Revolutionary democratic transformation towards socialism

বামপন্থি নেতৃবৃন্দের সরকারের প্রতি আহ্বান বন্যাদুর্গতদের পর্যাপ্ত ত্রাণ দাও, ত্রাণের টাকা লুটপাট বন্ধ কর

দেশের ব্যাপক অঞ্চল বন্যার পানিতে ভাসছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ দুর্দশাগ্রস্ত। একদিকে বানভাসি দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। অপরদিকে বামপন্থি দলের কর্মীরা জনগণের কাছ থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর যে প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে পুলিশ বাহিনী ও সরকার দলীয় কর্মীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাতে বাঁধা প্রদান করছে। বন্যা ত্রাণে সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে, ঈদের আগে যোগাযোগ ব্যবস্থার পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস পরিশোধ এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার দেশব্যাপী আহূত বিক্ষোভ সমাবেশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে বামপন্থি নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন। আজ বিকাল সাড়ে চারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশরেফা মিশু, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মাকর্সবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা জহিরুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকম-লীর সদস্য কমরেড অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক। সভা পরিচালনা করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড সাজেদুল হক রুবেল। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বন্যায় ইতোমধ্যে শতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। শিশু, বৃদ্ধ ও নারীরা বর্ণনাতীত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার এ দুর্ভোগের মধ্যেও এনজিও ঋণের কিস্তি পরিশোধ থেকে রেহাই মিলছে না গ্রামের গরিবদের। নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে বন্যাদুর্গত মানুষদের পর্যাপ্ত ত্রাণ দিতে হবে। এনজিও ঋণসহ বিভিন্ন ধরনের ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিতের নির্দেশ দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আগামী ফসলের জন্য পর্যাপ্ত বীজ, সার ও কৃষি উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ী নির্মাণের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে সারাদেশে মহাসড়ক ও সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। শত শত কিলোমিটার পথ চলাচলের জন্য অনপযুক্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে মানুষ তীব্র ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। নেতৃবৃন্দ বলেন কোরবানীর ঈদে শহরের অধিকাংশ মানুষ নিজেদের গ্রামে ফিরে যাবে। এসময় সড়কগুলোতে ব্যাপক চাপ পড়বে। বিধ্বস্ত সড়কের কারণে যানজট অসহনীয মাত্রায় পৌঁছবে। ঈদের আগে বিধ্বস্ত সড়ক সংস্কার করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন হাওরে আগাম বন্যা ও দেশের বন্যা পরিস্থিতির অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্য শস্য বিশেষ করে চালের দাম বাড়িয়ে চলছে। এ মুহূর্তে চালের দাম দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। সরকার চালের উপর আমদানীর শুল্ক ব্যাপক হ্রাস করলেও চালের দাম কমছে না। নেতৃবৃন্দ চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে হ্রাসের জন্য সরকারের উদ্যোগ দাবি করেন। নেতৃবৃন্দ বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহের দাবি জানান। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ ঈদের আগে গার্মেন্ট শ্রমিকসহ সকল শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন ও বোনাস পরিশোধের জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান। বামপন্থি নেতৃবৃন্দ নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেন, বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত সরকারি ত্রাণের দাবিতে এবং ত্রাণ সামগ্রী লুটপাটের বিরুদ্ধে জনগণকে সাথে নিয়ে বিক্ষোভ, ঘেরাও, গণসংগ্রাম গড়ে তুলুন। সমাবেশে মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতারকৃত সিপিবি নেতা শ্যামল দে, আমির হোসেনসহ চট্টগ্রামে ১৩ জন শিক্ষক এবং কক্সবাজারে ৫৭ ধারায় গ্রেফতারকৃত যুব ইউনিয়ন নেতা জসিম আজাদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করা হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..