Revolutionary democratic transformation towards socialism

দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী, ঋণ খেলাপি ও কালো টাকার মালিকদের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি


বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভায়, আজিজ-বেনজীর-আনারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে- এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে দুর্বৃত্তায়িত অর্থনীতি ও রাজনীতির চেহারা যতটুকু ফুটে উঠেছে তা ভয়াবহ। বর্তমান সরকারের নীতি ও উপরের মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয় ছাড়া এ ধরনের ঘটনা একেবারেই অসম্ভব।
 
সভায় এসব ব্যক্তিসহ এ পর্যন্ত যাদের নামে দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগ উঠেছে তার শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানানো হয়। সভায় টাকা পাচারের সাথে জড়িত, ঋণ খেলাপি ও কালো টাকার তালিকা ও শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানানো হয়।

সভায়, পাচারের টাকা ও খেলাপি ঋণ উদ্ধারে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়- এর সাথে জড়িত এবং এসব ঘটনার প্রশ্রয়দাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

আজ ২৯ মে ২০২৪ সকাল ১১টায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয় বাম জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ (মার্কসবাদী)-এর সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী, কমিউনিস্ট লীগের আব্দুস সাত্তার, মোশারফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহিদুল ইসলাম সবুজ, বাসদ (মার্কসবাদী)-এর তসলিমা আক্তার বিউটি উপস্থিত ছিলেন।

সভার শুরুতে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের জন্য শোক ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তাসহ পুনর্বাসনের দাবিও জানানো হয় সভা থেকে।

সভায় আগামী বাজেটকে সামনে রেখে আইএমএফ’র সিদ্ধান্ত মেনে, লুটেরাদের স্বার্থে জনগণের কাঁধে আরও করের বোঝা চাপানোর যেসব খবর বেরিয়েছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়- দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোচনে বর্তমান ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা, কালো টাকা-পাচারের টাকা-খেলাপি ঋণ উদ্ধার, দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ করা, অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প ও বিলাস দ্রব্য আমদানি বন্ধসহ জনস্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমরা দেখলাম বাজেটের আগে সরকার সাধারণ মানুষের সাথে, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে কথা

বলার প্রয়োজন অনুভব করল না। তারা ব্যবসায়ী ঐ লুটেরাদের সাথে কথা বলে, তাদের স্বার্থেই বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। এমনিতেই দেশের মানুষ ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে গেছে। আগামী বাজেটে ঋণ করেই এসব ঋণের কিস্তি শোধ করতে হবে। এই অবস্থা বহাল রেখে বাজেট প্রণীত হলে, কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ রাখলে- তা শুধু অনৈতিকই হবে না, গণবিরোধী বাজেটও হবে।

সভায় বলা হয়, নানা সংকটের মধ্যেও দেশের কৃষক-ক্ষেতমজুররা উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। সেই কৃষকরা ফসলের লাভজনক দাম পাচ্ছে না। ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ও যে দাম ঠিক করা হয়েছে তা প্রকৃত কৃষকরা পাচ্ছে না। কারণ সরাসরি প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হচ্ছে না। শ্রমজীবী মানুষদের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরির দাবি থাকলেও তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। মাথাপিছু আয় বেড়েছে এসব কথা সরকার শোনালেও প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে। অন্যদিকে নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি মানুষের জীবনকে অসহায় করে তুলেছে। মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার খবর আসছে, দ্রুত এর অবসানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। বিদ্যুৎ-জ্বালানির লাগাতার মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে। অথচ বিদ্যুৎ জ্বালানির খরচ বৃদ্ধি হচ্ছে সরকারের মূলনীতি ও দুর্নীতির কারণে। আর এখন এই দায় জনগণের ওপরে চাপানো হচ্ছে। তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

সভায় চলমান কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসনের অবসান, পাচারের টাকা-খেলাপি ঋণ-কালো টাকা উদ্ধার-দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সারাদেশে রেশন ব্যবস্থা চালুসহ মানুষের চিকিৎসা-শিক্ষা-অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা বিধানের দাবিতে গণআন্দোলন-গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সভায় প্যালেস্টাইনে গণহত্যা বন্ধ, জাতিসংঘ থেকে ইসরাইলকে বহিষ্কার ও গণহত্যার দায়ে বিচার এবং সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে আগামী পহেলা জুন সারাদেশে যার যার অবস্থান থেকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ ও প্যালেস্টাইনে জনগণের প্রতি সংহতি জানানোর আহ্বান জানানো হয়।

এছাড়া দুঃশাসনের অবসান ও জনমনের সংকট মোচনের দাবিতে আগামী ৮ জুন দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের আহ্বান জানানো হয়।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..