বিদ্যুতের বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের দাবি ও চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার আগামী ৩০ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস হরতাল (সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা) সফল করার জন্য আহূত সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত মন্তব্য করেন। আজ সকাল ১১টায় পুরানা পল্টনস্থ, মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হক। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাসদ-এর কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, বাসদ (মার্কসবাদী’র) কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক ফিরোজ আহমেদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিভিন্ন বামপন্থি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, জ্বালানী বিশেষজ্ঞ, ভোক্তা সংগঠন ক্যাবসহ সকল মহলের মতামত ও সমস্ত তথ্য, যুক্তি উপেক্ষা করে সরকার একগুঁয়েমি করে বিদ্যুতের দাম আবরো বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। বর্তমান সরকার তার মেয়াদ কালে এই নিয়ে আট বার বিদ্যুতের দাম বাড়াল। সরকারের ভুলনীতি, দুর্নীতি, অপচয়, লুটপাট, ব্যাক্তিমালিকানাধীন বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের মুনাফার জন্য দফায় দফায় বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। সরকার হিসেব দেখাচ্ছে যে, ভর্তুকির টাকার সুদ বাবদ প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে ২১ পয়সা নাকি ব্যয় হয়। যা বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাবদ দেখানো হয়। সুদ নিলে সেটা তো আর ভর্তুকি থাকে না, তা তখন ঋণ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল বাবদ ২৬ পয়সা কেটে রাখা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ফলে তরল জ্বালানি দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম কমানো সম্ভব। সরকার কথায় কথায় বলে, আমরা দাম বাড়াই না, মুল্য সমন্বয় করি মাত্র। কিন্তু এক্ষেত্রে বিশ্ব বাজারের তেলের দামের সাথে সমন্বয় করতে দেখা গেল না। অথচ জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা হিসেব করে দেখিয়েছেন জ্বালানি তেলের দাম কমার সাথে সমন্বয় করলে প্রতি ইউনিটে দাম কমানো যাবে ১৪ পয়সা। সরকার পাইকারি
বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করেছে ৪.৯০ টাকা কিন্তু হিসাব দেখানো হয়েছে ৪.৮৫ টাকা হিসেবে। প্রতি ইউনিটে ৫ পয়সা মানে বছরে ২৭০ কোটি টাকা কোথায় যায়? এই শেষ নয়, ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিক্রিতে উদ্বৃত্ত ৮ পয়সা, পাওয়ার ফ্যাক্টর জরিমানা বাবদ সরকারের আদায় ৪ পয়সা যোগ করলে মোট দাঁড়ায় ৭৮ পয়সা । অর্থাৎ ৭৮ পয়সা প্রতি ইউনিটে সাশ্রয় করা যায়। তাহলে সরকার যে ৩৫ পয়সা দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে তার কোন প্রয়োজন নেই বরং তার চাইতেও প্রতি ইউনিটে ৪৩ পয়সা বা বছরে ২৩১৮ কোটি টাকা বেশি সাশ্রয় করা সম্ভব এক পয়সাও দাম না বাড়িয়ে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এ সরকার হৃদয়হীন সরকার। দেশের আপামর মানুষ যখন দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য দু’বেলা ঠিক মতো খেতে পাচ্ছে না তখন নিজের দেয়া পণ্য বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিয়ে দেশের মানুষের টিকে থাকাকে দুঃসাধ্য করে তুলেছে তারা। তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী আমজনতার সন্তানদের শিক্ষাকে ‘খুচরা জিনিস’ বলে পরিহাস করেছেন আর তাঁর জ্বালানী উপদেষ্টা আরেক কাঠি সরেস তিনি মানুষের দুর্বিসহ সময়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিকে ‘মামুলী বৃদ্ধি’ বলে ঠাট্টা করেছেন। সিপিবি সভাপতি বলেন, বর্তমান সরকার হৃদয়হীনদের সরকার। এরা দেশের গরীব মেহনতি মানুষের দুঃখ, দুর্দশা পরিহাসের বিষয়ে পরিণত করেছে। হৃদয়হীন সরকারকে আর বরাদশত করা যায় না। ৩০ নভেম্বরের হরতাল সফল করে নীরব ক্ষোভকে প্রতিবাদের ভাষা দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।
সিপিবি সভাপতি সেলিম আরও বলেন, সরকারের দিক থেকে বারবার বলা হচ্ছে সরকার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি আর দিতে পারবে না। আমাদের দিক থেকে সরকারের কাছে প্রশ্ন এটা ভর্তুকি না বরাদ্দ? কারণ বাজেটে যখন প্রতিরক্ষা খাতের জন্য অর্থ দেয়া হয় তখন তাকে বলা হয় বরাদ্দ আর যাদের দেয়া কর থেকে প্রাপ্ত অর্থ সরকার বিলি বণ্টন বা বরাদ্দ দেন তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য যেমন বিদ্যুৎ, সার ইত্যাদির জন্য সরকার যখন অর্থ দেয় তখন তাকে বলা হয় ভর্তুকি। বুর্জোয়া সরকারদের এ দৃষ্টিভঙ্গিকে বামপন্থিরা দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখান করছে।
বাম মোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেন, ৩০ নভেম্বরের হরতাল হবে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। সরকারি বা অন্য কোন মহলের উস্কানির ফাঁদে পা না দেয়ার জন্য তিনি জোটের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান। তিনি জনগণকে হরতাল সফল করতে সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি রাজপথে নেমে এসে প্রতিবাদ করার আহবান জানান।