Revolutionary democratic transformation towards socialism

সংবাদ সম্মেলনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দ বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফল প্রত্যাখান ভোট ডাকাতির নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি

বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফল প্রত্যাখান, ভোট ডাকাতির নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচন ও নির্বচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি বাম গণতান্ত্রিক জোটের। আজ ২ আগস্ট ২০১৮, সকাল ১১টায়, মৈত্রী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাম জোটের নেতৃবৃন্দ এ কথা জানিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ, গত ৩০ জুলাই তিন সিটি নির্বাচন এবং এর পূর্বে অনুষ্ঠিত খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতৃবৃন্দ আরও বলেন বর্তমান দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সুযোগ নেই। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ, জনগণের ম্যানডেটবিহীন জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ করে কমিশন পুনঃগঠনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত আজকের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোট এর বর্তমান সম্বন্বয়ক কমরেড সাইফুল হক। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাম গণতান্ত্রিক জোট এর শীর্ষ নেতা বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, বাসদ (মার্কসবাদী) এর কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ-এর অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বাসদ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. মনিষা চক্রবর্তী, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সিপিবি মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাড. এ কে আজাদ, সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সিপিবি-বাসদ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবু জাফর, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে গণসংহতি আন্দোলন মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাড. মুরাদ মোর্শেদ, খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সিপিবি-বাসদ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবু ও কাজী রুহুল আমিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সংযুক্তি : সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সম্পর্কে বাম গণতান্ত্রিক জোট আহুত সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে আমাদের শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। ৩০ জুলাই ২০১৮ অনুষ্ঠিত বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য এবং আমাদের জোটভুক্ত দলসমূহের মেয়র প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনে আমরা আপনাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আপনারা অবগত আছেন যে সীমাহীন অনিয়ম, জালিয়াতি, ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, বিরোধী দলীয় পোলিং এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, কেন্দ্র থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়া, সন্ত্রাস, মাস্তানী, গুণ্ডামী, মেয়র প্রার্থীর উপর হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে গেল ৩০ জুলাই বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনী মহড়া শেষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অঙ্গীকার করেছিল যে খুলনা ও গাজীপুরের তুলনায় এই তিনটি সিটি কর্পোরেশনে ভাল নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন তাদের কথা রাখেনি। এসব সিটি কর্পোরেশনেও আবার নির্বাচনী তামাশা অনুষ্ঠিত হল। নির্বাচন কমিশন ভোটারদের নিরাপত্তা দূরের কথা বরিশালে বাসদ এর মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তীর নিরাপত্তা পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি। বরিশাল সদর গার্লস স্কুল কেন্দ্রে সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নৌকা মার্কায় জাল ভোট হাতে নাতে ধরে ফেলায় নৌকার ব্যাজ পড়া সন্ত্রাসীদের হামলায় ভোট কেন্দ্রেই তিনি আহত হন। রিটার্নিং কমকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে এই সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। বরং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চর দখলের মত প্রায় সকল ভোট কেন্দ্রই সরকার দলীয় প্রার্থীর সমর্থকেরা দখল করে নেয়। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে সকাল ১০/১১টার পর থেকে বরিশালে মেয়র প্রাথীদের ব্যালট বই পাওয়া যায়নি। ব্যালট বই এর উপর দখল নিয়ে নিয়েছিল সরকার দলীয়রা। দায়িত্বরত প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় বরিশালবাসীকে ভোটের নামে এই প্রহসন দেখতে হল। বাসদ প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী, সিপিবি প্রার্থী এ. কে. আজাদসহ অপরাপর মেয়র প্রার্থীরা লিখিতভাবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে নির্বাচন বাতিল করে পুননির্বাচনের দাবি জানালেও তিনি তা আমলে নেননি। রাজশাহীতে গণসংহতি আন্দোলন এর মেয়র প্রার্থী এ্যাড. মুরাদ মোর্শেদ এর প্রধান নির্বাচনী এজেন্টসহ অন্যান্য এজেন্টদেরকে কেন্দ্রে ঢুকতেই দেয়া হয়নি। যারা ঢুকেছেন তাদেরও অধিকাংশকে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। রাজশাহীতেও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সমস্ত