বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে কোটি টাকার ঊর্ধ্বে ঋণ খেলাপিদের তালিকা ও কিভাবে সংশ্লিষ্ট ঋণ পেয়েছিল তার তথ্য প্রকাশ এবং অর্থ পাচারের অনুসন্ধান ও শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।
আজ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সোমবার, বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা সমাবেশে মিলিত হন। এখানে বক্তব্য রাখেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ।
এরপর বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিক্ষোভ মিছিল তোপখানা-পল্টন-মতিঝিল হয়ে বাংলাদেশে ব্যাংকের গেটের সামনে যায়।
সেখানে অনুষ্ঠিত অবস্থান সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জোটের সমন্বয়ক, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। বক্তব্য রাখেন, সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের নেতা আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী। সমাবেশ পরিচালনা করেন সিপিবি নেতা ডা. সাজেদুল হক রুবেল।
style="text-align: justify;">সমাবেশে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, লুটেরাদের প্রশ্রয় দিয়ে ব্যক্তিখাত গড়ে তোলা যায় না। এটা হয় স্বজন তোষণমূলক পুঁজিবাদ। এটা হয় শাসক দলের ব্যক্তিখাত ও বাইরের ব্যক্তিখাত শাসকদল পরিবর্তিত হলে এরা পরিবর্তিত হয়। এই ব্যক্তিখাত দাঁড়ায় না। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ কম দেখানোর জন্য নানা পদ্ধতি বের করা হয়। এতে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় না। খেলাপি ঋণ বেড়ে চলে, চলছে। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃত শত্রুদের আড়াল করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এদের শক্তির উৎস ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল। এখন এসব দল এদের পক্ষে চলে গেছে। তিনি খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের তালিকা প্রকাশ, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং এদের বিদ্যুৎ, পানির লাইন কেটে দেওয়ার দাবি জানান।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, দেশের আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনার দায় বাংলাদেশ ব্যাংক এড়িয়ে যেতে পারে না। তিনি দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেশপ্রেমিক অর্থনীতিবিদদের পরামর্শে পরিচালনায় আহ্বান জানান। তিনি ব্যাংকের তথ্য উন্মুক্ত ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি খেলাপি ঋণ আদায় ও পাচারের টাকা ফেরত আনতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ৭ দিনের মধ্যে খেলাপিদের তালিকা ও ঋণ অনুমোদনের সাথে জড়িতদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানান।
প্রিন্স আরও বলেন, বিগত রাতের
ভোটের সংসদে যে খেলাপিদের তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল- তার খবর কি? তিনি বলেন, কাদের প্রশ্রয়ে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না জানতে চাই?
তিনি বলেন, ‘আমি, ডামি’র নির্বাচনের পার্লামেন্ট জনগণের পার্লামেন্ট নয়, এটা লুটেরা ব্যবসায়ী ও একদলীয় কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতাসীনদের ক্লাব। পালাক্রমে বামপন্থিরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য নির্বাচন প্রভৃতি নিয়ে রাজপথে জনগণের পার্লামেন্ট বানাবে।
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে এই অবস্থান হলো জনগণের পার্লামেন্ট, এখানে জনগণের কথা বলা হলো। এরপর দুদক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামনে অবস্থান করা হবে।
সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, সরকার শুধু লুটেরাদের পাহারাদার নয়, এরা এই লুটের অংশীদার। এদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন, গণসংগ্রাম গড়ে তুলে মুক্ত বাজারের অর্থনীতি বিদায় করে সমাজতান্ত্রিক অভিমুখীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বেনামে ঋণের সাথে যুক্ত ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
তিনি পাচারের টাকা ও খেলাপি টাকা উদ্ধার, করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার এবং লুটেরা শাসকদের বিরুদ্ধে বিকল্প শক্তি কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানান।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ২০০৮ সালের পর
দেশের টাকা ফেরত আনা হলো, অথচ আওয়ামী দলীয় লোকদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে কারোর টাকা ফেরত আনা হলো না। এখন কিছু গোষ্ঠী, পরিবার সরকারের ছত্রছায়ায় ব্যাংক লুটপাট করে চলেছে। দুর্নীতিবাজ ব্যাংক পরিচালকদের অপসারণ করা হচ্ছে না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং পুরস্কৃত করা হচ্ছে।
আব্দুস সাত্তার বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটপাট হয়ে যায়। এর সাথে জড়িতদের শাস্তি হয় না বরং এরা আরও সম্মান নিয়ে বহাল তবিয়তে দেশে আছে। তিনি সব লুটেরা ও এদের প্রশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
মাসুদ রানা বলেন, মুক্তবাজারের ধারা অব্যাহত রেখে সংকট সমাধান হবে না। আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা দূর না করতে পারলে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, লুটপাট-দুর্নীতি দূর করতে পারব না। তিনি লুটেরাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তুলতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
মোশরেফা মিশু বলেন, ব্যাংকগুলোতে অনেক লোমহর্ষক ঘটনা আছে। এমন কোনো ব্যাংক খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখান থেকে টাকা লুটপাট হয়নি। অথচ অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। এরা বেগম পাড়া, সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছে।
আব্দুল আলী বলেন, ব্যাংকের টাকা যারা লুট করে খায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওযা হয় না অথচ শ্রমিকরা আন্দোলন করলে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি দেওয়া হয় না।