বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক, বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী শাসক উচ্ছেদ হলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থা বদল হয় না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থা বদল ছাড়া মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, শোষণ বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়া যাবে না। নীতিনীষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তি, জনগণের সচেতনতা ও চলতি ব্যবস্থার পরিবর্তন ছাড়া এর বাস্তবায়ন সম্ভব না। সিপিবি ও বামপন্থীরাই পারে এই কাজকে এগিয়ে নিতে।
তিনি আরোও বলেন, সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। অথচ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। সার-কীটনাশক, ডিজেল-বিদ্যুৎ-পানির মূল্যবৃদ্ধি উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে তুলেছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে বন্দি। তারাই অন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করে সাধারণ জনগণের পকেট ফাঁকা করে নিজেদের পকেট মোটা করে। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে পুরো ব্যবস্থা বদল করতে হবে। উৎপাদন মূল্য কমাতে হবে, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। উৎপাদক সমবায় ও ক্রেতা সমবায় গড়ে তোলা এবং সারাদেশে রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্য মূল্যের দোকান চালু করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যবস্থা বদলের এক সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
সিপিবি’র আহবানে দেশব্যাপী ‘শোষণ বৈষম্যবিরোধী গণতন্ত্র জাগরণ যাত্রা’র প্রথম দিন আজ ১ নভেম্বর ২০২৪, বিকাল ৪টায় ঢাকার পুরানা পল্টন মোড়ে আয়োজিত সমাবেশে রুহিন হোসেন প্রিন্স এসব কথা বলেন।
সিপিবি পল্টন থানা আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কার্তিক চক্রবর্তী। সমাবেশে রুহিন হোসেন প্রিন্স ছাড়াও পার্টির ঢাকা মহানগর নেতা ত্রিদিব সাহা, মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল, সেকান্দার হায়াত, হয়রত আলী এই সমাবেশ ও বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্য রাখেন ।
সমাবেশে তিনি বলেন, আমাদের দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসে দ্রব্যমূল্য কমাতে পারেনি বরং বেড়েছে। অথচ শ্রীলঙ্কায় বামপন্থী সরকার ক্ষমতায় এসে দ্রব্যমূল্য কমিয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে নেওয়া তাদের নীতির কারণে শ্রীলঙ্কায় তা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশেও বামপন্থীরা ক্ষমতায় গেলে অগ্রাধিকার দিয়ে শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে নীতি প্রণয়ন করবে। এর ফলে নিত্যপণ্যের দাম কমানোসহ সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধি ও জনজীবনের শান্তি প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা যাবে।
তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনো দল বা গোষ্ঠীর হয়ে ভূমিকা না নিয়ে জনস্বার্থে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্তরের কথা জনগণ শুনতে চায়। এখনও নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা হচ্ছে না কেন? এটি তো আপনাদের অন্যতম দায়িত্ব। বিগত সরকার মানুষকে ভোট বঞ্চিত করে উন্নয়নের গল্প শুনিয়েছেন। এর কারণে ক্ষমতা ধরে রাখতে তাকে দিন দিন
স্বৈরাচারী কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠতে হয়েছে। এখনো সংস্কারের গল্প শোনানো হচ্ছে, অথচ গণতন্ত্র ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান কোন ভূমিকা নেয়া হচ্ছে না।
তিনি অবিলম্বে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের আলোচনা শুরুর আহ্বান জানান।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বিশেষ ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে বলেন, অতীতে শাসক ও তাদের প্রশ্রয়ে কিছু গোষ্ঠী গণমামলার নামে মানুষকে হয়রানি করেছে। এখনো কোথাও কোথাও গণমামলা, মামলা-গ্রেফতার বাণিজ্যের খবর আসছে। গণভ্যুথানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক থেকেই অগ্রসর হতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের মধ্যে অপশক্তি আছে, ভূ-রাজনৈতিক কারণে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তি দেশের উপরে নানাভাবে আগের থেকে অনেক বেশি আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। এদের বিষয়ে দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে। দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।
সমাবেশে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, বিগত দিনের শাসকগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধকে অপব্যবহার করেছে, নিজের মত করে মুক্তিযুদ্ধের ভাষ্য তৈরি করেছে, এখন অনেকে নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করতে চাইছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত ’৭২ এর সংবিধানে অসম্পূর্ণতা আছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীনরা বিভিন্ন সংশোধনের নামে নানা কালাকানুন চাপিয়ে দিয়েছে। এগুলো পরিবর্তন করতে হবে। তাই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা এবং অসম্পূর্ণতা দূর করে মূল ভিত্তি ঠিক রেখে ’৭২ এর সংবিধানের পূর্ণতা দেওয়ার সংগ্রাম অগ্রসর করতে হবে।
বক্তাগণ শোষণ-বৈষম্য মুক্ত দেশ গড়তে লুটপাটের ধারার অর্থনীতির ব্যবস্থার পরিবর্তনেরও আহ্বান জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, অসৎ রাজনৈতিক, অসৎ আমলা আর অসৎ ব্যবসায়ী মিলে যে দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক ধারা তৈরি করেছে, এরাই ছিল লুটপাটের অর্থনীতির পাহারাদার। এখনো লুটপাটের ধারার অর্থনীতি চলমান। এই অর্থনীতি চলমান রেখে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি পরিবর্তন করা যাবে না।
বক্তাগণ দেশের মানুষের কর্মসংস্থান, মর্যাদা আর সমভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে দেশবাসীকে বামপন্থার পথ ধরে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সমাবেশ শেষে নিত্যপণ্যের দাম কমানো, জনজীবনে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বানকে সামনে রেখে পল্টন মোড় থেকে পদযাত্রা শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় পথসভা ও গণসংযোগ করেন সিপিবি নেতাকর্মীরা।
নেতৃবৃন্দ পদযাত্রা, পথসভা ও গণসংযোগে সাধারণ মানুষকে সিপিবির পতাকাতলে সমবেত হওয়ারও আহ্বান জানান।