কিছুর উপর সরকার ও সরকারি দলের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে বিপুল ব্যবধানে সরকারি দলের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। রাজশাহীতেও ভোটারদের বিরাট অংশ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। সিলেটের অভিজ্ঞতাও প্রায় একই রকম। এখানে ভোটের ফলাফলে বিএনপির প্রার্থীর এগিয়ে থাকার ঘোষণা দেয়া হলেও এখানেও কেন্দ্র দখল, ভোট জালিয়াতি, এজেন্ট বের করে দেয়া, গোলাগুলি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে। সিলেটে সিপিবি-বাসদ এর প্রার্থী মো. আবু জাফরের পোলিং এজেন্টদেরকে অনেক কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি; কেন্দ্রে ঢুকতে পারলেও পরে বের করে দেয়া হয়েছে। সাংবাদিক বন্ধুগণ, গত ১৮ জুলাই বাম গণতান্ত্রিক জোট এর আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আমরা আশংকা প্রকাশ করেছিলাম যে খুলনা ও গাজীপুরের মত বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেটেও সমস্ত কিছু সরকার ও সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে রেখে ভোটের আয়োজন করা হবে এবং ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের’ অভিনব মডেলের পুনরাবৃত্তি করা হবে। দেশবাসীর মত আমাদের আশংকাও সত্য প্রমাণিত হয়েছে। সরকারের নীল নকশা কার্যকর হয়েছে; পরাজিত হয়েছে জনগণ, তাদের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, সাধারণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনী তামাশার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার জনগণের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার- ভোটাধিকার কেড়ে নেবার যে ধারার সূচনা করেছিল ৩০ জুলাই এর তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তারই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছে। এ পরিস্থিতি দেখে দেশবাসীর মনে হওয়া স্বাভাবিক জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে সরকার ও সরকারি দল আগামী জাতীয় নির্বাচনের নীল নকশা তৈরি ও পরিকল্পনা করেছে। আর জনগণের এ ধারণা যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে তা হবে দেশ ও দেশের জনগণের জন্য মহাবিপর্যয়কারী। আমরা আপনাদের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে, আগেকার ধারাবাহিকতায় এবারও নির্বাচন কমিশন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের ন্যূনতম দায়িত্ব পালনে ক্ষমার অযোগ্য ব্যর্থতার প্রমাণ রেখেছে। তাদের চোখের সামনে প্রথম দিন থেকেই সরকার দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচন আচরণ বিধির বেপরোয়া লংঘন, এমপি, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্টার, মেডিকেলের অধ্যক্ষ, সিভিল সার্জন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকাশ্যে সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার, নির্ধারিত ব্যয়সীমা লংঘণ করে শতগুণ অর্থ ব্যয়ের মধ্য দিয়ে পুরো নির্বাচনকে যথেচ্ছ টাকার খেলায় পর্যবসিত করা প্রভৃতি কোনো বিষয়েই নির্বাচন কমিশন কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এতোসব ঘটনার পরও প্রধান নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্ট হওয়ার কথা বলেছেন। যা দেখে দেশবাসী মনে করছে নির্লজ্জ আর তাকে বলে? এই অবস্থায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশন কেবল তার দায়িত্ব ও মর্যাদাকেই ভুলুণ্ঠিত করেনি, তাদের তত্ত্বাবধানে যে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আর কোনো সুযোগ নেই তাও তারা প্রমাণ করেছেন। যে নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকারের নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষমতা রাখে না, তাদের অধীনে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার যে কোনো অবকাশ নেই তাও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আর খুলনা-গাজীপুরের পর সদ্য সমাপ্ত তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর এই সত্য আরো একবার স্পষ্ট হয়েছে যে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনসমূহের যেখানে এরকম হাল সেখানে জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন জাতীয় সংসদ বহাল রেখে এবং বর্তমান দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সুযোগ নেই। এই প্রেক্ষিতে আমরা সদ্য সমাপ্ত সিটি কর্পোরেশনসমূহের জালিয়াতির নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করছি এবং আমাদের শরীক দলসমূহের মেয়র প্রার্থীদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এসব সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন বাতিল এবং পুননির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। বরিশালে বাসদ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তীর উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি। পাশাপাশি আমরা জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা, বর্তমান নির্বাচন কশিমনের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেয়া এবং সরকারকে পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠনের আন্দোলন এগিয়ে নেবারও প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। এই আন্দোলনে আমরা দেশবাসীকে এগিয়ে আসার জন্যেও উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য আবারও ধন্যবাদ।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..