নির্মাণ করেছিল, তার একটি নিজস্ব সমৃদ্ধি ছিল। শস্য-শ্যামলা বলে এ দেশের খ্যাতি ছিল। বাংলার কারুশিল্প পণ্যের খ্যাতি ও বাণিজ্য বিস্তৃত ছিল নিকটপ্রাচ্য এমনকি ইউরোপ পর্যন্ত। লোক সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের পাশাপাশি বাঙালি মনীষীরা সৃষ্টি করেছিলেন শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীতের ঐশ্বর্যময় ভান্ডার। অথচ এই সমৃদ্ধির নির্মাতা মেহনতি মানুষ ও জনগণ শতাব্দীর পর শতাব্দী শোষণ-বঞ্চনায় নিষ্পেষিত হয়েছে। এদেশের সকল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও রাজনৈতিক-সামাজিক সংগ্রামের ধারায় গড়ে উঠেছে এক উজ্জ্বল মানবিক, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ। প্রায় আড়াই শত বছর আগে সমগ্র উপমহাদেশ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির কবলে পড়ে। ব্রিটিশ শাসকদের স্বার্থে আরোপিত ধারা আমাদের দেশসহ সমগ্র উপমহাদেশের স্বাভাবিক অগ্রগতি ও স্বাধীন বিকাশের পথ রুদ্ধ করে। জনগণের উপর তীব্র শোষণ ও দমননীতি চালিয়ে এদেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যাওয়া হয়। ব্রিটিশ শাসকরা মানবিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতি পায়ের তলায় পিষ্ট করে আমাদের দেশের উপর ঔপনিবেশিক শোষণের স্টিম রোলার চালায়। একদিকে তারা এ অঞ্চলের প্রাচীন এশীয় সমাজের ধ্বংস সাধন করে, অপরদিকে পাশ্চাত্য সমাজের ঔপনিবেশিক পশ্চাৎভূমি হিসেবে তার বৈষয়িক ভিত্তির প্রতিষ্ঠা করে। এদেশের মানুষ প্রথম থেকেই জুলুমবাজ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম গড়ে তোলে। সাঁওতাল, গারো, হাজং প্রভৃতি আদিবাসী বিদ্রোহ, সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ, ওয়াহাবি-ফরায়েজি প্রভৃতি ধর্মীয় ঝান্ডায় প্রবল রাজনৈতিক সশস্ত্র সংগ্রাম, ঊনিশ শতকে শিক্ষিত মধ্যশ্রেণীর নবজাগরণ, সিপাহী বিদ্রোহ, জাতীয় রাজনৈতিক আন্দোলন, অগ্নিযুগের সশস্ত্র জাতীয় বিপ্লবী আন্দোলন, প্রজা আন্দোলন, সংগঠিত শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-যুব ও নারী আন্দোলন ব্রিটিশ শাসনের ভিতকে কাঁপিয়ে তোলে। দীর্ঘকালব্যাপী উপমহাদেশের জনগণের তীব্র সংগ্রাম, বিশ্ব সমাজতন্ত্রের উদ্ভব ও উপমহাদেশে কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবাধীন কৃষক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর জঙ্গি আন্দোলন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নসহ মিত্রশক্তির হাতে নাজী জার্মানি ও জাপ সমরবাদের পরাজয়ের বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ভারত উপমহাদেশে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে। অবশ্য ব্রিটিশ পৃষ্ঠপোষকতায় সাম্প্রদায়িকতা ও বিভেদের রাজনীতির পরিণতিতে উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তান এ দু’টি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। পাকিস্তানি আমলেও দেশবাসীর ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় নি। বাঙালি জাতি পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদনির্ভর একচেটিয়া ধনিক, বৃহৎ ভূস্বামী, সামরিক-বেসামরিক আমলা ও সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রভাবিত শাসকদের ঔপনিবেশিক ধরনের শাসন-শোষণের শিকার হয়। দেশের পশ্চাৎপদতা অব্যাহত থাকে। ব্রিটিশ শাসন অবসানের পরেই পাকিস্তানে দৃঢ় হয় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী প্রভাব। বাংলাদেশের মেহনতি মানুষের সৃষ্ট সম্পদ স্থানান্তরিত হতে থাকে পাকিস্তান ও সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহে। পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালির জাতীয় বিকাশের আকাঙ্ক্ষাকে স্বৈরাচারী পন্থায় দমন ও জাতিগত শোষণ-পীড়নের নীতি অনুসরণ করে। তারা সাম্প্রদায়িকতা, স্বৈরাচার ও কমিউনিস্ট বিরোধিতাকে রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত করে। পাকিস্তানি শাসকদের এই জাতিগত শোষণ, দমন-পীড়ন ও প্রতিক্রিয়াশীল নীতির বিরুদ্ধে দেশবাসী মাতৃভাষার অধিকার, গণতন্ত্র ও জাতীয় বিকাশের দাবিতে তীব্র সংগ্রাম গড়ে তোলে। তেভাগা আন্দোলন, টংক, নানকার প্রভৃতি প্রথার বিরুদ্ধে সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহ, নাচোলে আদিবাসীদের বিদ্রোহ, ’৪৮-এর ভাষা সংগ্রাম ও মুক্তবুদ্ধির সংগ্রাম, ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফা সংগ্রাম, পরবর্তীতে ১১ দফা আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, শ্রমিক-কৃষক-বুদ্ধিজীবী-নারী-ছাত্র-জনতার বিভিন্ন গণসংগ্রাম, ’৭০ ও ’৭১-এর অসহযোগ আন্দোলন, বাঙালির ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য সুরক্ষার সংগ্রাম, গণতন্ত্র, স্বাধিকার ও সাধারণ মানুষের স্বার্থে প্রগতিশীল বিকাশের দাবিতে আন্দোলন, সাম্রাজ্যবাদী শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা অসংখ্য গণসংগ্রাম পাকিস্তানের ভিতকে নাড়িয়ে দেয়। অবশেষে ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের রক্ত ও কোটি মানুষের আত্মত্যাগের

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..