প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ
আমাদের শুভেচ্ছা নিন।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনে আমরা আপনাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।
আপনারা অবগত আছেন যে, আগামী ৩১ অক্টোবরের পর যেকোনো সময় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা বলা হয়েছে। অথচ দেশে এখনও পর্যন্ত অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ বলতে কিছু নেই। গণতান্ত্রিক ও মুক্ত পরিবেশে প্রার্থী হওয়ার ও নিরাপদে ভোট প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ন্যূনতম সুযোগও এখন দেশে নেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরো একটি একতরফা নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন মিলে গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর গণঅনাস্থা তৈরি হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনকে টাকার খেলায় পর্যবসিত করা হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের সুযোগকেও নানাভাবে রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারের অনুগত ভূমিকা পালনে নিয়োজিত থাকায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। গত কমাসে অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ভোট জালিয়াতি, প্রশাসনিক কারসাজি, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, সুচতুর কায়দায় কেন্দ্র দখল, সন্ত্রাস, মাস্তানি, হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন ও সীমাহীন অর্থব্যয়ের মধ্য দিয়ে সমগ্র নির্বাচনকে অর্থহীন ও অকার্যকর করে তোলা হয়েছে। “নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের” এক অভিনব মডেলও চালু করা হয়েছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে চর দখলের মতো সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রায় সবকটি কেন্দ্র দখল এবং এর প্রতিবাদে সমস্ত বিরোধী প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করলেও জালিয়াতির এই নির্বাচনও বাতিল করা হয়নি। বেশুমার অর্থব্যয় ও নির্বাচন আচরণবিধির বেপরোয়া লংঘনের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কার্যকর কোনো ভূমিকাই গ্রহণ করতে পারেনি।
আপনারা জানেন যে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন একটা ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণা করেছিল এবং সে অনুযায়ী রাজনৈতিক দলসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সঙ্গে কয়েকমাস ধরে সংলাপের আয়োজন করেছিল। এসব সংলাপে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) থাকা রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের অগণতান্ত্রিক শর্তাবলী বাতিল, প্রার্থীর জামানত ৫ হাজার টাকা ও নির্বাচনী ব্যয় ৩ লক্ষ টাকা নির্ধারণ, নির্বাচনে টাকার খেলা, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িক প্রচারণা ও প্রশাসনিক কারসাজি বন্ধ, ইভিএম চালু করার তৎপরতা বন্ধ, দল ও প্রার্থীদের মধ্যে সমান সুযোগ তৈরি, ‘না’ ভোটের বিধান চালু, অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা গ্রহণ, ভোটারের ইচ্ছায় জনপ্রতিনিধি প্রত্যাহার এবং সর্বোপরি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালুসহ গোটা নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, যার অনেকগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনও একমত হয়েছিলেন। তখন বলা হয়েছিল, সব মতামতের ভিত্তিতে আরপিও’র সংশোধনীসহ নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আমরা ক্ষোভের সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, সুপারিশসমূহের ভিত্তিতে আরপিও’র অগণতান্ত্রিক ধারাসমূহ বাতিল করে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে এমনকি একজন নির্বাচন কমিশনারের প্রতিবাদের মুখেও নির্বাচনে বিতর্কিত ও স্বচ্ছতাহীন ইভিএম ব্যবস্থা যুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া
হয়েছে। সরকারি দলকে আগাম বাড়তি সুবিধা দেবার জন্য অর্থাৎ নির্বাচনে ডিজিটাল কারচুপির সুযোগ করতেই যে নির্বাচন কামশনের এই উদ্যোগ, এ বিষয়ে দেশবাসীর কোনো সন্দেহ নেই।
সাংবাদিক বন্ধুগণ
যেকোনোভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য অতীতে জনগণের গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার-ভোটাধিকার নিয়ে বারবার ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। এই সমুদয় তৎপরতার মধ্য দিয়ে এবং গত ৪৭ বছরের অভিজ্ঞতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের যেমন কোনো সুযোগ নেই, তেমনি সরকার অনুগত বর্তমান নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনের যাবতীয় অগণতান্ত্রিক ধারা পদ্ধতি বহাল রেখে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এই প্রেক্ষিতে আমরা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের প্রস্তাব করেছি। এই জন্যে আমরা ধারাবাহিক আন্দোলনও অব্যাহত রেখেছি। গত ৫ আগস্ট ২০১৮, জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় আমরা আমাদের সংস্কার প্রস্তাব বিস্তারিত তুলে ধরেছি। আমাদের সংস্কারের প্রস্তাবের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিম্নরূপÑ
# সরকার ও সরকারি দলের অনুগত ভূমিকা পালন রোধ এবং নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠন কর।
# তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে ও বর্তমান সরকার পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠনের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি কর।
# সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালুসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার কর।
# নির্বাচনে টাকার খেলা, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িক প্রচারণা ও প্রশাসনিক কারসাজি বন্ধ কর।
# রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের অগণতান্ত্রিক শর্ত বাতিল কর।
# প্রার্থীর জামানত ৫ হাজার টাকা ও নির্বাচনী ব্যয় ৩ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করে কঠোরভাবে তা মেনে চলতে বাধ্য কর।
# স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ১% ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের বিধান বাতিল কর।
# ইভিএম চালু ও ডিজিটাল ভোট ডাকাতির পাঁয়তারা বন্ধ কর।
# অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান চালু কর।
# প্রার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক টিআইএন ও বাধ্যতামূলক সিডি ক্রয় প্রত্যাহার কর।
# ভোটারের ইচ্ছায় জনপ্রতিনিধি (সংসদ সদস্য) প্রত্যাহার করা ও ‘না’ ভোটের বিধান চালু কর।
উপরোক্ত গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলনের নিম্নোক্ত কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
* আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করা হবে। বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জমায়েত শেষে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে এই ঘেরাও মিছিল শুরু হবে।
* একই দিন জেলা পর্যায়ে সকালে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে।
আন্দোলনের এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে আমরা আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য আবারও আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
Login to comment..