বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)' র সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, পরিবেশ প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নয়, প্রকৃতির সাথে খাপ খাইয়ে পুরো উন্নয়ন পরিকল্পনা ঢেলে সাজাতে হবে। পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন ছাড়া তীব্র তাপদাহে মানুষ যেমন অতিষ্ঠ হচ্ছে ভবিষ্যতেও নানাভাবে এ ধরনের অতিষ্টতা বাড়বে। এর ফলে এই উন্নয়ন প্রকৃতপক্ষে মুখ থুবড়ে পড়বে। মানুষের কষ্ট বাড়াবে।
তিনি বলেন, দেশ আজ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একদিকে দুর্নীতিবাজ লুটেরা গোষ্ঠী আর তাদের দল। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ ও তাদের দল। এসব লুটেরারা তাদের পকেট ভারি করে লুটপাটের অর্থনীতি গড়ে তুলেছে। নিজেদের পকেট ভারী করেছে। বিদেশে অর্থ সম্পদ পাচার করেছে। তাইতো বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও তাদের অসুবিধা হয় না। আর সাধারণ মানুষ কম খেয়ে, শিক্ষা, চিকিৎসা বঞ্চিত থেকে কোনভাবে জীবন কাটাচ্ছে। হতাশায় জীবন পার করছে। এ অবস্থা পরিবর্তনে সাধারণ মানুষকে নিজেদের শক্তিতেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আজ ৪ মে ২০২৪ বিকেল সাড়ে চারটায় খুলনা মহানগরীর গোলক মনি শিশু পার্কে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি খুলনা মহানগর সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিবির খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান বাবু। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা সিপিবি কন্ট্রোল কমিশনের সদস্য কাজী সোহরাব হোসেন। প্রধান অতিথি সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স, খুলনা জেলার সভাপতি ডা. মনোজ দাস, সাধারণ সম্পাদক এস এ রশিদ, খুলনা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিত্যানন্দ ঢালী, শ্রমিকনেতা এইচ এম শাহদৎ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
রুহিন হোসেন প্রিন্স আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৫২ বছর পার হলেও আজ সব মানুষের মানসম্মত খাদ্য, কাজ, শিক্ষা, চিকিৎসা ,বাসস্থানের নিশ্চয়তা নাই। অথচ একদল মানুষের এসব সুবিধা অপরিসীম। তিনি সাধারণ মানুষের এসব সুবিধাকে নিশ্চিত করতে এসব অধিকারকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান।
তিনি বলেন, জনগণকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করে জোর করে ক্ষমতায় থেকে গণতন্ত্রের বুলি আওড়ানো যাবে, প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে উন্নয়নের প্রচার করা যাবে। কিন্তু জনগণের সমর্থন ও রায় পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন দেশের পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা আজ ফেল করে গেছে। নির্বাচনকে প্রশাসনিক কারসাজি, অর্থ, পরিবারতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র, পেশিশক্তি ও ভয়ের রাজত্বের উপরে দাঁড় করানো হচ্ছে। এ অবস্থা উত্তরণে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়ন করতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সবার ভোট দেওয়া ও ভোটে দাঁড়ানোর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচনের প্রচারের সব দায়-দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে।
তিনি বলেন, উন্নয়ন মানে কিছু ব্যক্তি, কিছু গোষ্ঠী, কিছু পরিবার ও তার সহযোগীদের উন্নয়ন নয়। উন্নয়ন হতে হবে জনস্বার্থে। উন্নয়ন হতে হবে পরিবেশবান্ধব। আজকের পরিবেশের যে বিপর্যয় আমরা
দেখছি সেটি আমাদের উন্নয়নের নামে ভুল পদক্ষেপেরই ফসল। উন্নয়ন হতে হবে দেশের সব অঞ্চলে, সব মানুষের সমউন্নয়ন। উন্নয়ন বঞ্চিত এলাকায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রমও গ্রহণ করতে হবে। দক্ষিণ অঞ্চল, খুলনা অঞ্চলে নতুন শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেনি, অথচ শিল্প ধ্বংস করা হয়েছে। এসব শিল্প কারখানা গুলোতে এখন ভাগাভাগি করে ওইসব জমি দখলের প্রচেষ্টা চলছে। তিনি খুলনার শিল্পাঞ্চলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পাটকল সহ শিল্প কলকারখানা চালু এবং বেসরকারি খাতে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
তিনি বলেন, সরকার সবার জন্য কাজের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। দেশের অধিকাংশ শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেলেও উৎপাদন অব্যাহত রেখে চলেছেন। তিনি সব খাতের শ্রমিকদের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করা ও ৬০ বছরের ঊধে্র্বর সব শ্রমিক কৃষক ক্ষেতমজুরের জন্য বিনা জামানতে পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনেরও দাবি জানান। তিনি সারাদেশে সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্য মূল্যের দোকান চালুর দাবি জানান ।
তিনি স্বকর্মসংস্থান গড়ে তোলা শ্রমজীবী মানুষকে কর্মক্ষেত্র থেকে উচ্ছেদের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তাদের কর্মপরিবেশ ও পরিকল্পিতভাবে বিকল্প কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দাবি জানান।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে। অন্যদিকে সরকার মূল্য বৃদ্ধির উৎসব শুরু করেছে। পাচারকৃত টাকা ও ঋণ খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করা হচ্ছে না। অথচ বছরে একাধিকবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো এবং অনেক জনবান্ধব কর্মসূচি থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
সরকারের ভুলনীতি ও দুর্নীতির কারণে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত সহ সর্বত্রই উন্নয়ন আজ যন্ত্রণায় পর্যবসিত হয়েছে। ঋণ করে ঘি খাওয়া সরকারের ঋণ পরিশোধের দায় বেড়েই চলেছে। এর মধ্য দিয়ে অর্থনীতি বিপর্যয়ে পড়ছে। নতুন প্রজন্মকে ঋণের জালে আবদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, লুটেরা গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় রেখে এ অবস্থার উন্নয়ন করা যাবে না। এজন্য বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে যার যার নিজস্ব দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একই সাথে নীতি-নিষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তির পতাকাতলেও সমবেত হতে হবে । এর মধ্য দিয়েই নীতিনিষ্ঠ বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলেই চলমান দুঃশাসনের অবসান ও ব্যবস্থা পরিবর্তনের সংগ্রামকে অগ্রসর করতে হবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত দেশে আমরা যে শোষণ মুক্তির স্বপ্নের কথা বলেছিলাম আজ একদল লুটেরা ও লুটেরা শাসকগোষ্ঠী এই স্বপ্নকে সাধারণ মানুষের দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে। এই অবস্থা পরিবর্তনে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমাদের অগ্রসর হতে হবে।
সমাবেশের আগে খুলনা নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্ণাঢ্য মিছিল নিয়ে সিপিবির নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন।
উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি খুলনা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে খুলনা প্রেসক্লাব চত্বরে এসে শেষ হয়।
এরপর সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। সমাবেশের পূর্বে গণসংগীত পরিবেশন করা হয়।