বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম আজ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শনিবার এক বিবৃতিতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে দেয়া প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ঢাকা সিটিতে জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন ও সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই নির্বাচনের প্রকাশিতব্য ফলাফল জনগণ গ্রহণ করবে না।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল জনগণের মধ্যে নানাভাবে ভয়-ভীতি সঞ্চার করায় অধিকাংশ মানুষ ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট প্রদান করতে পারেনি। নগরীতে ভোটের নামে আরেকবার নতুন ধরনের প্রহসন সংগঠিত হতে দেখল ঢাকাবাসী।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, অধিকাংশ কেন্দ্রে ভয়ের পরিবেশ এবং সরকারি দলের দখলদারিত্ব সৃষ্টি করে জনমনে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছিল, যাতে জনগণ ভোট কেন্দ্রে আসতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। ভোট কেন্দ্রের চতুর্দিকে অবাঞ্ছিত ব্যক্তিবর্গ ও সরকার দলীয় লোকজনের উপস্থিতিও মানুষকে ভোট বিমুখ করে তোলে। এজন্যও মানুষ ভয়ে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়নি। বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের ভোটার নিশ্চিত হওয়া ছাড়া অন্যদের তাড়িয়ে দেয় সরকার দলীয় সমর্থকরা। এমনকি ভোট কেন্দ্রের গোপন কক্ষে ঢুকে, ভোটারদের ভোটটিও দিতে না দিয়ে, সরকার দলীয় কর্মীরা নিজেরাই সে ভোট দেওয়ার কাজটিও সম্পন্ন করে। এধরনের অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোট প্রদানে ‘গোপনীয়তা’ বলে কোন কিছু রক্ষা করা হয়নি। অধিকাংশ কেন্দ্রে সরকার দলীয় পোলিং এজেন্ট ছাড়া অন্যদের ঠাই হয়নি।
ঢাকা উত্তরে অনেক কেন্দ্রে কাস্তে মার্কার সমর্থকদের ভোটদানে বাধা, হুমকি ও জোর করে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্ট, গেটে ও ভোট কেন্দ্রে থাকা নেতাকর্মীরা।
সকাল ৮টায় উত্তরার দক্ষিণখানে সিপিবি’র কাস্তে মার্কার প্রার্থীর সমর্থক, কর্মী আলমগীরকে অপহরণ করার চেষ্টা করা হয়। ভোটদানে বাধা দেওয়া হয়। তেজগাঁও কাস্তে মার্কার ব্যাজধারীদের হুমকি দেওয়া হয়। সকাল ৯টায় পূর্ব রাজা বাজার রোটারী কেন্দ্রে কাস্তে মার্কার সমর্থককে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য জোর করে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্ট।
সকাল ১১টায় মনিপুর স্কুল (গার্লস সেকশন) এর পরিচিত কাস্তে মার্কার ভোটার মাহমুদা হাই (ভোটার নং ২৬১০৮৫১২৫৩৭১) এর ভোট জোর করে আওয়ামী লীগের সমর্থক নৌকায় ভোট দিয়ে বলেন, ‘আপনার ভোট দেয়া শেষ’। (এ বিষয়ে কাস্তে মার্কার মেয়রপ্রার্থী লিখিত অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি)। ভোট কেন্দ্রে কিছু মানুষ উপস্থিত হলেও ইভিএম নিয়ে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এবং নিজেদের দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখতে ভোটের গোপনীয়তা চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একের পর এক নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন কমিশন ছিল নির্বিকার। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জনৈক নেতা ভোটের দিন কেন্দ্র দখল ও নিয়ন্ত্রণে রাখার যে কথা বলেছিল, সে বিষয়েও নির্বাচন কমিশনকে ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। এসব ঘটনা নতুন প্রজন্মের ভোটারদেরকেও ভোটদানে নিরুৎসাহিত করে তুলেছিল। যা পুরো ভোট ব্যবস্থাকেই ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এ অবস্থা বহাল থাকলে, বারবার ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণ ভবিষ্যতে আরও ভোটবিমুখ হয়ে উঠবে। যা গণতন্ত্রকে আরও হুমকির মুখে ফেলবে। নেতৃবৃন্দ সচেতন দেশবাসীকে নিজেদের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সিপিবি চলমান দুঃশাসন, গণতন্ত্র ও সামগ্রিক ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামে সামনের কাতারে থেকে লড়াই চালিয়ে যাবে।
Login to comment..