ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে সংগঠক বিপ্লবী সাহিত্যিক, শ্রমিকনেতা কমরেড সোমেন চন্দ হত্যাকাণ্ড দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনকালে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে কমরেড সোমেন চন্দ জীবন উৎসর্গ করেছেন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে তিনি পথপ্রদর্শক। ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে তাঁর নাম চিরঅক্ষয় হয়ে থাকবে।
আজ ৮ মার্চ সকালে কদমতলা হৃষিকেষ দাস লেনে কমরেড সোমেন চন্দর স্মৃতিফলকে বিভিন্ন দল, সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন ও সিপিবি’র সূত্রাপুর থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিকাশ সাহা। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. কিবরিয়া, প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক কবি সাখাওয়াৎ টিপু, শহীদ সোমেন চন্দর ভাই মানিক চন্দ, সিপিবি’র নেতা জাহিদ হোসেন খান, আবু তাহের বকুল, অ্যাড. নেসার আহমেদ, রতন দাস, মানবেন্দ্র দেব, নূরুল ইসলাম গাজী প্রমুখ।
সোমেন চন্দর স্মৃতিফলকে সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, সোমেন-তাজুল পাঠাগার, সোমেন চন্দ চর্চাকেন্দ্র, সিপিবি’র সূত্রাপুর থানা কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
সমাবেশে কমরেড অঞ্জন বলেন, কমরেড সোমেন চন্দ ছিলেন একই সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মী, সাহিত্যিক। রাজনীতি আর সাহিত্যের অপূর্ব
সমন্বয় ঘটিয়েছেন তিনি। ছিলেন ঢাকা রেলওয়ে শ্রমিকদের এবং প্রগতি লেখক সংঘের নেতা। শ্রেণিহীন-বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অঙ্গীকারাবদ্ধ সোমেন চন্দর রচনায় ফুটে উঠেছে কমিউনিজমের জয়ধ্বনি। মৃত্যুর মুহূর্তেও তিনি লড়াই জারি রেখেছিলেন, গুন্ডাবাহিনীর কাছে মাথা নত করেননি। একজন সাচ্চা বিপ্লবী হিসেবেই তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। তাঁর স্মৃতি চিরঅম্লান হয়ে থাকবে। তাঁর বিপ্লবী জীবন, আদর্শ ও আত্মত্যাগ চিরদিন বিপ্লবী আন্দোলনের কর্মীদের প্রেরণা জোগাবে।
উল্লেখ্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের অংশ হিসেবে ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ঢাকার সূত্রাপুরের সেবাশ্রম মাঠে সোভিয়েত সুহৃদ সমিতির ব্যানারে কমিউনিস্ট পার্টি ফ্যাসিবিরোধী শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করেন। সম্মেলনে যোগ দিতে কমরেড বঙ্কিম মুখার্জী, কমরেড জ্যোতি বসুসহ কলকাতা থেকে কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ ঢাকায় আসেন। কমরেড সোমেন চন্দ লাল ঝান্ডার মিছিল নিয়ে সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন, তখন হৃষিকেশ দাস লেনে ফ্যাসিস্টদের সহযোগী উগ্র জাতীয়তাবাদী গুণ্ডাদের হাতে ২২ বছরের এই তরুণ নির্মমভাবে খুন হন। খুনীর তাঁর চোখ উপড়ে ফেলে, জিহ্বা কেটে ফেলে, পেট চিরে ফেলে। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে খুনীরা তাঁর মৃতদেহের ওপর পৈশাচিক নৃত্যে মেতে ওঠে। কমরেড সোমেন চন্দ বাংলার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ। তিনি ছিলেন ঢাকা রেলওয়ে ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক এবং একই সঙ্গে প্রগতি লেখক সংঘের ঢাকা জেলা কমিটির সম্পাদক।