বামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ করে বাম বিকল্প গড়ার লক্ষ্যের প্রতি আবারও অবিচল আস্থার কথা জানিয়েছেন সিপিবির কাউন্সিলে থাকা প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষকসহ ডেলিগেটরা। রোববার বিকালে কংগ্রেসের তৃতীয় দিনে বিকেলে খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাবের ওপর আলাপ-আলোচনার পর সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম রাজনৈতিক প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আহ্বান জানালে উপস্থিত প্রতিনিধিরা তাদের প্রতিনিধি কার্ড উর্ধ্বে তুলে ধরে প্রস্তাব অনুমোদন করেন।
আজকের দিনের বিভিন্ন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কংগ্রেসের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কমরেড এ্যাড. মেহেরুল ইসলাম, কমরেড সুতপা বেদজ্ঞ, কমরেড লাকী আক্তার। ৪৫ জন প্রতিনিধি তাদের জন্য নির্ধারিত সময়ে রাজনৈতিক প্রস্তাবের উপর আলোচনা করেন।
আলোচনায় তারা বলেন, “রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে যে পচন ও অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে সেই সংকট নিরসন করা যাবে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বুর্জোয়া রাজনীতির বেড়াজাল ভেঙে বামপন্থীদের নেতৃত্বে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি এবং গণশক্তির সচেতন সংগঠিত উত্থান ছাড়া বর্তমান দুঃস্থ অবস্থার মৌলিক ও স্থায়ী পরিবর্তন সম্ভব হবে না। তাছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে সুস্পষ্টভাবে একথাও প্রমাণ করছে যে, সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদী বিশ্বায়নই আজ সকল জাতির ও মানব সমাজের দুর্দশার মূল কারণ এবং সমাজতন্ত্রের পথ ধরেই এই সংকট থেকে মুক্তি সম্ভব। কমিউনিস্ট ও বামপন্থীদেরকে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন সাধনের কঠিন দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সেই লক্ষ্যের পথে এগিয়ে যেতে হবে”।
এ প্রস্তাব অনুমোদনের মাধ্যমে প্রতিনিধিরা সিপিবির আগামী নেতৃত্বকে বাম-বিকল্প গড়ে তুলে শ্রমিক-কৃষকের রাষ্ট্র গঠনে কর্মসূচির গাইড ঠিক করে দেন।
সকালের প্রথম অধিবেশনে কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টের উপর আলোচনা শেষে পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ রিপোর্টের উপর সমাপনী বক্তব্য রাখেন। এরপর হাউজ সর্বসম্মতিক্রমে তা অনুমোদন করেন। কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টের উপর আলোচনায় ৫১ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনায় তারা বলেন, “দেশ আজ এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে। শাসক শ্রেণির অনুসৃত নীতির ফলে জনগণের জীবনের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। একদিকে ব্যাপক সংখ্যক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনের চলছে তীব্র সংকট। অন্যদিকে রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে লুটপাটের মধ্য দিয়ে একটা শ্রেণি সীমাহীন বিত্ত বৈভবের মালিক রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য বা যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শাসক শ্রেণির মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছে। দেশবাসী এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চায়। কিন্তু মানুষ কোন আস্থাভাজন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি খুঁজে পাচ্ছে না। ফলে মানুষ হতাশ। কমিউনিস্ট পার্টিকেই এই বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির সমাবেশ গড়ে তোলার কাজে একটি মূল ও উদ্যোগী দায়িত্ব পালন করতে হবে। মেহনতি মানুষের বিজয় অনিবার্য।”
আজ দলের ঘোষণা-কর্মসূচি সমসাময়িকীকরণ ও গঠনতন্ত্র সংশোধন বিষয়ে কংগ্রেসে আলোচনা হবে। পাশাপাশি, ভেটারেন কমরেডদের সংবর্ধনা দেয়া হবে।
কংগ্রেসের অগ্রগতি নিয়ে প্রতিদিনের মত আগামীকালও বিকেল ৪টায় অধিবেশনস্থলের বাইরের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন হবে। কংগ্রেসের জন্য নির্বাচিত মুখপাত্রদের একজন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন।
নির্ধারিত কার্যপ্রণালী ও সূচি অনুযায়ী আগামী কাল কাউন্সিল অধিবেশনে আগামী চার বছরের নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
সম্মেলনে ৬৮৩ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ২১৭ জন নারী ও ১৭ জন আদিবাসী। কংগ্রেসে যোগদানের জন্য ১০৮ জন পর্যবেক্ষককেও মনোনীত করা হয়েছে। ৯৯ জন ভেটারেন কমরেডকে কংগ্রেসে যোগদানের জন্য বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
Login to comment..