
## ডেঙ্গু নিয়ে বাণিজ্য বন্ধ, বন্যাদুর্গতদের পর্যাপ্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন
দেশের চলমান ডেঙ্গু মহামারি পরিস্থিতি, বন্যা ও বন্যাত্তোর পুনর্বাসন পরিস্থিতি এবং ডেঙ্গু ও বন্যা মোকাবিলায় সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা সম্পর্কে আজ ৭ আগস্ট, পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সংবাদ সম্মেলনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত দাবি জানান।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদ (মার্কসবাদী)’র পরিচালনা কমিটির সদস্য মানস নন্দী, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মুনীরউদ্দিন পাপ্পু ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয় জুন মাস থেকেই প্রকোপ আকারে এডিস মশার আক্রমণে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রথমে রাজধানী ঢাকায় এবং পরবর্তীতে সারাদেশে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। প্রতিদিনই কোন না কোন হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর খবর আসছে। সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুসারে আজ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১১০ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। এদের মধ্যে ১ জন সিভিল সার্জন, ২ জন নারী চিকিৎসক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী আদিবাসী ছাত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের স্ত্রী, পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপির স্ত্রীও রয়েছে। কিন্তু ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদ্বয় ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রথমে ডেঙ্গুর আক্রমণকে গুজব বলেছেন, আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যাকে কমিয়ে দেখিয়ে তাদের অবহেলা ও দুর্নীতিকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ডেঙ্গুর ভয়াবহতা এতোই বেশি যে, একে কোনোভাবেই ঢেকে রাখা সম্ভব হয়নি। তারপরও সরকারি ভাষ্যে আক্রান্ত ও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হচ্ছে। মার্চ মাসেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সিটি কর্পোরেশনকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এবছর বাড়বে বলে সতর্ক করা হয়েছিল। তারপরও সিটি কর্পোরেশন এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। ঢাকায় হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ডেঙ্গু সনাক্তকরণ ও চিকিৎসায় হিমসিম খাচ্ছে। আর এ সুযোগে বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। ডেঙ্গু

সনাক্তকরণ কীট এর কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ১৪০ টাকার টেস্টিং কীট ৪০০ টাকায় বিক্রি করে মুনাফা লুটছে। সরকার, সিটি মেয়রেরা ডেঙ্গু রোধে কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তাতে লজ্জা বোধ ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করার বদলে জনগণের সাথে রসিকতা করছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, দেশের ৩১ জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। দেড় লক্ষ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। বীজতলা ধ্বংস হয়েছে। গোলার ধান-চালও আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার্তদের পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতা লক্ষ করা গেছে। ইতিমধ্যে বন্যাদুর্গত এলাকার পানি কিছুটা নামলেও দুর্ভোগ কমেনি। পানি নামার সাথে সাথে রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় বানভাসী মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ, পুনর্বাসন ও চিকিৎসা জরুরি হয়ে পড়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকার ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ তারিখ রাতেই পুলিশ ও প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যালটে সীল মেরে ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। ফলে জনগণের ভোটে যেহেতু এই সরকার ক্ষমতায় যায়নি তাই জনগণের প্রতি তারা কোন দায় বোধ করছে না। এ অবস্থার হাত থেকে দেশ ও দেশের জনগণকে রক্ষায় প্রয়োজন জনগণের ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন ও শাসক শ্রেণির বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থান।
আগামী দিনের কর্মসূচি
সংবাদ সম্মেলনে নিম্নলিখিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
১) আগামীকাল ৮ আগস্ট সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধের দাবিতে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ৭ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করা হবে।
২) আগামী ৯ ও ১০ আগস্ট ঢাকায় এবং সারাদেশে বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হবে। ঢাকা ৯ ও ১০ আগস্ট সকাল ১১টায় পল্টনস্থ সিপিবি কার্যালয় থেকে এই প্রচার কার্যক্রম শুরু করা হবে।
৩) ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও বন্যার্তদের পর্যাপ্ত ত্রাণ-পুনর্বাসন ও চিকিৎসার দাবিতে ২০ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে দাবি পক্ষ পালন করা হবে। এ সময় জেলা-উপজেলাসহ সর্বত্র সভা-সমাবেশ, পদযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।
৪) ভোট ডাকাতির সংসদ বাতিল করে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধিনে দ্রুত সংসদ নির্বাচনের দাবিতে এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন রুখে দাঁড়ানো, জনগণের ঐক্য জোরদার ও বাম বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে সারাদেশে বিভাগীয় শহর ও জেলা সদরে জনসভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।