Revolutionary democratic transformation towards socialism

অযৌক্তিকভাবে বিদ্যুতের ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান বাম জোটের


বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভায় অন্যায়, অযৌক্তিকভাবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও আগামীতে মূল্য সমন্বয়ের নামে প্রকারান্তরে নিয়মিত মূল্যবৃদ্ধির প্রচেষ্টার খবরে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ও অপরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে তা জনগণের কাঁধে চাপানোর প্রচেষ্টা নেয়া হচ্ছে।

সরকারের এই ভুলনীতি ও দুর্নীতির দায় সাধারণ জনগণ নেবে  না। সভায় এই মূল্যবৃদ্ধির পথ থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ভুলনীতি ও দুর্নীতির জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়াই প্রধান কাজ।

সভায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, সরকার মুখে দাম কমানোর কথা বললেও যেসব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী এই মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম হোতা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দক্ষ, দুর্নীতিমুক্তভাবে বিকল্প বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা, সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থা ও সারাদেশে ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু ছাড়া এই সংকটের সমাধান করা যাবে না। অথচ সরকার সে পথে হাঁটছে না।

দেশের উৎপাদিত ফসলের উৎপাদন মূল্য কমানো, সারা দেশে কম খরচে চাঁদামুক্তভাবে পরিবহন ব্যবস্থা চালু ও 'উৎপাদক ও ক্রেতা সমবায় গড়ে তোলা'র মধ্য দিয়েই উৎপাদকের ও ক্রেতার স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। মার্কেট ফান্টামেন্টালিজমের দর্শন থেকে বেরিয়ে না আসতে পারলে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না।

আজ ২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বিকেল চারটায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)'র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদী)'র কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহিদুল ইসলাম সবুজ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)'র কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহমান।

সভায় বলা হয়, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি হলে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে- এর দায়ও জনগণের কাঁধে চাপানো হবে। এমনিতেই মূল্যবৃদ্ধির অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। তারপর এসব মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলবে। সভায় সরকারকে এই পথ থেকে সরে এসে বিদ্যুতের মূল্য কমানোর জন্য পথ বের করতেও গণশুনানির আয়োজন করারও আহ্বান জানানো হয়।

সভায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারার প্রতিবাদে ও নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দাবিতে আগামী ১ মার্চ দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি নেওয়া হয়। এছাড়া এসময় জেলা সফর অব্যাহত রাখতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্র নেতাকে বহিষ্কারের খবরে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, সরকার ও প্রশাসন চলমান ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য নানা ধরনের অপকৌশল নিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ছাত্রজনতাকে রুখে দাঁড়াতে হবে। নেতৃবৃন্দ নিঃশর্তভাবে এসব ছাত্রনেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সভায় লুটপাট, দুর্নীতি, বিদেশে টাকা পাচার, ঋণ খেলাপির সাথে জড়িত ও এর নেপথ্যের নায়কদের খুঁজে বের করে টাকা আদায় ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানানো হয়।

সভায় স্থল ও সমুদ্রভাগের গ্যাসসহ এসব সম্পদের ব্যবহার দেশ ও জনগণের স্বার্থে নিশ্চিত করতে, জাতীয় সম্পদের উপর শতভাগ মালিকানা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, দুর্বল সরকারের সুযোগ নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী দেশগুলো দেশের জাতীয় সম্পদ ভাগাভাগি করে নেওয়ার প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে। আর দুর্বল ক্ষমতাসীন সরকার নিজেদের ক্ষমতায় থাকার স্বার্থকে বিবেচনা করে এসব সম্পদ ভাগ করে বিভিন্ন দেশকে দিতে দ্বিধা নাও করতে পারে। তাই জাতীয় সম্পদ রক্ষায় দেশবাসীকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। যে কোনো অন্যায় অযৌক্তিক কাজের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

সভায় বর্তমান এক দলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের ও দুঃশাসনের অবসান, ‘আমি ও ডামি'র ভোট বাতিল করে নির্বাচন ব্যবস্থার পুরো সংস্কারসহ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, ব্যবস্থা বদল ও বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলার সংগ্রাম অগ্রসর করতে দেশবাসী প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন

Login to comment..