বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সভায় বলা হয়েছে, দেশের সাধারণ মানুষের আয় না বাড়লেও মূল্যবৃদ্ধির কষাঘাতে জনজীবন অতিষ্ঠ। এর মধ্যে বছরে তিনবার করে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও দুঃসহ করে তুলবে।
সভায় বলা হয়, বিদেশে পাচারকৃত টাকা ও খেলাপীঋণ আদায় ও এর সাথে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত না করে এদের দায়মুক্তি দিতে ব্যাংক একত্রীকরণ, বন্ড বিক্রিসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আইএমএফ’র শর্ত মেনে বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন সেবা খাতের ভর্তুকি প্রত্যাহারসহ ব্যাংকের সুদের হার ব্যাংকের উপর ছেড়ে দেওয়া, ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বৃদ্ধি করে অর্থনীতি নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ও উৎপাদনশীল খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। দেশবাসীকে আরও ঋণের জালে আবদ্ধ করে ফেলবে। সরকারের এই গণবিরোধী নীতি চলমান অর্থনৈতিক সংকটকে আরও তীব্র করে তুলবে।
দু’দিনব্যাপী সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সভা আজ ১০ মে পার্টি কার্যালয়ে শেষ হয়। সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, অধ্যাপক এ এন রাশেদা, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, মোতালেব মোল্লা ও পরেশ কর।
সভায় বলা হয়, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের কৃষক-ক্ষেতমজুর উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি না পেলেও কাজ করে চলেছে। বিদেশে অবস্থানরত শ্রমজীবী মানুষ যথাযথ মর্যাদা না পেলেও দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। সরকার নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে না পারলেও সাধারণ মানুষ নানা ধরনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের আচরণ বৈরী। অথচ এদের সৃষ্ট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর দাঁড়িয়ে উন্নয়নের গল্প শোনানো হচ্ছে।
সভায় ধানসহ উৎপাদিত ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত ও সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় এবং সর্বত্র ‘উৎপাদক সমবায় ও ক্রেতা সমবায়’
গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়। সভায় শ্রমিকদের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, বাস্তবায়ন এবং বিকল্প কর্মসংস্থান ছাড়া হকার, রিকশা উচ্ছেদ বন্ধের দাবি জানানো হয়।
সভায় বলা হয়, সরকার ‘আমি ও ডামি’র জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করে এ ধরনের আরেকটি উপজেলা নির্বাচন করে চলেছে। সম্প্রতি আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে, সরকারের এই একতরফা নির্বাচনে মানুষের আগ্রহ নেই। মানুষ ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। অন্যদিকে সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক, কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দেবে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে সুযোগে সাম্প্রদায়িক ও অগণতান্ত্রিক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। সারাদেশে পরিবারতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র লুটপাটের ধারাকেই স্থায়ী করার পথ প্রশস্ত করবে।
এ অবস্থা থেকে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও জনজীবনের সংকট দূর করতে চলমান দুঃশাসনের অবসান ও ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম এবং নীতিনিষ্ঠ বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিয়ে বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলার অগ্রসর করার আহ্বান জানানো হয়। সভায় জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার ও স্থানীয় সরকারকে দক্ষ ও শক্তিশালী করতে দেশবাসীকে সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
সভায় বলা হয়, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে নিজেদের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা এবং একইসাথে স্বৈরাচারী কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানে গণআন্দোলন, গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
সভায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ তাদের দোসরদের মদদে প্যালেস্টাইনে ইসরাইলি গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এর বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা সারাবিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামের সাথে একাত্মতা জানানো হয়। সভায় প্যালেস্টাইনে গণহত্যা বন্ধসহ সারাবিশ্বে সাম্রাজ্যবাদের যুদ্ধ উন্মাদনার প্রতিবাদে সারাদেশে যার যার অবস্থান থেকে বিক্ষোভ সংগঠিত করার আহ্বান জানানো হয়।
সভায় কতক সাংগঠনিক পর্যালোচনা ও কতক সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।