বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর যৌথ সভায় দ্বি-দলীয় ধারার বাইরে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ার লক্ষ্যে জোরদার গণআন্দোলন গড়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আজ ২৯ মে সিপিবি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক কমরেড মো. শাহ আলম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, কমরেড জাহেদুল হক মিলু, কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, কমরেড অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন এবং সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স।
সভায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে বলা হয়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বর্তমান সরকার জনপ্রিয়তার তলানীর প্রান্ত সীমায় পৌঁছেছে। সরকার টিকে থাকার জন্য মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে আপসরফা করে দেশকে আরো দক্ষিণপন্থী পশ্চাৎপদতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। জামাতের সাথে বিএনপির ঐক্য এবং হেফাজতের কাছে আওয়ামী লীগের নতিস্বীকার সমাজ ও রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িকীকরণকে ত্বরান্বিত করছে। মানুষের ভোটের অধিকার আজ পদদলিত। আজকের দিনে মোটা চালের দাম পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ চরম সংকটে পড়েছে। সামনে বাজেট, সরকারের আয় বৃদ্ধির নামে ভ্যাটের হার বৃদ্ধি করে আমজনতার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের মাধ্যমে তাদেরকে নিদারুন সংকটে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। ব্যাংকে জমাকৃত টাকার উপর সুদের হার কমিয়ে আবগারী শুল্ক বাড়িয়ে মুনাফা হ্রাসের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ব্যাংকে গচ্ছিত টাকাকে বিনিয়োগের নামে পুঁজিবাজার তথা শেয়ার মার্কেটের দিকে ঠেলে দেয়ার পাঁয়তারা করছে সরকার। ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের মতো পুনরায় লুণ্ঠিত হবার শঙ্কার মধ্যে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, পিআইসির কর্মকর্তা এবং সরকারি দলের নেতা-কর্মী ঠিকাদারদের গাফিলতি ও দুর্নীতির কারণে বোরো ধান হারিয়ে হাওরের কৃষকরা আজ সর্বশান্ত। প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধির কথা বলছে সরকার। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয়.হ্রাস পাওয়ায় ক্রয়ক্ষমতার ক্রমাবনতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ভাত এবং ভোটের অধিকার বঞ্চিত হয়ে মানুষ দিশেহারা।
জনজীবনের এই নিদারুন কষ্ট লাঘবের জন্য সিপিবি-বাসদ জোরকদমে এগিয়ে যাবে লড়াইকে তীব্র থেকে তীব্রতর করতে। ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-ক্ষেতমজুর-নারীদের ওপর যে নিপীড়ন নেমে এসেছে তা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করবে। সিপিবি-বাসদ এ সময়কালে সারাদেশে যৌথভাবে কর্মীসভা, সমাবেশ, সুধী সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের হেফাজতের কাছে নতিস্বীকার বিরুদ্ধে, হাওরবাসীর ঋণ মওকুফ এবং আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত খাদ্য ও নগদ সহায়ত চালু রাখা, বাজেটে কর ও ভ্যাটের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করা, দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি রোধ, সুন্দরবন রক্ষায় রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বাতিল করা প্রভৃতি গণদাবি নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে জনগণের কাছে আহ্বান জানাবে।
জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সুষ্ট, নিরপক্ষ, দলীয় প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচন করার যে কোন চেষ্টা বানচাল করতে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
সভা থেকে ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে রমজান মাসে হকারদের সারাদিন ব্যবসা করার অনুমতি প্রদানের জন্য উভয় সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
কর্মসূচি:
আগামী ৮ জুন হাওর অঞ্চলভুক্ত উপজেলা সমূহে জলমহালের ইজারা বাতিল এবং ভাসান পানিতে মাছ শিকারের অধিকার উন্মুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে এবং ১০ জুন কিশোরগঞ্জ শহরে হাওর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
Login to comment..