Revolutionary democratic transformation towards socialism

সিপিবি’র ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কমিউনিস্ট ঐক্যের ডাক


বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন পার্টির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, সহিদুল্লাহ চৌধুরী, ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, ভাষাসংগ্রামী কামাল লোহানী ও পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম। সভা পরিচালনা করেন পার্টির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন। কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম তাঁর সভাপতির বক্তব্যে শুরুতেই ১৯২০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যে সকল কমরেড, শুভানুধ্যায়ীরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ইতিহাস স্বাক্ষী দেয় সবাইকে ম্যানেজ করা যায় কিন্তু শত্রুরাও জানে কমিউনিস্টদের ম্যানেজ করা যায় না। তিনি বলেন, দেশে চলছে ভয়ংকর পরিস্থিতি। ফ্যাসিবাদের লক্ষণগুলো স্পষ্ট। জনসমর্থনহীন সরকার ‘নির্বাচনকে রাষ্ট্রায়ত্বকরণ’ করেছে। এর অভিঘাত রাষ্ট্রের মত শাসকদলের উপরও পড়বে। তিনি বলেন, শাসকগোষ্ঠীর সৃষ্ট নৈরাজ্য ফ্যাসিবাদকে বিস্তৃত করবে। তিনি আরও বলেন বর্তমান সরকার উন্নয়নের নামে ৯৯% মানুষের উপর নিপীড়নের যাঁতাকল চাপিয়ে দিয়ে ১% কে লাভবান করছে। বর্তমানে দেশে যে রাজনৈতিক শূন্যতা চলছে সে শূন্যতা বাম কমিউনিস্টদের পূরণ করতে হবে। ডবল মার্চ করে পার্টি ও গণআন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। তিনি সকল কমিউনিস্টদের কাছে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। পার্টির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। কিন্তু কমিউনিস্টরা পাকিস্তান আন্দোলনের জালে জড়িয়ে পড়েনি। কমিউনিস্টরা সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশ ভাগের বিরুদ্ধে আবস্থান নিয়েছিল। সেকারণে পাকিস্তানের ২৩ বছর কমিউনিস্টদের নিষ্ঠুর নিপীড়ন ভোগ করতে হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, বিপ্লবে কোন ভবিষ্যতবাণী কাজ করে না। বিপ্লব এগিয়ে যাবে আঁকা-বাঁকা পথ ধরে। জনগণের সম্পৃক্ততা বিপ্লবের পথ নির্ধারণ করে। আজকের বাস্তবতায় কমিউনিস্টদের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে জন সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা। তিনি কমিউনিস্ট পার্টিকে সকল

বামপন্থীদের উদারভাবে সঙ্গে নিয়ে বিপ্লবের পথ নির্মাণ করার আহ্বান জানান। পার্টির সাবেক সভাপতি কমরেড সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ক্ষমতাসীনরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা ফ্যাসিবাদের ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করছে। বামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। কমিউনিস্ট ও বাম-প্রগতিশীলদের ঐক্য গড়তে কমিউনিস্ট পার্টিকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। ঐক্য ন্যাপের সভাপতি জননেতা পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসে সিপিবি ও কমিউনিস্টদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূূর্ণ। সংঘঠিত কৃষক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে কমিউনিস্টদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐক্য গড়া খুবই জরুরি। কমিউনিস্ট পার্টিকে এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান এ অঞ্চলে কমিউনিস্ট আন্দোলনের একশ বছরের এবং কমিউনিস্ট পার্টির ৭১ বছরের ইতিহাস বর্ণনা করে এ দেশের জাতীয় ও শ্রেণি মুক্তির আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকার ভুয়সী প্রশংসা করেন। আগামী দিনের মুক্তি আন্দোলনে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সর্বাত্মক ভূমিকা কামনা করেন। ভাষাসংগ্রামী কামাল লোহানী জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে কমিউনস্টদের ভূমিকা বর্ণনা করে বলেন, গত ১০০ বছরের এ অঞ্চলে কমিউনিস্টরা জাতির প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রেখেছে। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে রণক্ষেত্রে যেমন লড়াই করেছে তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায় সর্বাত্মক ভূমিকা রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কমিউনিস্টরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চলমান সময়ের কর্তব্য পালনের জন্য পার্টির নেতাকর্মীদের জোরদার সাংগঠনিক কর্মকা- ও গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। আলোচনা সভার শুরুতে পার্টির লাল পতাকা উত্তোলন করা হয়। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী গণসংগীত পরিবেশন করে। আলোচনা সভা মঞ্চে ‘একতা অনলাইন টিভি’র পরীক্ষামূলক সম্প্রচার উদ্বোধন করেন পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..