সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আগামী ১৫-৩০ নভেম্বর দেশব্যাপী ‘সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী প্রচার ও প্রতিরোধ পক্ষ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সারাদেশে গ্রামাঞ্চলে ১ হাজার হাটসভা, শহরাঞ্চলে পথসভা/সমাবেশের মাধ্যমে এই কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়া আগামী ৮ নভেম্বর সিপিবি-বাসদ জোটের উদ্যোগে দেশব্যাপী ‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’ পালিত হবে। একই দিন নাসিরনগরে সিপিবি’র উদ্যোগে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।
আজ ৪ নভেম্বর সকালে মুক্তিভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শনকারী সিপিবি’র কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সফরকারী সিপিবি’র কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাকসু’র সাবেক ভিপি রাগিব আহসান মুন্না। আরো বক্তব্য রাখেন প্রতিনিধি দল ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ কাফী রতন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, রফিকুজ্জামান লায়েক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সোহেল আহমেদ, জাতীয় পরিষদ সদস্য আনোয়ার হোসেন রেজা, আবিদ হোসেন প্রমুখ।
কমরেড সেলিম বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এখন দেশের সামনে প্রধান বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক হামলা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, ঘর-বাড়ির ওপর যেভাবে হামলা করা হয়েছে, তা নজিরবিহীন। প্রশাসন সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সংগঠিত হয়ে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে তা-ব চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে। বেছে বেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। এই তা-ব পাক-বাহিনীর বর্বরতাকে মনে করিয়ে দেয়। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে মোকাবেলায় সরকার কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। উপরন্তু সরকারি দলের লোকজন উসকানি দিচ্ছে এবং হামলায় অংশ নিচ্ছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মোকাবেলায় সরকারের ওপর নির্ভর না করে জনগণকে তৃণমূল থেকে ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তুলতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কমরেড মুন্না বলেন, ধর্মীয় উসকানি, উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সমাবেশ সংঘটিত হতে না দেয়ার পরিবর্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসি, উপজেলা চেয়ারম্যান, শাসকদলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মিছিল সহকারে সমাবেশে অংশ নিয়েছে এবং উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বক্তব্য দিয়েছে। সমাবেশ চলাকালে সমাবেশ স্থলের দুই-চার’শ গজের মধ্যেই নাসিরনগরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগতরা হিন্দুদের বাড়ি আক্রমণ ও লুটপাট করা হয়। হামলা, লুটপাটের সময় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করেছে। স্থানীয় সাংসদ ও মন্ত্রীর নিস্পৃহতা, আক্রান্ত পরিবারগুলোর পাশে না দাঁড়ানো, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের ছোট ঘটনাকে বড় করে দেখানো হয়েছে বলে শাসানো ইত্যাদি আক্রান্তদের ক্ষুব্ধ করেছে। আক্রান্ত নারী, শিশুদের চোখে-মুখে এখন আতংকের ছাপ। তারা ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। রাতে ঘুমোতে পারছে না।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে যে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার পরিবর্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, কর্তব্য পালনে ব্যর্থ প্রশাসনকে অপসারণ করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা, আক্রান্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ, রাষ্ট্রের দায়িত্বে ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরগুলো পুনঃনির্মাণ, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ এবং সংবিধান থেকে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বাতিল করার দাবি জানানো হয়।
Login to comment..