বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স আজ এক বিবৃতিতে সিপিবি’র সদস্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, গোলাম আরিফ টিপুর মৃত্যুতে দেশ হারালো এক সৎ ও আদর্শবাদী কর্মবীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মানবমুক্তির লড়াইয়ের এক আপসহীন যোদ্ধাকে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের একনিষ্ঠতা বজায় রেখেও মানুষের মুক্তির সংগ্রামে সমাজতন্ত্রের প্রতি তার ছিল প্রগাঢ় আস্থা যার কারণে আমৃত্যু গোলাম আরিফ টিপু কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ বহাল রেখেছেন। তার অসম সাহস এবং দৃঢ়তার কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে তিনি সক্ষম হয়েছেন। যে কাজের মধ্য দিয়ে লক্ষ শহীদের রক্তঋণ শোধের এক দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং দুরূহ কাজ জেনেও তিনি এ দায়িত্ব পালনে কুণ্ঠাবোধ করেনি। যা বাংলাদেশের জনগণ চিরদিন শ্রদ্ধা এবং স্পর্ধার সাথে স্মরণ করবে।
বিৃবতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, গোলাম আরিফ টিপু ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক জাতি গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালে এ জনপদের অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল চেতনায় গঠিত ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্র ইউনিয়ন’ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে (১৯৫৪-৫৬) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ইউয়িনের ৩য় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
শোক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, তার মৃত্যুতে জাতি একজন অকুতোভয়, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক কর্মবীরকে হারালো। এ মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরি হলো তা অপূরণীয়। আজীবন সংগ্রামী ও বিপ্লবী অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
উল্লেখ্য, গোলাম আরিফ টিপু আজ ১৫ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, সকাল সাড়ে ৮টায় বার্ধক্যজনিত কারণে ৯৩ বছর বয়সে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
গোলাম আরিফ টিপুর সংক্ষিপ্ত জীবনী
গোলাম আরিফ টিপু ১৯৩১ সালের ২৮ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের (তৎকালীন মালদহ জেলা, ব্রিটিশ ভারত) শিবগঞ্জ উপজেলার কমলাকান্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আফতাব উদ্দিন আহমদ ছিলেন জেলা রেজিস্ট্রার। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে টিপু দ্বিতীয়। তিনি কালিয়াচর বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক ও রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৫০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। একই কলেজ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্নের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। টিপু ১৯৫৮ সালে একজন আইনজীবী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।
তিনি একাধিকবার রাজশাহী আইনজীবী সমিতির সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালে রাজশাহী কলেজে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে তিনি নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন।
ছাত্র জীবন থেকে তিনি প্রগতিশীল আন্দোলন ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। প্রকাশ্যভাবে তিনি কিছুদিন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপের রাজনীতির সাথেও যুক্ত হন। বেশ ক’বছর আগে তিনি পুনরায় আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেন এবং আমৃত্যু সদস্য হিসাবে তার উপর দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
৯৩ বছর বয়সে আজ ১৫ই মার্চ সকাল আটটায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে সর্বজন শ্রদ্ধেয় অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।