রাজনৈতিক সংকট দূর কর, সংঘাত-সংঘর্ষ-দমন-পীড়ন বন্ধ কর
সংবাদ সম্মেলন
৪ জানুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, সকাল ১১:৩০ মি., মৈত্রী মিলনায়তন, ঢাকা
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
শুভেচ্ছা জাবেন।
আমাদের আমন্ত্রণে আজকের এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এমন একটা সময় আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি, যখন আমরা দেখছি সরকার গণদাবি ও জনমত উপেক্ষা করে ৭ জানুয়ারি ২০২৪ একতরফা, প্রহসনের ‘ডামি’ নির্বাচন করতে চলেছে। বিগত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বাম জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞরা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যে দাবি করে এসেছিল এবং যে সমস্ত প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল তার সবই্ উপক্ষো করে একটি নজিরবিহীন কলঙ্কজনক নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। আইনি বৈধতার নামে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিসর্জনের এই নির্বাচন দেশে স্থায়ীভাবে এক অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে রাখবে।
অগণতান্ত্রিক নির্বাচন এবং জবাবদিহীহীন পরিবেশ যে অবাধ লুণ্ঠনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে তার নির্দশন দেখছে জনগণ। নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদ সদস্য ও প্রার্থীদের হলফনামার যে সম্পদ বিবরণী সংবাদপত্রে বেরিয়েছে, তা দেশবাসীকে রীতিমত হতবাক করেছে। এটাতো আইনী হিসেবে। প্রশ্ন উঠেছে, এর বাইরে থাকা সম্পদের হিসাব কে রাখবে? প্রশ্ন উঠছে, সংসদ সদস্যরা জনগণের স্বার্থে দায়িত্ব পালন করেন, নাকি ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থ উপার্জনে সংসদ সদস্য পদ ব্যবহার করেন?
এটা আজ দিবালোকের মতো পরিস্কার হয়েছে যে, এদের ঐ অর্থ-সম্পদ, দাপট বহাল রাখতে যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে হবে। এজন্য যেনতেন প্রকারে আবারও ক্ষমতায় যেতে হবে। এর জন্য ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলীয় স্বার্থই প্রধান হয়ে উঠেছে। দেশ, দেশের মানুষ, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যত এদের কাছে গৌণ হয়ে গেছে।
নির্বাচনকে ঘিরে সরকার প্রধানসহ সরকারের মন্ত্রীরা নানা আশংকার কথা বলছেন। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হচ্ছে, ‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও অংশগ্রহণমূলক না হলে দেশ সমগ্র বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে’। ‘রাষ্ট্র নিজেই ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে যাবে’। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট, সংঘাত-সংঘর্ষ আরও তীব্রতর হবে। ধেয়ে আসা অর্থনৈতিক সংকট আরও তীব্র হবে দেশ নতুন ধরনের সংকটে পড়বে।
সরকার এ অবস্থায় রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের পথে না হেটে একতরফা নির্বাচনের পথে হাটলেন। এই নির্বাচন ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচনের ধারায় নতুন ধরনের প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিরোধী দলহীন নির্বাচনে নিজ দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষ বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যে যার বলি হয়েছে ৫ জন।
আমি, ডামি, স্বতন্ত্র, সরকারের আনুকূল্যের বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা জিততে ও সরকারের পক্ষ থেকে কিছু কিছু প্রার্থীদের বিজয়ী করতে সরকার, প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রকাশ্যে নির্লজ্জ ভূমিকা নির্বাচন সম্পর্কে মানুষের মনে নতুন নতুন কৌতুকের সৃষ্টি করে চলেছে।
নির্বাচনে কে ক্ষমতায় যাবে এটি এখন আর আলোচ্য বিষয় নয়। এক ব্যক্তি, একই জায়গায় থেকে নিজদল, স্বতন্ত্র, ১৪ দলের শরীক দল, মিত্র দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী সবাইকে মনোনয়ন দিচ্ছে। ফলে এখন আলোচ্য বিষয় হলো কাদের করা হবে বিরোধী দল।
এই প্রহসনের একদলীয় ‘আমি আর ডামি’র নির্বাচনকে সামনে রেখে সংঘাত-সংঘর্ষ, দমন-পীড়ন যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তা জনমনে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ৭ জানুয়ারির পরবর্তীতে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট যে গভীর খাদে নিমজ্জিত হবে তা মোকাবিলা করা দুৎসাধ্য হয়ে পড়বে বলে অর্থনীতিবিদসহ বিশেষেজ্ঞরা মত দিচ্ছে। বিদেশি সাম্রাজ্যাদী আধিপত্যবাদী শক্তির অপতৎপরতা আরও বাড়বে। যা দেশকে আরও বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলবে।
এ অবস্থার উত্তরণে এই সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে,
(১) এখনও সময় আছে ৭ জানুয়ারি ২০২৪ এর একতরফা নির্বাচনী তফসিল বাতিল করুন। সংবিধানেই যে সুযোগ রয়েছে সে অনুযায়ী বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে সকল দলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন করে নতুন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার উদ্যোগ নিন।
৭ জানুয়ারি ২০২৪ এর নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে,
(২) এই প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারের নির্লজ্জ প্রহসনের কলঙ্কের ভাগিদার হওয়া থেকে বিরত থাকুন, জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অবস্থান নেবেন না, সময় থাকতে নিজেদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করুন।
সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে,
(৩) গণাদবি ও জনমত উপেক্ষা করে সরকার একতরফা প্রহসনের যে নির্বাচন ৭ জানুয়ারি ২০২৪ সংগঠিত করতে যাচ্ছে ঐ নির্বাচন নিজে বর্জন করুন, অন্যকেও বর্জন করতে বলুন। এই নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে এগিয়ে আসুন।
এছাড়া এই সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে,
(৪) মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধান আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংরক্ষণ করে। তাই নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী মত দমনের পথ থেকে সরে আসুন। দমন-পীড়ন, সংঘাত বন্ধ করুন। দল-মত-নির্বিশেষে সবার মত প্রকাশ ও সংগঠিত হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে দয়িত্ব পালন করুন।
প্রিয় বন্ধুগণ,
আশা করি, আপনাদের মাধ্যমে আমাদের বক্তব্য সংশ্লিষ্ট সকলে এবং দেশবাসী জানবেন এবং যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করবেন।
আমরা জানি, দেশে চলমান দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি নিজের স্বার্থের বিপরীতে জনগণের স্বার্থের কথা শোনে না। এজন্য সচেতন দেশবাসীকে এগিয়ে এসে নিজের স্বার্থ রক্ষায় কণ্ঠ সোচ্চার করতে হবে। নিজেদের দাবিতে গণআন্দোলন, গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
তাই জনগণের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানাই, সরকার গণদাবি উপেক্ষা করে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন অব্যাহত রাখলে, আসুন আমরা সকলে ঐ নির্বাচন বর্জন করে চলমান দুঃশাসন বিরোধী প্রতিবাদের ধারাকে জনগণের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ হিসেবে সামনে আনি। এই প্রহসনের বিরুদ্ধে নিজেদের নৈতিক অবস্থান এবং রাজনৈতিক সক্রিয়তা প্রদর্শন করি। ‘ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’-এই স্লোগান জাগ্রত রেখে আগামীদিনের গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার সংগ্রামের শপথ নেই।
ধন্যবাদসহ
ইকবাল কবির জাহিদ
সমন্বয়ক
বাম গণতান্ত্রিক জোট
কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